শহীদনূর আহমেদ ::
সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ‘দিরাই রাস্তা’ মোড়। এই মোড়টি কয়েকটি উপজেলার সংযোগস্থল। তাছাড়া এখানে মেডিকেল কলেজ স্থাপন হওয়ায় এর গুরুত্ব আগের চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে। এদিকে এই পয়েন্টকে কেন্দ্র করে সড়ক পার্শ্ববর্তী সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এগুলো উচ্ছেদ করলেও তা ফের দখল হয়ে যায় কয়েকদিনের মধ্যেই।
শুধু দিরাই রাস্তা মোড় নয়, সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে এমন অনেক অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। আর এগুলো উচ্ছেদ করলেও কয়েকদিনের মধ্যেই তা আবার দখল হয়ে যাচ্ছে। এভাবেই চলছে উচ্ছেদ-দখল খেলা।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানিয়েছে, সুনামঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন মোড়, বাজার ও বাসস্টপেস এলাকার দুই পাশে সহ¯্রাধিক অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। যা সম্পূর্ণ সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গায়। সহ¯্রাধিক অবৈধ স্থাপনার মধ্যে গত ৭ ও ৮ মে অভিযান চালিয়ে ৪৪০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তবে উচ্ছেদ অভিযানের কিছুদিন পার হতেনা হতেই আবারও একই স্থানগুলো দখল করে করে নিয়েছে অবৈধ দখলদাররা।
স্থানীয়রা জানান, উচ্ছেদ অভিযানের কয়েকদিনের মাথায় দিরাই রাস্তা এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। একই অবস্থা বিভিন্ন পয়েন্টে। এর নেপথ্যে রয়েছে প্রভাবশালী চক্র। এরা সরকারি জায়গার ‘পজিশন’ ভাড়া দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। অপরদিকে, জায়গা-জমির কোনো কাগজপত্র না থাকলেও অবৈধভাবে গড়ে তোলা ওইসব দোকানপাটে কৌশলে নেয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। দিনের পর দিন চলে সড়কের আশপাশ এলাকা দখল করে ব্যবসা। সড়ক ও জনপথ বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানে কোনো কার্যকর ফল পাওয়া যায় না। একদিকে উচ্ছেদ আর অন্যদিকে দখল চলতেই থাকে।
দিরাই-মদনপুর এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, কবে উচ্ছেদ অভিযান হবে তা আমরা আগেই জানতে পারি। এ জন্য প্রস্তুতও থাকি। অভিযান শেষ হলেও কয়েকদিন পর আবারও দোকান তৈরি করি। এভাবেই চলতে হচ্ছে আমাদের।
মোশাহিদ আলী নামের এক পথচারী বলেন, প্রতিবছরই দেখি সড়কের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা দোকানপাট ভাঙা হয়। কিন্তু দুইদিন যেতে না যেতে আবারও এসব স্থান দখল হয়ে যায়। এটা চোর-পুলিশ খেলার মতো। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় সরকারি অর্থ ব্যয় হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
নিরাপদ সড়ক চাই, সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মহিম তালুকদার বলেন, আমরা মনে করি সড়ক নিরাপদ রাখতে সড়ক থেকে অন্তত ১৫-২০ ফুট দূরত্বে স্থাপনা হওয়া দরকার। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা হলেও তদারকির অভাবে তা আবারও দখল হয়ে যায়। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কার্যকর পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, সুনামঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন মোড়, বাজার ও বাসস্টপেস এলাকার দুই পাশে সহ¯্রাধিক অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। যা সম্পূর্ণ সওজের জায়গায়। সড়ক পথ নিরাপদ করতে নিয়মিতভাবেই দুইপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়ে থাকে। গত ৭ ও ৮ মে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদ্যোগে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ৪৪০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার পূর্বে সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাইকিং করে দোকানপাট অপসারণ করতে নোটিশ করা হয়। অনেক ব্যবসায়ী নিজ দায়িত্বে তাদের স্থাপনা উচ্ছেদ করেছেন।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, সড়কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এটি আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার আগে মাইকিং করে অবহিত করা হয়। যারা নিজ দায়িত্বে উচ্ছেদ করেনা তাদের স্থাপনা আমরা উচ্ছেদ করে থাকি। অভিযানের কিছুদিন পরও আবারও দখল পাঁয়তারা করা হয়। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করি। সবসময় সড়কের খবর রাখা সম্ভব না। তবে পুলিশ যদি চায় তাহলে দখলদারদের বিরুদ্ধে স্থায়ী পদক্ষেপ নিতে পারবে।