জামালগঞ্জ প্রতিনিধি ::
জামালগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে তোতা মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে হাত-পা ও মুখ বেঁধে বেধড়ক মারধর করে বাড়ির পাশের জমিতে ফেলে রাখার অভিযোগ উঠেছে মমিন মিয়া ও তার আপন ভাতিজা জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য সেলিম মিয়ার বিরুদ্ধে। সোমবার দিবাগত রাত ১২ টার দিকে উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের কামিনীপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী তোতা মিয়া মনফর আলীর ছেলে।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী তোতা মিয়া জানান, দীর্ঘদিন যাবত তোতা মিয়ার বসতবাড়ির ভিটা নিয়ে ঝামেলা চলছে একই গ্রামের মমিন মিয়ার সাথে। এরই জের ধরে সোমবার রাত ১২ টার দিকে তোতা মিয়ার বসতবাড়িতে এসে একটু বাইরে বের হতে বলেন অভিযুক্ত মমিন মিয়ার ভাতিজা ২নং ওয়ার্ড সদস্য সেলিম মিয়া। ইউপি মেম্বারের ডাক শুনে তোতা মিয়া বাইরে বের হলে সেখানে মমিন মিয়াসহ তার একাধিক ভাতিজারা উপস্থিত হয়ে গালিগালাজ ও মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে গামছা দিয়ে মুখ ও রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে বাড়ির পাশের জমিতে ফেলে রেখে তোতা মিয়ার বসতঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। আগুনের টের পেয়ে তোতার মিয়ার স্ত্রী ও সন্তানেরা চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। এসময় মুহূর্তেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় তোতা মিয়ার টিনের বসত ঘরটি।
এ ব্যাপারে প্রতিবেশী আসাদ উল্লাহ বলেন, রাত প্রায় ১টার দিকে আমার আম্মা ও আব্বার কাছে শুনতে পাই তোতা মিয়ার বাড়িতে আগুন লাগছে। সাথে সাথে আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পাই তোতা মিয়ার স্ত্রী আগুন আগুন করে চিৎকার ও চেঁচামেচি করছে। আমরা আগুন নেভানোর মুহূর্তে তোতা মিয়ার স্ত্রী দেখতে পান বাড়ির পাশের ক্ষেতে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে তোতা মিয়া। পরে আমি নিজের হাতে তার মুখের বাঁধটি খুলে দেই।
প্রতিবেশী আ. রশিদ বলেন, গভীর রাতে চিৎকার শুনে বের হয়ে দেখি তোতা মিয়ার ঘরে আগুন লাগছে। আগুন নেভাতে গিয়ে দেখি আরেক প্রতিবেশী তোতা মিয়ার হাত ও পায়ের রশি খুলে দিচ্ছেন। আমাকে দেখে আমার হাতে রশিগুলো দিয়েছে এবং মাথা দিয়ে রক্ত ঝরার কারণে গামছা দিয়ে মাথাটা বেঁধে দিচ্ছে। এসময় আমি তোতা মিয়াকে এই অবস্থা কে করেছে জিজ্ঞেস করলে সে বলে মমিন মিয়া ও তার চাচাতো ভাই সেলিম মেম্বারসহ তাদের সকল ছেলে ও ভাতিজারা এই অবস্থা করে নদীর পাড় দিয়ে তাদের বাড়িতে চলে গেছে।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী তোতা মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি মোবাইলফোনে জানান, আমি চিকিৎসার জন্য এখন সিলেটে আছি। আমার বসতবাড়ির জায়গা নিয়ে মমিন মিয়ার সাথে গত কয়েকমাস যাবত ঝামেলা চলছে। এই গ্রামে আমার কোনো আত্মীয়০স্বজন না থাকাতে আমি অসহায় হয়ে সেলিম মেম্বারের কাছে বিচার প্রার্থী হয়ে দীর্ঘ ৩ মাস যাবত ঘুরছি। সোমবার দিনগত রাত ১২ টার দিকে সেলিম মেম্বার আমাকে ডেকে ঘরের বাইরে আসতে বলে। আমি বাইরে গেলে সেখানে উপস্থিত থাকা তার চাচা মমিন মিয়া ও তার ছেলে এবং ভাতিজারা উপস্থিত হয়ে আমাকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে আমার মাথায় আঘাত করে, মুখে গামছা ও রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে ক্ষেতে ফেলে গিয়ে আমার বসতঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে মমিন মিয়ার মোবাইলফোনে কল করলে তার ছেলে জানান, তার বাবা এই মুহূর্তে ঘরে নেই। তবে তোতা মিয়ার সাথে বসতভিটা নিয়ে ঝামেলা আছে। পুলিশ বলেছে কোর্ট থেকে তোতা মিয়ার ঘর তোলার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আনার আগ পর্যন্ত তোতা মিয়ার সাথে যেন ঝামেলা না করি। তাই আমরা ঝামেলা করিনি। তার বাবা ও তাদের উপর আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা।
ইউপি সদস্য সেলিম মিয়াকে ফোন করলে তিনি জানান, আমি বা আমার চাচা মমিন মিয়া কোনো মারামারি করিনি। তোতা মিয়ার বাড়িতে আগুনও লাগাইনি। তবে তোতা মিয়ার সাথে বসতভিটা নিয়ে একটা ঝামেলা আছে আমার চাচা মমিন মিয়ার। আপনারা গ্রামে গিয়ে দেখুন আমার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলবে না।
জামালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলীপ কুমার দাস বলেন, এ ব্যাপারে এখনো কোনো অভিযোগ আমার হাতে এসে পোঁছেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।