শহীদনূর আহমেদ ::
সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট থেকে ধীরে ধীরে বানের পানি সরে যাচ্ছে। এতে ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষত। এদিকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন বানভাসি মানুষজন। বন্যার পানি সরে যাওয়ায় বন্যার্ত মানুষের মাঝে স্বস্তি দেখা দিলেও তারা এখনও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বন্যা কবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। বিভিন্ন এলাকার পানি নেমে যাওয়ায় মানুষজন বাসাবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন। কোথাও কোথাও জমে থাকা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অপরদিকে যেসব এলাকায় পানি নেমেগেছে সেসব এলাকায় পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
সুনামগঞ্জে ১৬ জুন থেকে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অসংখ্য ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ। শুরুর দিকে সদর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা আক্রান্ত হলেও পরে জেলার সব উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। ছয় দিন ধরে মানুষ দুর্ভোগে আছেন। সুনামগঞ্জ শহরের বেশ কিছু এলাকায় এখনো অনেক মানুষের বসতঘরে পানি আছে। এই মানুষজন আছে বেশি কষ্টে।
অপরদিকে বন্যার পানিতে জেলার ১২ উপজেলার গ্রামীণ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেতু, কার্লভার্ট, পাকাসড়ক, মাটির সড়কসহ ১০০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জেলার কৃষি ও মৎস্য খাতে। বানের পানিতে আউশধান তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে গ্রীষ্মকালীন সবজি। জেলায় ১৫০০ হেক্টর আউশধান ও ৫০০ হেক্টর সবজির ক্ষতি হওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম।
বানের জলে জেলার ১২ উপজেলায় ৮ হাজার পুকুরের মাছ ও পোনা মাছ ভেসেগেছে বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য অধিদপ্তর। এতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যা টাকার অঙ্কের শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামসুল করিম।
শনিবার সরেজমিনে সদর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা বন্যা কবলিত এলাকায় ঘুরে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পরিলক্ষিত হয়। হাওরের মধ্যবর্তী অনেক গ্রামের ঘরবাড়িতে বন্যার রেখে যাওয়া ক্ষত দৃশ্যমান। ক্ষতিগ্রস্ত ঘর আর কর্দমাক্ত পরিবেশে নিরুপায় হয়ে বসবাস করছে অনেক পরিবার। ঘুরে দাঁড়াতে সরকারে সহযোগিতা চেয়েছেন বন্যার ক্ষত বেড়ানো পরিবারগুলো।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের কান্দাগাঁও গ্রামের লিটন মিয়া বলেন, বন্যায় আমার ঘরের অনেক ক্ষতি করেছে। ঢেউ আমার বসতভিটের মাটি ভাসিয়ে নিয়েছে। পানির ¯্রােতে ঘরের বেড়া নষ্ট করেছে। আমি কি করে এইগুলো মেরামত করবো বুঝতে পারছিনা।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা কাইক্কারপার গ্রামের বাসিন্দা নূরবানু বলেন, ঘরে পানি উঠায় গত ৫ দিন ধরে সড়কে আছি। ঘরের অবস্থা শেষ। কি করে আরেকবার ঘর বানাবো। সরকার যদি সহযোগিতার না করে কোথায় যাবো?
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, এখন ত্রাণের কাজ চলমান রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনবার্সনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছে সরকার।