প্রবীণদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করা ও বার্ধক্যের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর ১ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব প্রবীণ দিবস। জাতিসংঘ ১৯৯০ সালে ১ অক্টোবর দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ১৯৯১ সাল থেকে বিশ্বের সব দেশে দিবসটি নিয়মিতভাবে পালিত হয়ে আসছে।
মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় সারা বিশ্বে প্রবীণদের সংখ্যাও বাড়ছে। এ কারণে তাদের সামাজিক অধিকার, মর্যাদা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতি বছর বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানসহ কয়েকটি সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এবার প্রবীণ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ‘টেক এ স্ট্যান্ড অ্যাগিনিস্ট এইজইজম বা বয়স বৈষম্য দূরীকরণ’।
বিষেজ্ঞরা মনে করেন, অধিকাংশ বৃদ্ধ মানুষই সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে খুবই অবহেলিত। ফলে তাদের মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তাদের চলার পথকে আরও কঠিন করে তুলছে। তাই প্রবীণদের কল্যাণে সরকারের পাশাপাশি সামাজিকভাবেও সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রবীণ বিষয়ে গবেষণা, জরিপ, তথ্যভান্ডার গড়ে তুলতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। জাতীয় প্রবীণ ফাউন্ডেশন আইন চূড়ান্তকরণ, বাস্তবায়ণ ও প্রবীণ বীমা চালু করা এখন সময়ের দাবি।
বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘের এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ প্রবীণ বা আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ প্রবীণদের সংখ্যা হবে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ। ২০৫০ সালে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি এবং ২০৬১ সালে সাড়ে ৫ কোটি। ২০৫০ সালের দিকে এ দেশের ২০ শতাংশ নাগরিক হবেন প্রবীণ এবং শিশু জনসংখ্যা হবে ১৯ শতাংশ।
২০১১ সালের আদমশুমারি হিসাবে জানা গেছে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৭.৪ শতাংশ প্রবীণ। ২০২০ সালে এই সংখ্যা ৮ শতাংশ, ২০৩৫ সালের মধ্যে তা বেড়ে গিয়ে ১১ দশমিক ৯ শতাংশ হবে এবং ২০৫০ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ১৭ শতাংশে উন্নীত হবে। আর ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের নাগাদ মানুষের গড় আয়ু হবে ৭৭ বছর। বিশ্বে ৬০ বছরের বেশি মানুষের সংখ্যা হবে শতকরা ২০ ভাগ। সূত্রে প্রকাশ, বিশ্বে সর্বত্র অতি প্রবীণদের (৮০ বছর+) সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত হারে। তাই এখন থেকেই প্রবীণদের ভবিষ্যৎ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সক্ষমতার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। প্রবীণদের প্রতি কোনো অযতœ-অবহেলা নয়, মমত্ববোধ ও ভালোবাসা দিয়ে তাদের পাশে থাকতে হবে।