মোঃ শাহাদত হোসেন
বিশ্বকাপ মানেইতো নানা অঘটন। সব হিসেব-নিকেষ পাল্টে দেয়া। ২০১৮’র বিশ্বকাপও এর ব্যতিক্রম নয়। বিশ্বকাপ শুরুর সপ্তাহ পার হতে না হতেই শুরু হয়েছে নানা অঘটন।
এ বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটন ঘটে গেছে বিশ্বকাপ শুরুর আগেই। আর তা হল, চারবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালির বিশ্বকাপের মূল পর্বে সুযোগ না পাওয়া। ইউরোপের ফুটবল পরাশক্তি বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব পেরুতে পারবে না, তা কেউ ভাবেনি। ব্রাজিল (পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন) ও জার্মানির (চারবার চ্যাম্পিয়ন) পর রেকর্ড চারবারের চ্যাম্পিয়নদের কাছে সমর্থকদের প্রত্যাশাও অনেক। তবে ইতালির জন্যে তা নতুন কিছু নয়। এর আগে ১৯৫৮ সালে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বও ইতালি ডিঙ্গাতে পারেনি।
দ্বিতীয় চমক এবারের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই হয়ে গেল। রাশিয়া সৌদি আরবকে হারিয়ে দিল ৫-০ গোলে। সবাই ভেবেছিল ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ৬৭তম ও ৭০তম দলের খেলাটা হবে ম্যাড়ম্যাড়ে। কিন্তু রাশিয়া প্রমাণ করে দিল যে তারা একদম ফুরিয়ে যায়নি। উল্লেখ্য যে, ১৯৬৬ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছিল।
এবারের বিশ্বকাপ শুরুর দ্বিতীয় দিনেই ছিল বিশ্বকাপের অঘোষিত ফাইন্যাল- স্পেন বনাম পর্তুগালের খেলা। খেলা শুরুর আগে এ ম্যাচ নিয়ে যেমন সর্বাধিক আলোচনা হয়েছে, তেমনি আলোচনা হয়েছে খেলা শেষের পরও। সম্ভবতঃ এ বিশ্বকাপের সবচেয়ে আলোচিত ম্যাচ হয়ে থাকবে এটি। স্পেন বনাম পর্তুগালের লড়াই দর্শকদেরকে দারুণ আনন্দ দিয়েছে। বিশেষ করে, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ফ্রি-কিক থেকে করা গোলটি এ বিশ্বকাপের সেরা গোলের মর্যাদা পেতেও পারে।
এবার বাদে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে কুড়িবার। এই কুড়িবারে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আটটি দেশ। তন্মধ্যে ইতালি এবাররের বাছাইপর্ব পেরুতে পারেনি। বাকি সাতটি দেশ আছে সাতটি গ্রুপে। শুধু এইচ গ্রুপে বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন কোন দল নেই।
সাত বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মধ্যে উরুগুয়ে, ফ্রান্স আর ইংল্যান্ড নিজ নিজ ম্যাচে জয় পেয়েছে। অন্যদিকে স্পেন, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল ড্র করেছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় অঘটন ঘটিয়েছে মেক্সিকো। তারা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে ১-০ গোলে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। জার্মানি শুধু ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নই নয়, ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দেশও (পয়েন্ট- ১৫৫৮)। আর ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে মেক্সিকোর অবস্থান ৯৮৯ পয়েন্ট নিয়ে ১৫তম। মেক্সিকোর সাথে হারের পর জার্মানির পরের দুটি খেলায় জয়ী হওয়া ছাড়া উপায় নেই। তা না হলে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদেরকে ১৯৩৪ সালের পর প্রথমবারের মত প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিতে হবে। উল্লেখ্য যে, ১৯৩০ সালের প্রথম বিশ্বকাপে জার্মানি অংশগ্রহণ করেনি, আর ১৯৫০ সালের চতুর্থ বিশ্বকাপে জার্মানিকে খেলতে দেয়া হয়নি।
বাংলাদেশে ফুটবল সমর্থকদের প্রায় ৮০ শতাংশই ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার সমর্থক। ফলে এ দুটি দল তাদের প্রথম খেলায় জিততে না পারায় সমর্থকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। বিশেষ করে লিওনেল মেসির পেনাল্টি মিস করাটা তার সমর্থকরা কোনভাবেই যেন মেনে নিতে পারছে না।
‘এ’ থেকে ‘এইচ’ পর্যন্ত প্রতিটি গ্রুপের প্রতিটি দলেরই অন্তত একটি করে খেলা শেষ হল। আজ থেকে আবার ‘এ’ গ্রুপ থেকে খেলা শুরু হচ্ছে, অর্থাৎ প্রতিটি দলের দ্বিতীয় খেলা শুরু হচ্ছে। এ পর্বের খেলা শেষ হলেই অনেকগুলো দলের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলা নিশ্চিত হয়ে যাবে, বিশেষ করে যেসব দল দুটি খেলায় জিতবে। উল্লেখ্য যে, প্রথম রাউন্ডে প্রতিটি দল তিনটি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়।
আজ মরক্কোর বিরুদ্ধে পর্তুগাল, সৌদি আরবের বিরুদ্ধে উরুগুয়ে এবং ইরানের বিরুদ্ধে স্পেন তাদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে। প্রথম ম্যাচে উরুগুয়ে মিশরের বিরুদ্ধে ১-০ গোলে জিতেছিল। তাই আজ যদি সৌদি আরবকে হারাতে পারে তাহলে তাদের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠা নিশ্চিত হয়ে যাবে। অন্যদিকে ‘বি’ গ্রুপ থেকে প্রথম ম্যাচে স্পেন ও পর্তুগাল ড্র করায় পরের ম্যাচগুলোতে তাদের জেতাটা জরুরি। এই গ্রুপের প্রথম ম্যাচে ইরান মরক্কোকে হারিয়েছে। এখন স্পেন বা পর্তুগাল- অঘটন ঘটিয়ে যে কারো সাথে একটি খেলা জিতে গেলে ইরানও কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে চলে যাবে। সেক্ষেত্রে স্পেন বা পর্তুগাল- যে কোন একটি দলকে বিদায় নিতে হতে পারে।