সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ডিসেম্বরে রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ভারত সরকার। এ নিষেধাজ্ঞা ৩১ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর থাকার কথা থাকলেও গত ২২ মার্চ নতুন করে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে পেঁয়াজ রফতানিতে ভারতের এ নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের বাজারকে প্রভাবিত করবে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
রবিবার ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) আয়োজিত ‘নিত্যপণ্যের দামের ওপর সিন্ডিকেট এবং প্রতিযোগিতার প্রভাব’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, পেঁয়াজ রফতানির ওপর ভারতের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের চুক্তিকে প্রভাবিত করবে না। চুক্তি অনুযায়ী ৫০ হাজার টন ভারতীয় পেঁয়াজ ধীরে ধীরে বাংলাদেশে আসবে। ভারত থেকে আমাদের পেঁয়াজ এরই মধ্যে ট্রেনে চড়েছে, যা দর্শনা রুট দিয়ে দুই বা তিনদিনের মধ্যে পৌঁছাবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের জোগান ও অন্য বেশকিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে বাজারের স্থিতিশীলতা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারী ও বৈশ্বিক সংঘাতের মতো বিভিন্ন সমস্যা কখনো কখনো বাজারকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। কিন্তু সরকার বাজারে কোনো অনৈতিক আচরণ শনাক্ত করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।
আহসানুল ইসলাম আরো বলেন, আমরা তিন ধরনের পণ্যের দাম নিয়ে কাজ করছি। আমদানি পণ্য, দেশে উৎপাদিত পণ্য ও পচনশীল পণ্য। এ তিন ধরনের পণ্যের বাজারের গতি আলাদা। সব পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়ে কাজ হয় না, তা বলা যাবে না। কিছু ক্ষেত্রে কাজ হয়। রমজানের আগে সয়াবিনের যে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, সে দামে সয়াবিন পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে দুয়েকজন স্মার্ট সরবরাহকারী আছে। তারা নিয়ন্ত্রিত সরবরাহ করে থাকেন। তাদের ব্যাপারে আমাদের নজরদারি আছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বাজারের আনুষ্ঠানিকীকরণ, বাজারের অপূর্ণতা যাচাই করার ব্যবস্থা এবং তথ্যের ফাঁক কমানো অত্যাবশ্যক। পুলিশিং এবং মূল্য নির্ধারণের মতো পদক্ষেপগুলো বিশেষত কৃষি পণ্যের জন্য বাজারের গতিশীলতায় কাজ করে না।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বাজার সিন্ডিকেশনের বড় ধরনের অভিযোগ রয়েছে। সরকার সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করছে। আসলে পণ্যের মূল্য স্তর এবং মূল্য ওঠানামার মধ্যে পার্থক্য আছে। দামের ওঠানামার সঙ্গে মানুষের আয় আনুপাতিকভাবে না বাড়ায় তারা মূল্য স্তরের পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন।
বাংলাদেশ ক¤িপটিশন কমিশনের সদস্য হাফিজুর রহমান বলেন, সব মূল্যবৃদ্ধি নিছক বাজারের সিন্ডিকেশনের ফল নয়। দাম বাড়ার পেছনে রয়েছে নানা কারণ। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের অস্থিরতার কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) শফিকুজ্জামান বলেন, কিছু অর্থনৈতিক তত্ত্ব দৃশ্যত বাংলাদেশের পণ্যবাজারে কাজ করে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, বাজারে সিন্ডিকেট থাকতে পারে। দেশে দেশে এমন সিন্ডিকেট আছে। কিন্তু এ সিন্ডিকেট যেন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। সিন্ডিকেট যেন সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। সরকার যেন তাদেরকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পারে। তবে এসব সমস্যা সমাধান করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব না। সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
আইবিএফবির সহসভাপতি এমএস সিদ্দিকী বলেন, অর্থ সরবরাহ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বিনিময় হার এবং সিন্ডিকেশন মূল্যবৃদ্ধির কিছু সাধারণ কারণ। এ মুহূর্তে অস্বাভাবিক বাজারদরের পেছনের কারণগুলো চিহ্নিত করে দেশের বাজারকে গতিশীল করা প্রয়োজন।