সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
চলতি বছরের এপ্রিলে যে কয়দিন ধরে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত ৭৬ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশি ভূখ-ে এই টানা তাপপ্রবাহের দিন সর্বোচ্চ। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৩১ মে থেকে শুরু করে গতকাল শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) পর্যন্ত দেশের কোথাও না কোথাও তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। সেই বিবেচনায় দেশে টানা প্রায় ২৭ দিন ধরে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, এই অঞ্চলে ১৯৪৮ সাল থেকে আবহাওয়া সংক্রান্ত রেকর্ড রাখা হচ্ছে। সেই বিবেচনায় চলতি বছরের এপ্রিলে যে কয়দিন ধরে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তা বিগত ৭৬ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
শাহীনুল ইসলাম বলেন, তবে এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, আমরা যে ২৭ দিনের কথা বলছি সেই সময়টাতে সারা দেশের সর্বত্রই সমান হারে তাপপ্রবাহ বয়ে যায়নি। মার্চের ৩১ তারিখ থেকে শুরু করে এপ্রিলের ১১ তারিখ পর্যন্ত দেশের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। তবে সে সময় তা খুব বেশি এলাকায় ছড়িয়ে যায়নি। এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে এপ্রিলের শুরুর দিকে একবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা (হিট অ্যালার্ট) জারি করেছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এপ্রিলের ১১ তারিখের পর থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত দেশের আরও কয়েকটি অঞ্চলে তাপপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়ে বলে জানান শাহীনুল ইসলাম। তিনি বলেন, এরপর ১৬ এপ্রিল থেকে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়, যা দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে টানা চলছে। তিনি জানান, এই হিসাবে দেশে টানা ২৭ দিন ধরে কোনো না কোনো অংশে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ এপ্রিল থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর তিন দফায় হিট অ্যালার্ট জারি করেছে। সর্বশেষ হিট অ্যালার্ট আজ শনিবার পর্যন্ত বহাল থাকবে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ২৭ তারিখের পরও তাপ্রবাহ নিয়ে কোনো সুখবর নেই। মাসের বাকি দিনগুলোতেও হিট অ্যালার্ট থাকার সম্ভাবনা আছে। ফলে যেকোনো বিবেচনায় এবার দেশের ইতিহাসে এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে তাপপ্রবাহ চলার রেকর্ড তৈরি হতে যাচ্ছে।
চলতি এপ্রিলে ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী অঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ পেরিয়ে গেছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এপ্রিলজুড়েই তাপমাত্রা এমন থাকবে। সারা দেশে গত বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ঈশ্বরদীতে। সে বছরের ১৭ এপ্রিল সেখানে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের ৮ বছরে অতি তীব্র তাপমাত্রার রেকর্ড নেই। তবে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৯৭২ সালের ১৯ মে। সেদিন রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল।
গত ১০ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বছরের যেকোনো মাসের চেয়ে এপ্রিল মাস তুলনামূলক অনেক বেশি উষ্ণ ছিল। ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে ৭ বার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে এপ্রিল মাসে। ২০১৬ সালে ২৯ এপ্রিল রাজশাহী সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৮ দশমিক ৫,২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল রাজশাহীতে ৪০ ডিগ্রি, ২০২০ সালের ১০ এপ্রিল রাজশাহীতে ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি, ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এরপর ২০২২ সালে আবারও এপ্রিলের ১৫ তারিখে রাজশাহীতে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি বছর এখন পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। গত ২০ এপ্রিল জেলাটিতে তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সামগ্রিকভাবে এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের তীব্র গরমের বিষয়ে আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, এপ্রিল বছরে সবচেয়ে উষ্ণতম মাস। এ সময় সূর্য খাঁড়াভাবে কিরণ দেয়। এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের স্থানিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে সূর্যের কাছে থাকে। যে কারণে সূর্যের তাপ বেশি পড়ে এই অঞ্চলে।
তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে সূর্য সাধারণত (কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর) একদম খাঁড়া অবস্থায় চলে আসে (বাংলাদেশও এই কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর অবস্থিত)। সূর্য যত খাঁড়াভাবে আলো দেবে তত বেশি তাপ অনুভূত হবে।
শাহীনুল ইসলাম আরও বলেন, দেশে পশ্চিমা বাতাস আসলে আর্দ্রতা (বাতাসে জলীয় বা®প) কমে যায়। অন্য দিকে দক্ষিণ-পশ্চিমা বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যায়। ঢাকা ও খুলনার দিকে আর্দ্রতা কম থাকে। আর বেশি থাকে চট্টগ্রাম ও বরিশালের দিকে। দেশের ওপরের দিকে যত যাবে আর্দ্রতা কমে যাবে। এ সময় তিনি আরও বলেন, এপ্রিলজুড়েই চলবে এই এই দাবদাহ।