স্টাফ রিপোর্টার ::
চৈত্রের শুরুতেই প্রকৃতির চোখ রাঙানিতে কৃষকরা রীতিমতো উদ্বিগ্ন। এরমধ্যে ৩১ মার্চ রাতে ঝড়, শিলাবৃষ্টি হওয়ায় আতঙ্ক আরও বেড়েছে। কৃষকদের ভয় টানা কয়েক বছর বোরোধান নিরাপদে ঘরে তুলতে পারলেও ২০২৪-এ কেনো জানি প্রকৃতি চোখ রাঙাচ্ছে বারবার। এবছর ফলনও ভালো হয়েছে আর আতঙ্ক তাদের এখানেই। হাওরে ভালো ফলন হলেই চোখ রাঙায় প্রকৃতি। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডও বাঁধ নিয়ে করেছে খামখেয়ালি। এখনও শাল্লায় পুরনো প্রকল্পের মধ্যেই নতুন প্রকল্প দিচ্ছে। এসব প্রকল্পে মাত্র মাটির কাজ শুরু করা হয়েছে। তাও আবার নীতিমালার তোয়াক্কা না করে দাড়াইন নদীরপাড় কেটে মাটি নেয়া হচ্ছে বাঁধে। ফলে এবছর একমাত্র উৎপাদিত বোরোধান ঘরে তুলতে বাঁধের উপর ভরসা রাখতে পারছেন না কৃষকরা।
অন্যদিকে, হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নিয়ে একটি মহল নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পিআইসির প্রকল্পে জমি নেই এমন সহজ সরল কৃষকদের সদস্য রেখে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এমন অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের। যা অন্যান্য বছরও এমন ঘটনা ঘটেছে। এমন অনিয়মের তথ্য পেয়ে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের পক্ষ থেকে তৎকালীন সময়ের ইউএনওকে প্রধান আসামি করে আরও ৪জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে সংগঠনটি। ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরেও এই ভুল সংশোধনের কোনো পদক্ষেপই নেয়নি উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি।
শাল্লা উপজেলার ভান্ডাবিল হাওর উপপ্রকল্পের আওতায় ২৮নং পিআইসির সদস্য সুরেশ দাসকে দেখা যায় আনন্দপুর বাজারে ক্ষুদ্র পোল্ট্রি মুরগীর ব্যবসা করেন তিনি। আরেক সদস্য মানবেন্দ্র দাসের বিষয়ে জানা যায় তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। পাশাপাশি পশু চিকিৎসক হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে তার। এবিষয়ে জানতে চাইলে সুরেশ দাস বলেন, আমাকে পিআইসির সদস্য রাখছে আমি জানিই না! আমারে জানাইছেও না! জমি আছিল একটু, এখন নাই।
আরেক সদস্য মানবেন্দ্র দাসেরও জমি নাই বলে জানান তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক জানালেন, ওই প্রকল্পের খোদ সভাপতিরও জমি নাই।
২৮নং প্রকল্পের সভাপতি শুধু নামেই আছে। এর নেপথ্যে রয়েছে এক সংবাদকর্মী। ওই সংবাদকর্মীর তার আপন ছোট ভাইকে কাজে লাগিয়ে প্রকল্পের ভিতরেই আরেকটি ৫ লাখ টাকার প্রকল্প বাগিয়ে নিয়েছেন। ওই পিআইসির পূর্বে ছিল ১০৫৮মিটারে বরাদ্দ ১৯ লাখেরও বেশি টাকা।
২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় রিভাইজড করা প্রকল্পটির কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দাঁড়াইন নদীরপাড় কেটে মাটি কাটার কাজ চলছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এখনও ওই প্রকল্পে বাকি রয়েছে স্লোভ, কমপেকশন ও দুর্বাঘাস লাগানোর কাজ। ওই প্রকল্পের সভাপতির সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে তার মতামত নেয়া যায়নি।
কৃষক মৃদুল চন্দ্র দাস বলেন, এখন এখানে মাটি কাটবে? মাটির কাজ তো অনেক আগেই শেষ হওয়ার কথা। এমনিতেই আকাশের খারাপ অবস্থায় আমরা আতঙ্কিত। যেভাবে ঘনঘন বৃষ্টি হচ্ছে তাতে যেকোনো সময় পাহাড়ি ঢল নামতে পারে। নদীতে এখনই কিছুটা জোয়ার এসেছে। টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হলে এসব দুর্বল পিআইসির বাঁধ হাওরের ফসলরক্ষা করতে পারবে না। এরমধ্যে সিলেট সুনামগঞ্জে শিলাবৃষ্টি হওয়ায় আমরা এখন এক অজানা আতঙ্কে আছি।
এ বিষয়ে হাওর বাঁচাও আন্দোলন উপজেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাস বলেন, এই প্রকল্পটির মধ্যখানে এখন আরেকটি প্রকল্প দেয়ার কি কারণ তা আমার বোধগম্য নয়। যদি প্রয়োজন মনে করত কর্তৃপক্ষ তাহলে এটি আগেই দিতে পারতেন। এখন দেয়া মানে প্রকল্পের বরাদ্দ বাড়ানো আরকি। জমি নেই এমন সদস্যদের পূর্বেই যাচাই বাছাই করা প্রয়োজন ছিল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী রিপন আলী বলেন, যে পিআইসিতে সমস্যা থাকে সেই পিআইসিতে রিভাইজড করে দেয়া হয়। ওই প্রকল্পে ৫লাখ সামথিং টাকা আরকি। এরপূর্বে কেনো বাঁধ দেননি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন এর আগে এই ভাঙনটা আমাদের কাছে নিরাপদ মনে হইছে। সদস্যদের জমির থাকা না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, সেক্রেটারি ঠিক আছে। এখন শেষ পর্যায় একটু পজিটিভলি দেখার অনুরোধ করেন তিনি।
ইউএনও মনজুর আহসান বলেন, ২৮নং পিআইসির একটু অংশে ভাঙন দেখা দিছে। নদীরপাড়ে ভাঙন দিয়েছে। এখন না হয় ২দিন পরেও হয়তো আমাদের এটি দিতেই হত বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে উপজেলার ৬টি হাওরে ৮৪.২৮৩ কিলোমিটার বাঁধ সংস্থার কাজে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় ২৩ কোটি টাকা। বিপরীতে পিআইসি কমিটি গঠন করা হয়েছে ১৩১টি। ৬টি হাওরে ক্লোজার রয়েছে ৩০টি।