স্টাফ রিপোর্টার ::
“চোখের সামনেই তিলে তিলে সাজানো মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু নদীতে বিলীন হয়ে গেল; কিছুই করতে পারলাম না” – বলে আক্ষেপ করে ছোট মেয়েকে আঁকড়ে ধরে সর্বনাশা রূপসা নদীর দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন পূর্ণলক্ষ্মী বর্মণ। গেল শুক্রবার ভোররাতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরের বাঁধ ভেঙে ফতেপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের ৩০টির বেশী ঘর-বাড়ি, টিউবওয়েল, ধান, গাছ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তার মধ্যে পূর্ণলক্ষ্মী বর্মণেরও ঘর ছিল।
তিনি বলেন, আমিসহ আমার মত অনেকেই মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকু হারিয়েছেন। কাঁদা ছাড়া কিছু করার নেই আমাদের এখন। তিনি আরও বলেন, সাজানো সুখের সংসারে আমার ৫ মেয়ে ও দিনমজুর স্বামীকে নিয়ে ভালভাবেই দিন পার করছিলাম। কিন্তু রূপসা নদীর গ্রামে আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। রূপসা নদীর গার্ডওয়াল ধসে যাওয়ায় নিমেষেই আমার সাজানো ঘরটা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এখন আমি ৫ মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবো?
শুধু পূর্ণলক্ষ্মী বর্মণই নয়, পাহাড়ি ঢলের তীব্র ¯্রােতে হাওরের বাঁধ ভেঙে এমন পরিস্থিতিতে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন ওই বাসিন্দারা। ভাঙন অব্যাহত থাকলে গ্রামের আরও অর্ধশতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসী।
সত্যেন্দ্র বর্মণ, রমেন্দ্র বর্মণ, মৃত্যুঞ্জয় বর্মণসহ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী জানান, প্রতিবছর বর্ষাকাল এলেই ভাঙনের কবলে পড়ে নদীর তীরবর্তী বাড়িঘর। কিন্তু অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পানি বেশি বেড়েছে। ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক বসতঘর, রান্নাঘর, শৌচাগার ও নলকূপ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন দেখা দেওয়ায় গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। অনেকে ভাঙন আতঙ্কে পরিবার নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। আবার অনেকেই তাদের আশ্রয়ের জায়গাটুকু রক্ষায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ফতেপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রনজিত চৌধুরী রাজন জানান, আমি নিজে ঐ গ্রামে গিয়ে আমার পক্ষ থেকে লক্ষাধিক টাকার বাঁশ ও বালি দিয়েছি প্রতিরক্ষার জন্য। এই গ্রামটি রক্ষা করতে হলে সরকারিভাবে বড় আকারে বরাদ্দের খুবই প্রয়োজন। না হলে এই গ্রামটি রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান জানান, পাহাড়ি ঢলে ভাঙন এলাকা আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। ইতিমধ্যে ২শত জিও ব্যাগ ও ৫০টি বাঁশ দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ঘর মেরামতে টিন, নগদ টাকাসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।