1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২১ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

নতুন শিক্ষাক্রমে বেড়েছে প্রাইভেট ও কোচিং

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০২৪

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে নিরন্তর। একটি পদ্ধতি চালুর পর তাতে ধরা পড়ে নানা অসংগতি। সমালোচনা বাড়লে সে অসংগতি দূর না করেই প্রবর্তিত হয় নতুন পদ্ধতি। তাতেও দেখা দেয় জটিলতা। ফলে শিক্ষকরাও তাল মেলাতে পারেন না। অভিভাবকরাও পড়েন ধন্দে। নানা সমীকরণে পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার না কমলেও প্রভাব কিন্তু পড়ছে শিক্ষার মানে।
গত কয়েক বছরে শিক্ষায় বড় আঘাত হেনেছে করোনা-সংক্রমণ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায় এক বছর বন্ধ থাকায় টালমাটাল হয়ে পড়ে শিক্ষা খাত। করোনাপ্রসূত শিখনের ঘাটতি তিন বছরেও পূরণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে আগামী বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও নেওয়া হবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। দীর্ঘ সময়েও শিখনের ঘাটতি পূরণ না হওয়ার জন্য শিক্ষা প্রশাসনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আবার শিক্ষায় করোনার ক্ষত কাটতে না কাটতেই নতুন কারিকুলামের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে গত বছর। এতেও জটিলতার শেষ নেই। যেখানে তিন বছরেও শিখনঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হয়নি, সেখানে নতুন কারিকুলামে শিখনকালীন দক্ষতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা প্রায় তুলেই দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকরাও এ পদ্ধতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না। পরীক্ষায় জোর না থাকায় দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরা। আর মূল্যায়নের সর্বোচ্চ ধাপ ‘ত্রিভুজ’ পাওয়ার দৌড়ে ব্যাপকভাবে বেড়েছে প্রাইভেট ও কোচিং।
এযাবৎকালের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছিল ২০১০ সালে, যাতে শিক্ষাবিদদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। এই শিক্ষানীতিতে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে সংগতি রেখে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়। শিক্ষকের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেলসহ প্রায় সব ক্ষেত্রের জন্যই নানা সুপারিশ করা হয়। ১৪ বছরে এই শিক্ষানীতি কার্যকর করার উদ্যোগই নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়; বরং এটিকে পাশ কাটিয়ে নামমাত্র পাইলটিংয়ের মাধ্যমে নতুন নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন করছে তারা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগে প্রয়োজন ছিল শিক্ষার কাঠামো ঠিক করা। শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো প্রণয়ন করা। শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করা। এরপর যথাযথ পাইলটিং শেষে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা। সেসব না করায় পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই এখন বেহাল।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সিলেবাস ২০২৩ সালের পরীক্ষার জন্য পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাস অনুযায়ী হবে। করোনার প্রাদুর্ভাবের সময় ২০২০ সালে এই শিক্ষার্থীরাই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। এত দিনেও তাদের শিখনঘাটতি পূরণ হয়নি।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, করোনায় দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ঘাটতি এক দিনে পূরণ হবে না, কয়েক বছর লাগবে। তবে আমরা চেষ্টা করছি, পরীক্ষাটা যথাসময়ে অনুষ্ঠানের। শিখনঘাটতি পূরণ করারও নানা উদ্যোগ নিয়েছি। শিক্ষার্থীরা কোন বিষয়ে দুর্বল তা চিহ্নিত করে আলাদা ক্লাসের উদ্যোগ নিয়েছি। সব স্কুলের হয়তো সক্ষমতা নেই। তারপরও তারা চেষ্টা করেছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, সংক্ষিপ্ত নয় ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষা পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে নেওয়া হবে। এই শিক্ষার্থীরা যেহেতু করোনার সময়ে অষ্টম শ্রেণিতে ছিল, তাই তাদের শিখনঘাটতি থাকতে পারে। এজন্যই পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে পরীক্ষা। তবে ২০২৫ সাল থেকে আমরা যথাযময়ে অর্থাৎ এপ্রিলের প্রথম দিন এইচএসসি শুরু করবো। এসএসসি এ বছর ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে। ২০২৬ সালে এইচএসসিও পূর্ণ সিলেবাসে নেওয়া হবে।
২০২২ সালের তথ্য নিয়ে গত বছরের মে মাসে প্রকাশিত জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠপুস্তক বোর্ডের এক গবেষণায় বেরিয়ে আসে শিখনঘাটতির কথা। গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিক্ষনার্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে এ হার কমে দাঁড়ায় ৩৬ শতাংশে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিক্ষনার্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের কিছু বেশি, যা আগে ছিল প্রায় ৬৮ শতাংশ। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে। তৃতীয় শ্রেণিতে করোনার আগে বাংলা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের গড় শিক্ষনার্জনের হার ছিল প্রায় ৫১ শতাংশ, যা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৬ শতাংশে। এ শ্রেণিতে গণিত, ইংরেজি, বিজ্ঞান এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়েও ক্ষতি বেড়েছে।
গত বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। এ বছর দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে এই শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। ২০২৫ সালে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণি এবং দশম শ্রেণি এ শিক্ষাক্রমে যুক্ত হবে। ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণি যুক্ত হবে। এ শিক্ষাক্রমে ৭০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন শিক্ষকের হাতে থাকবে।
অভিভাবকরা বলছেন, আগে শিক্ষার্থীরা সাধারণত ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের প্রাইভেট-কোচিং করত। আর অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কেউ প্রাইভেট পড়ত, আবার কেউ পড়তে না। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকের হাতেই বেশিরভাগ নম্বর থাকায় শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে চার-পাঁচটি বিষয়ে প্রাইভেট পড়তে হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিক্ষকদের কাজ শুধু পড়া দেওয়া এবং দু-চারজনকে তা ধরা। একটি বিষয়ে বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে বলা, দুর্বলদের বাড়তি যতœ নেওয়া, কঠিন বিষয়ে বেশি সময় দেওয়ার রীতি কোনো স্কুলে নেই বলা চলে। অনেক শিক্ষক আবার নতুন কারিকুলামের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না। এ ছাড়া আলাদাভাবে গ্রামার-ব্যাকরণ পড়ানো হয় না বলে শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা থেকেই যাচ্ছে।
সম্প্রতি মাউশি অধিদপ্তর থেকে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট-কোচিংয়ে বাধ্য করা হলে প্রতিষ্ঠানপ্রধান দায়ী থাকবেন বলে নির্দেশনা জারি হয়েছে। কিন্তু তা নির্দেশনারূপেই থেকে গেছে। অবাধে চলছে শিক্ষকদের প্রাইভেট-কোচিং।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষা নিয়ে সরকারের দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নেই। যদি থাকত তাহলে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়নের উদ্যোগ আগে নেওয়া হতো। তা না হয়ে যখন যিনি মন্ত্রী হচ্ছেন তার মতো করেই শিক্ষাব্যবস্থা চালু করছেন। ২০০৮ সালে চালু হয় সৃজনশীল পদ্ধতি। সেটা যখন শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ আত্মস্থ করতে পারছিলেন না, তখন আরেক শিক্ষামন্ত্রী ২০২৩ সালে চালু করেন নতুন শিক্ষাক্রম। আগের শিক্ষাব্যবস্থার পুরোটাই পরিবর্তন করে দেওয়া হয়।
এ বছর নতুন শিক্ষামন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন শিক্ষাক্রম কোন পদ্ধতিতে কার্যকর করা হবে বা এর মূল্যায়ন পদ্ধতি কী হবে তা চূড়ান্ত করতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি করা হয়েছে। তারা প্রণীত শিক্ষাক্রম কার্যকরকরণ ও অগ্রগতি পর্যালোচনা করে সরকারকে মতামত দেবেন। এ ছাড়া নতুন কারিকুলামে দেশের পাবলিক পরীক্ষাসহ মূল্যায়ন পদ্ধতি পর্যালোচনাপূর্বক চূড়ান্তকরণের সুপারিশ করবেন। তারা পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, সংশোধন ও পরিমার্জনবিষয়ক সুপারিশও করবেন। একজন অতিরিক্ত সচিব এই কমিটির প্রধান। কমিটির সদস্যদের বেশিরভাগই প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। ক্ষণস্থায়ী এই কর্তাদের নিয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশ নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com