আজকের শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যৎ, রাষ্ট্রের কর্ণধার। তাই শিশুর সুরক্ষা ও পরিচর্যায় রাষ্ট্রের যথাযথ ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই। শিশুদের সঠিক পরিচর্যা না করতে পারলে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যার প্রভাবে ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় সব স্থানেই এর কুফল ভোগ করতে হবে।
তাই শিশুর সুরক্ষায় সরকারের পাশাপাশি সামাজিকভাবেও সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। শিশু নির্যাতন, পাচার প্রতিরোধ করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করা জরুরি। ইদানিং দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। পত্রিকার পাতা খুললেই শিশু নির্যাতনের রোমহর্ষক ঘটনা চোখে পড়ে। আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
ইদানিং ভিনদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন ও আকাশ সংস্কৃতির কারণেও শিশুরা সমাজের নানা নেতিবাচক বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠছে। আকাশ সংস্কৃতির অপব্যবহার রোধে সরকারের পাশাপাশি পরিবারকেও সচেতন হতে হবে। এ জন্য শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে খেলাধূলাসহ সুষ্ঠু বিনোদনের বিকল্প নেই।
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে শিশুর স্বার্থ রক্ষায় ৫৪টি ধারার মধ্যে ধারা ৩২-এর ১-এ বলা হয়েছে, ‘শরীক রাষ্ট্রসমূহ অর্থনৈতিক শোষণ থেকে শিশুর অধিকারকে রক্ষা করবে। শিশুর শিক্ষায় ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী কিংবা তার স্বাস্থ্য অথবা শারীরিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক বা সামাজিক বিকাশের জন্য ক্ষতিকর কাজ করানো না হয়, সে ব্যবস্থা নেবে।’
বাংলাদেশ সরকার সনদটিতে স্বাক্ষর করার পর শিশু অধিকার রক্ষায় প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে জাতীয় শিশু নীতিমালা ২০১১, শিশু আইন ২০১৩, জাতীয় শিক্ষা নীতিমালা ২০১০ এবং জাতীয় শিশু শ্রম নিরোধ নীতিমালা ২০১০ প্রণয়ন উল্লেখযোগ্য। এসবের মধ্য দিয়ে দেশে শিশু শিক্ষার হার বেড়েছে, শিশু মৃত্যুর হার কমেছে, স্কুলে শারীরিক শাস্তি অবৈধ করা হয়েছে এবং শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকা প্রণীত হয়েছে। তবে শিশুর জীবনযাপনকে সহজ ও নিরাপদ করতে শিশু সুরক্ষা আইন জরুরি। যা শিশুর শুধু অধিকার রক্ষাই করবে না, তার জীবনবোধ তৈরি করবে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের।
আজকের শিশুরাই যেহেতু আগামীদিনে রাষ্ট্রের কর্ণধার তাই তাদেরকে সুরক্ষিত রাখা আমাদের দায়িত্ব। শিশুদেরকে অরক্ষিত ও অনিরাপদ রেখে উন্নত ও সুখী রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। সুন্দর আগামীর লক্ষ্যে শিশুর নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় সরকারের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। শিশুর বেড়ে উঠা সহজ ও নিরাপদ হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।