সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
নিরাপদ বাসস্থানের আশায় বাধ্য হয়ে নিজ ভূমি ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমায় শরণার্থীরা। আশা করে, নিশ্চিত হবে জীবনের নিরাপত্তা ও অধিকার। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ভয়ঙ্কর সব পথ পাড়ি দিতে গিয়ে নিহত হয় অনেকেই। যে সংখ্যা কয়েক বছরে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বলছে, শরণার্থীদের জন্য ভয়ঙ্কর বছর ছিল ২০২৩। ওই বছর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ৮ হাজার ৫৬৫ শরণার্থী নিহত হয়েছে। যা ২০২২ সালের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি ও এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। গত বছর নিহত হওয়ায় ৮ হাজার ৫৬৫ শরণার্থীর অর্ধেকের বেশি ভূমধ্যসাগরে সমুদ্রযাত্রায় ডুবে মারা গেছেন।
২০১৬ সালের পর অভিবাসী মৃত্যুর দ্বিতীয়-সর্বোচ্চ সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছিল ২০২২ সালে। ওই বছর নিহত হয় ৭ হাজার ১৪১ জন। এর আগে ২০২০ সালে শরণার্থী মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ০৩২।
হতভাগ্য এসব উদ্বাস্তুরা সিরিয়া, আফগানিস্তান ও ইরাকের মতো সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল থেকে পালিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোয় নিরাপত্তা খোঁজার জন্য পাড়ি দিতে চেয়েছিল।
উদ্বাস্তু ও শরণার্থীদের মৃত্যুর হার বাড়ার কারণ হিসেবে উন্নত বিশ্বের অমানবিক আচরণকেই দায়ী করেন অনেকে। কারণ নেদারল্যান্ডস বেশকিছু দেশ শরণার্থীদের বিতাড়িত করার পাশাপাশি প্রবেশেও কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিছু দেশ আবার শরণার্থী প্রবেশের জন্য আইনি মাধ্যমগুলোকে সংকুচিত করে এনেছে। নিজ দেশের অনিরাপদ আবাস থেকে মুক্তি পেতে তাই বাধ্য হয়ে অভিবাসন প্রত্যাশীদের বেছে নিতে হচ্ছে আরো বেশি অনিরাপদ রাস্তা।
যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থীদের জন্য কোনো ভিসা রুট নেই। নিরাপত্তার কারণে নানা আইনি বিধি-নিষেধ থাকায় দেশটিতে শরণার্থী পুনর্বাসন ২০২৩ সালে ১০ বছরের সবচেয়ে নিচের দিকে নেমেছে।
অন্যদিকে যেসব রুট দিয়ে শরণার্থীরা আসে, সংশ্লিষ্ট ওই দেশগুলোর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির কারণেও বাধার মুখে পড়ে তারা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, তিউনিসিয়া ও ইইউয়ের মধ্যকার চুক্তির কথা। ইউরোপমুখী শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি বড় রুট তিউনিসিয়া। সাম্প্রতিক সময়ে তিউনিসিয়া দিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টাকারী শরণার্থীসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ায় তিউনিসিয়ার সঙ্গে ১ কোটি ১০ লাখ ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মালয়েশিয়া হাজার হাজার শরণার্থী ও অভিবাসীকে আটক কেন্দ্রে আটকে রেখেছে। তাদের মৌলিক প্রয়োজনকে অস্বীকার করছে এবং এ সম্ভাবনা প্রবল যে সেখানে শরণার্থীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
ইউএনএইচসিআরয়ের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ নিপীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, সহিংসতা, সশস্ত্র সংঘাত ও জন-বিশৃঙ্খলার কারণে বাস্তুচ্যত হয়েছে।
ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র শাবিয়া মান্টু বলেন, বাস্তুচ্যুত বেশির ভাগ মানুষ কখনই আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করে না, তারা নিজেদের দেশের মধ্যেই বাস্তুচ্যুত থাকে। নিজ দেশ থেকে পালাতে পারা শরণার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই আশ্রয় নেয় পার্শ্ববর্তী দেশে। আইওএম ২০১৪ সাল থেকে নিখোঁজ অভিবাসী প্রকল্পের মাধ্যমে মৃত শরণার্থী ও নিখোঁজদের তালিকা করার চেষ্টা করেছে। অনেক বছরের প্রচেষ্টায় জানা গেছে, শরণার্থী ও অভিবাসীদের মোট সংখ্যার প্রায় ১৩ শতাংশই ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু এবং মৃত ও হারিয়ে যাওয়া শরণার্থীর মোট সংখ্যার ৪৮ শতাংশই কিশোরী ও নারী।
ইউএনএইচসিআর বলছে, বিশ্বজুড়ে দিন দিন আরো অনিরাপদ হয়ে উঠছে শরণার্থী ও উদ্বাস্তু মানুষের জীবন। নিজ দেশে চলমান সহিংসতা এড়িয়ে প্রাণে বাঁচার প্রয়াস করলেও বিভিন্ন দেশের আইনি জটিলতার কারণে আশ্রয়ের জন্য তাদের বেছে নিতে হচ্ছে সে সমস্ত পথ, যেখানে প্রতি পদে পদে মৃত্যুর ফাঁদ পাতা।