শহীদনূর আহমেদ ::
‘আনারসের গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের হাসাউড়া। গ্রামের টিলায় টিলায় এখন রসালো ফল আনারসের মৌ মৌ গন্ধ। ভারত সীমান্তঘেঁষা এ গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে ছোট-বড় টিলায় লাগানো আনারসের সারি। হাসাউড়া গ্রামের অন্তত ১০০ টিলায় আনারস চাষ হয়ে থাকে।
জানাযায়, অধিক মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় হাসাউড়ার আনারসের খ্যাতি রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলাজুড়ে। মে মাসের শেষ থেকে জুলাইয়ের শেষ ৬০-৭০ দিন থাকে আনারসের হারভেস্ট সময়। বর্তমানে আনারস বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পরিপক্ক আনারস সংগ্রহ করছেন তারা। এরপর সেই আনারস বাগান থেকে সরাসরি চলে আসে সুনামগঞ্জের বাজারে।
সারা জেলার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে হাসাউড়ার আনারস। অনুকূল আবহাওয়ায় এবার আনারসের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষীরা। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আনারসের দাম ভালো পাওয়ায় তারা লাভের মুখ দেখছেন। আনারসের ভালো ফলন ও সন্তোষজনক দামে চাষীরা খুশি।
ষাটোর্ধ্ব বয়সী আনারস চাষী মোহাম্মদ আলী পাহাড়ি টিলা বর্গা নিয়ে আনারস চাষ করছেন দীর্ঘ একযুগ ধরে। মোহাম্মদ আলীর আনারস বাগানে পরিপক্ক আনারসের সারি দেখে চোখ জোড়াবে যে কারো। গেল সপ্তাহ থেকে ধীরে ধীরে পাকা আনারস কেটে বিক্রি করছেন আলী। পাইকাররা বাগানে এসে আনারস কিনে নিচ্ছেন। পাইকারিতে প্রতি পিস আনারস আকার ভেদে ৩০-৫০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
আনারসের এমন দামে খুশি মোহাম্মদ আলী ও তার পরিবার। উৎপাদন ব্যয় মিটিয়ে সন্তোষজনক লাভ আশা করছেন তিনি। গ্রীষ্মকালীন ফল আনারসের এমন ফলনে মোহাম্মদ আলীর মতো খুশি হাসাউড়া গ্রামের অন্যান্য চাষীরা। তবে টিলার সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ না থাকায় বাজারজাত করতে সমস্যা পোহাতে হচ্ছে চাষীদের। যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হলে আনারসের চাষ আরও লাভজনক হতো বলে জানান তারা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, চলতি বছর সদর উপজেলার প্রায় ৫৫০ কেয়ার জায়গায় আনারসের আবাদ হয়েছে। যেখান থেকে চাষীরা সাড়ে ৬ কোটি টাকার আনারস বিক্রি করতে পারবেন। বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে এসে যার মূল্য অন্তত ১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, সদর উপজেলার হাসাউড়া গ্রামের আনারসের বাজার রয়েছে। অত্যন্ত সুমিষ্ট এই ফল জেলায় যেমন চাহিদা রয়েছে, তেমনি জেলার বাহিরেও এই রসালো ফলের চাহিদা রয়েছে। এবার আনারসের ভালো ফলন হয়েছে। এ বছর বাম্পার ফলন হওয়ায় ও বাজারে ভালো দাম থাকায় চাষীরা খুশি। সিজনাল ফল হলেও এর অর্থনৈতিক বাজার মূল্য রয়েছে।
এদিকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানাগেছে, হাসাউড়া গ্রামে টিলার সাথে সংযোগ সড়ক নির্মাণে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন বরাদ্দ দিয়ে সড়ক নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে আনারস বাগান ঘিরে উন্নয়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।