সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সুনামগঞ্জের ২০টি নদী খনন করা হবে বলে জানিয়েছেন পানি স¤পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি। গত শুক্রবার (২১ জুন) সকালে সিলেট নগরীর ক্বীন ব্রিজ এলাকায় সুরমা নদী পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী একথা জানান।
তিনি বলেন, সিলেটবাসীকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী সিলেটের বন্যার খোঁজ-খবর রাখছেন। তিনি আমাকে সব সময় সজাগ থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার আসার আগে এই সিলেটের ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রীকেও তিনি পাঠিয়েছেন। সার্বক্ষণিক তিনি সিলেটের খবর রাখছেন এবং সিলেটবাসীকে বন্যার কবল থেকে রক্ষায় যা যা করণীয় তা করার নির্দেশ প্রদান দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আগামীতে সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যা কবলিত এলাকা কিভাবে সহনীয় পর্যায় নিয়ে আসতে পারি সে লক্ষ্যে আমরা আলোচনা করেছি। ইতোমধ্যে সুরমা নদীর ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ১২ কিলোমিটার খনন কাজ স¤পন্ন হয়েছে। বন্যার পানি কমে গেলে বাকিটুকু খনন করা হবে। এছাড়াও সামগ্রিকভাবে সুরমা-কুশিয়ারা এবং সুনামগেঞ্জর ছোট বড় ২০টি নদী আমরা খনন করব। এ খনন কাজ করলে নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পানির ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এ লক্ষ্যে আমি স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দিয়েছি। উজান থেকে যে পরিমাণ পানি আসে তার ধারণ করার ক্ষমতা তৈরি করার জন্য যে সকল নদী ও খাল খনন করা দরকার সিলেটের প্রধান প্রকৌশলীকে নির্দেশনা দিয়েছি।
সিলেট ও সুনামগঞ্জের ভয়াবহ বন্যার কারণ হিসেবে অনেকে কিশোরগঞ্জের ইটনা-অষ্টগ্রাম-মিঠামইনের অল-ওয়েদার সড়ককে দায়ী করছেন। ওই সড়কের কারণে পানি আটকে গেলে তা নামানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পানিস¤পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। বৃহ¯পতিবার (২০ জুন) দুপুরে সিলেট নগরের টুকের বাজার এলাকার সাদীখাল পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাহিদ ফারুক এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, মিঠামইনে যেটা হয়েছে, সেটার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “নদীর পানি যাতে পাস করে সে ব্যবস্থা আমরা করব। এবারের বর্ষার সময় আমরা দেখব, পানি আটকে যায় কি না? যদি আটকে যায়, সেটার জন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
পানিস¤পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা ভাটি অঞ্চলের বাসিন্দা। ভাটিতে বৃষ্টি না হলেও উজান থেকে পানি নেমে এসে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। আমাদের বন্যার অভিজ্ঞতা আছে। আমাদের পূর্বপুরুষেরাও দেখেছে, আমরাও দেখছি। উজান থেকে আসা পানির সঙ্গে পলিমাটিও আসে। পলিমাটি নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। অতীতের তুলনায় আমাদের ড্রেজিংয়ের সক্ষমতা বেড়েছে। দেশের ৯টি স্থানে ড্রেজিং স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে। নদীভাঙন, পলিমাটি অপসারণে নিয়মিত নদী খনন করা হবে।
পানিস¤পদ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, সুরমা নদীর কিছু জায়গায় চর পড়ে সেগুলোকে ড্রেজিংয়ের আওতায় আনা হবে। নদীতে পলিথিন থাকার ফলে এর আগেও ড্রেজিং কাজ ব্যাহত হয়েছিল। এ জন্য পলিথিন ব্যবহারের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সাদীখাল পরিদর্শনকালে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
পরে পানিস¤পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বন্যা পরিস্থিতি দেখতে সুনামগঞ্জে যান। বেলা একটার দিকে শহরের সার্কিট হাউস মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, সুনামগঞ্জের বন্যা সমস্যা কীভাবে কমানো যায়, বিষয়টি নিয়ে সরকারের নানা পরিকল্পনা আছে। সুরমা নদী খনন জরুরি। এই নদী খনন হলে বন্যা সমস্যা অনেকটা কমবে। বন্যা হলেও ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। সুরমা নদী খননে সরকারের বিশেষ প্রকল্প আছে।
পানিস¤পদ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, সুরমা নদীর নাব্যতা কমে গেছে। এটি খনন করতে হবে। নদী খনন হলে পানির ধারণক্ষমতা বাড়বে। তখন সহজেই বৃষ্টি ও ঢলের পানি ভাটিতে চলে যাবে। নদী উপচে মানুষের বাড়িঘরে ঢুকবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, শহর রক্ষা বাঁধের বিষয়টি অনেকেই বলেন। কিন্তু আমি মনে করি সুরমা নদীর নাব্যতা ফিরে এলে শহরে পানির চাপ এমনিতেই কমে যাবে। তবু বিষয়টি আমরা দেখব।
এ সময় সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য এম এ মান্নান, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাদিক, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য রনজিত সরকার, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী, পুলিশ সুপার এহসান শাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।