স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ শহরে পরিবার ও প্রিয় মানুষদের নিয়ে সময় কাটানোর জন্য সরকারি খরচে দুটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ কর্তৃক মল্লিকপুরে পরিষদের পিছনে সুরমা নদীর তীরে ‘মুজিব ১০০ পার্ক’ ও শহরের উকিলপাড়ায় রিভারভিউ পার্ক। সম্প্রতি এ দুটো পার্কেই বখাটে, নেশাখোর ও উশৃঙ্খল যুবকেরা সংঘবদ্ধভাবে গিয়ে নারীদের উত্ত্যক্ত করছে। গত ৯ জুন বিকেলে মল্লিকপুরের উন্মুক্ত পার্কটিতে হায়েনার মতো তরুণ-তরুণীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল চার বখাটে। তাদেরকে শারীরিক ও মানসিক লাঞ্ছনার পাশাপাশি তাদের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বখাটেদের এই নিপীড়ন ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন নেটিজনেরা। তারা বখাটে চক্রকে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন।
মল্লিকপুরে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় আফতাব, মল্লিকপুরের আমির হোসেনের ছেলে শরিফ উদ্দিন, কৃষ্ণ দাসের ছেলে আকাশ দাস সবসময় ওই পার্কে বসে নারীদের উত্ত্যক্ত করে। তাদের কারণে ওই পার্কে নারীদের উপস্থিতি কমেছে। উত্ত্যক্তের পাশাপাশি এই বখাটে চক্র তরুণ-তরুণীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করে। তাদের দুর্বলতাকে পুঁজি করে ছিনিয়ে নেয় মোবাইল, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। অনেক সময় বসে গল্প করার দৃশ্য লুকিয়ে ভিডিও করে তারা সংঘবদ্ধভাবে গিয়ে নাজেহাল করে। সাংবাদিক পরিচয় দিয়েও হাতিয়ে নেয় টাকা-পয়সা। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে এই চক্র এই পার্কটিতে অপকর্ম করে চলছে। তবে গত সোমবারের নিপীড়নের ঘটনাটি নেটিজেনদের মনে দাগ কেটেছে। তারা এ ঘটনায় ওই বখাটে চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। তাদের নাম পরিচয় উন্মোচিত হওয়ার পরও তাদেরকে গ্রেপ্তার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
সংস্কৃতিকর্মীরা জানান, এই দুটো পার্কে ছাত্রছাত্রী, সংস্কৃতিকর্মীরা সপরিবারে সবান্ধবে বেড়াতে যান। তারা উন্মুক্ত পার্কের বেঞ্চে বসে সুন্দর সময় কাটান। অনেক ছাত্রছাত্রী এখানে বসে ক্লাসের জটিল বিষয়ও আলোচনা করেন। ভালো পরিবেশে চিন্তা-চেতনা শেয়ার করেন। তাই বখাটে চক্র ছাত্রছাত্রীদের টার্গেট করেই নাজেহাল করছে।
এই বখাটেরা ছাড়াও উকিলপাড়ায় রিভারভিউয়েও বখাটে ও নেশাখোররা প্রায়ই নারীদের উত্ত্যক্ত করে। তবে এখানে বেশি লোক সমাগম থাকায় তারা এতটা বেপরোয়া হয়ে ওঠতে পারেনা।
সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ নেতা জায়েদ আহমদ বলেন, ছবি দেখে মনে হচ্ছে এরা নেশাখোর। দ্রুত এদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
সাংস্কৃতিক সংগঠক অনিসিমাস চৌধুরী বলেন, ‘সাংবাদিক নামধারী এই সন্ত্রাসীরা কিভাবে এমন কাজ করতে পারলো। আমি ভীত, সন্ত্রস্ত। এদের মতো আগাছা পরগাছার সংখ্যা বাড়ছেই। সুনামগঞ্জকে সুস্থ রাখতে এই আগাছাদের দমন করতে হবে। নাহলে সমাজের সাংস্কৃতিক মান আরো তলানিতে যাবে।
কামনা দাস নামের এক নারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, সদর উপজেলা পরিষদের পার্ক ও রিভারভিউ পার্ক খুবই সুন্দর। কিন্তু এখন যেতে ভয় করে। দুটো জায়গাই অনিরাপদ।
সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসি খালেদ চৌধুরী বলেন, উপজেলা পরিষদের পার্কে যারা যুবক-যুবতীকে নিপীড়ন করেছে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।