এম এ মান্নান ::
মধ্যনগরে এবছর ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের আওতায় আসেনি ঝিনারিয়ায় নাথনগর হাওর। ফলে পাহাড়ি ঢলের প্রথম ধাক্কাতে অরক্ষিত এই হাওরে ফসলডুবি আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। তারা দ্রুত প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে এই হাওরটি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন।
জানাযায়, মধ্যনগর উপজেলার চমরদানি ইউনিয়নের মোকসেদপুর মৌজায় অবস্থানকারী জেলেদের পূর্বপুরুষরা বৌলাই নদীর তীরে অবস্থিত মোকসেদপুর গ্রামে বসবাস করতেন। প্রায় তিন দশক আগে বর্ষা মৌসুমে অকাল ঝড়ের কবলে পড়ে ও ডাকাতদের ভয়ে হাওরের মাঝে অবস্থিত গ্রামটি ছেড়ে চলে যান জেলেরা। বিলীন হয়ে যায় স্থায়ী মোকসেদপুর নামের গ্রামটি। তবে গ্রামটি হারিয়ে গেলেও শুকনো মৌসুমে তারা মোকসেদপুর নামক গ্রামে, ছন বা বনের ছাউনি দিয়ে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে, ছয় মাসের জন্য বসবাস করে পরিবার পরিজন নিয়ে। এবং উত্তরসূরিরা তীরবর্তী বৌলাই নদীতে মাছ ধরেন এবং ঝিনারিয়া হাওরে বোরো ধান আবাদের মাধ্যমে পরিবার নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রায় তিন যুগ ধরে মধ্যনগর উপজেলার নিয়ামতপুর বাঁকাতলার বোরো মৌসুমে বর্তমানে অস্থায়ীভাবে জেলেরা কৃষি আবাদ করেন ঝিনারিয়া নাথনগর নামক হাওরটিতে।
বিগত বছরে গুরমার উপ-প্রকল্পের ৫টি পিআইসির আওতায় ছিল এই হাওরটি। বর্তমানে ঝিনারিয়া নাথনগরের কৃষকদের দাবি যে, সবটুকু বাঁধ সংস্কারের আওতায় না আসলেও বিগত বছরের ১৯ নং প্রকল্পের অনুকূলে ক্লোজারসহ ৬০০মিটার বাঁধ সংস্কার কাজের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ২৩ লক্ষ টাকার উপরে। যার পিআইসি ছিলেন কাহালা গ্রামের কৃষক প্রণয় তালুকদার। এ নিয়ে ২৯ জানুয়ারি বোরো ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের জন্য সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত আবেদন করেন বিপ্লব ভৌমিক।
অসহায় কৃষকদের দাবি এই মুহূর্তে বৌলাই নদীতে ঢলের পানি দেখা দিয়েছে আর মাত্র দুই ফুট পানি বাড়লেই পানি প্রবেশ করতে পারে হাওরে। এবং তলিয়ে যাবে প্রায় পঞ্চাশটির অধিক পরিবারের স্বপ্ন। খাদ্য সংকটে থাকবে প্রায় ২শত গবাদিপশু। তাই দ্রুত কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি চান ঐ কৃষকরা।
কৃষক-কৃষাণীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমরার পূর্বপুরুষের জমি এইগুলো। আগামী কয়েক দিনের ভিতরেই গাছ থাইক্কা ধান বাইরইবো। প্রতি বছরেই বাঁধ নির্মাণ হয় কিন্তু এবছর হয়নি। তাই কয়েক দিনের ভিতরেই জাঙ্গলে মাটি না দিলে বৌলাই নদীর ঢলের পানি ঝিনারিয়ার হাওরে ঢুকবো। এবং ডুব্বিয়া যাইবো আমরার রোয়া জমি। উবাস থাকন লাগবো পুলাপান লইয়া। আমরা দাবি একটাই সরকারে কাছে অন্তত পক্ষে জিনারিয়া নাথ নগরের জাঙ্গলটায়
মাটি দিয়া বান্দিয়া দেন। তাইলেই আমরা পরিবার নিয়ে বাঁচমু। ধানের খেয়ার খাইয়া আমরার গরু ও বাছুর বাঁচবো।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী অতীশ দর্শী চাকমা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল মোতালেব ও নির্বাহী প্রকৌশি নুর আলম নাহিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এটি নিয়ে কৃষকদের বারবার দাবি উঠায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলা হয়েছে। ওই এলাকা আবারো সরেজমিনে পরিদর্শন করা হবে।