দেশে বিবাহিত নারী নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। গত ৩ অক্টোবর প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, দেশে বর্তমানে বিবাহিত নারীদের শতকরা ৮০ জনই কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হন। আর সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন স্বামীর হাতে। কিন্তু পারিবারিক সম্মান থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় চিন্তা করে অধিকাংশ নারী নীরবে এ নির্যাতন সহ্য করেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এর জরিপ মতে, বর্তমানে বিবাহিত নারীদের ৮০দশমিক ২শতাংশ কোনো না কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার। ২০১১ সালে এ সংখ্যা ছিল ৮৭ দশমিক ১শতাংশ। অর্থাৎ চার বছরে নির্যাতনের হার কমেছে ৭শতাংশ। তবে নির্যাতনের হার এখনো ভয়াবহ উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুধীজন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, নারী নির্যাতনের হার ধীরে ধীরে কমছে। তবে এতে খুশি হওয়ার কারণ নেই। এখন পর্যন্ত নারী নির্যাতন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাল্যবিবাহ নারী নির্যাতনের অন্যতম মাধ্যম।
৪১শতাংশের বেশি নারী জানিয়েছেন, জীবনভর স্বামীর শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারা। ২৮ শতাংশের বেশি নারীকে আঘাতের কারণে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন ৪শতাংশের বেশি নারী।
এসব নির্যাতনের শিকার বেশিরভাগ নারী কাউকেই কিছু জানান না। পুলিশ, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ধর্মীয় বা স্থানীয় নেতার কাছে নির্যাতনের কথা জানানোর সংখ্যা খুবই কম। নির্যাতিত নারী পারিবারিক সম্মান, নির্যাতনের ভয়, সামাজিক লজ্জাবোধসহ বিভিন্ন কারণে তারা নির্যাতনের বিষয়টি প্রকাশ করেন না।
সমাজে এখনো নারীকে অনেকটা দুর্বল শ্রেণির ভাবা হয়। পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত, অংশগ্রহণে ততোটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তবে পূর্বের তুলনায় নারীর মতামতের মূল্যায়ন অনেকাংশেই বেড়েছে। তাই নারীদের লেখাপড়া করে শিক্ষিত হওয়ার বিকল্প নেই। নারী যদি নিজে শিক্ষায়, কর্মে অগ্রসর হতে পারে তাহলে নারী নির্যাতনের ভয়াবহতা কমে আসবে। পুরুষ শাসিত সমাজে ধীরে ধীরে নারীর প্রতি সহিংসতা কমে আসবে।
আমরা মনে করি, শুধু আইন দিয়ে নারী নির্যাতন কমিয়ে আনা যাবে না। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে যথাযথ আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধও জাগ্রত করতে হবে।