একজন গ্রামপুলিশ তাঁর বেতন বন্ধের অভিযোগ করেছেন। দেশে হাজার হাজার গ্রামপুলিশ চাকরিতে নিয়োজিত আছেন। এতো বিপুল সংখ্যক চাকুরের মধ্যে কোনও একজনের বেতন বন্ধ হতেই পারে। এমন হলে সেটা তেমন কোনও ব্যতিক্রমী ও চাঞ্চল্যকর কোনও ঘটনা নয়। বেতন বন্ধেরও অনেক সঙ্গত কারণ থাকতে পারে। কিন্তু যে-গ্রামপুলিশের বেতন বন্ধ হলো তিনি যদি একজন প্রতিবন্ধী মানুষ হন তবে বিষয়টি ব্যতিক্রমী ও চাঞ্চল্যকর হয়ে পড়ার যথেষ্ট কারণ থেকে যায়। শুধু কারণ থেকে যায় না, বিষয়টির মধ্যে কোনও না কোনও ‘ডাল মে কুচ কালা হায়’ ধরনের একটা কীছু থেকে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দেয়। সাধারণ সংবাদ পাঠকের কৌতুহল বাড়ে।
সংবাদে প্রকাশ সুনামগঞ্জে সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিবন্ধী কোটায় চাকরি পাওয়া হতদরিদ্র গ্রামপুলিশের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কী জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জানার দরকার নেই। এ পর্যন্ত জানাই যথেষ্ট যে, একজন প্রতিবন্ধীর বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে কাজটা কারও পক্ষে এবং কোনও বিবেচনায়ই সঙ্গত কোনও কাজ হতে পারে না। প্রতিবন্ধী হলে যে কেউ কোনও মন্দ কাজ করতে পারে না এমন তো নয়। স্বাভাবিকভাবে প্রতিবন্ধীজনও মন্দ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। সেজন্য তার অবশ্যই অপরাধ হবে। কৃত কাজ যদি বেআইনি ও মন্দ হয় সে-কাজের বিচারও অবশ্যই হতে হবে। বিন্তু তাই বলে তার বেতন বন্ধ করে দেওয়া কেন? বেতন বন্ধ না করে কি তার শাস্তির ব্যবস্থা করা যায় না? অপরাধীর শাস্তিবিধানের আগে তার খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে তাকে মৃত্যুর দুয়ারে নিয়ে যাওয়ার কী মানে থাকতে পারে? এইসব প্রশ্নের পেছনে কোনও না কোনও ষড়যন্ত্র আছে বলে যে-কারও ধারণা হতেই পারে।
এ পর্যন্ত ঘটনাটিকে না হয় একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা গেল, কিন্তু যখন এই প্রতিবন্ধী গ্রামপুলিশ জেলা প্রশাসকের বরাবরে তাঁর বেতন বন্ধের বিষয়ে লিখিত প্রতিবাদ জানিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে ফিরে যওয়ার ঘোষণা প্রদান করেন তখন বিষয়টির তাৎপর্য আর ব্যতিক্রমী থাকে না, অন্যরকম তাৎপর্যকে প্রতিফলিত করে। সেই সঙ্গে যে-ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহেন হতদরিদ্র প্রতিবন্ধীর বেতন বন্ধ করে দিয়ে প্রকারান্তরে খেয়েপরে বাঁচার পথ বন্ধ করে দেন সে-চেয়ারম্যানকে আর যা-ই বলা যাক অন্তত বিবেচক বলে মনে হয় না। একজন জনপ্রতিনিধির এমনতর আচরণের প্রতিকার কী হতে পারে?
আলোচ্য প্রতিবন্ধী কোনও দুষ্কর্ম করে থাকলে তাঁর বিচার করা অবশ্যই জরুরি, কিন্তু তাঁর বেতন বন্ধ করে নয়। আর তাঁর সঙ্গে কোনও অন্যায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে করা হয়ে থাকলে তারও প্রতিকার করার ব্যাপারে অবহেলা প্রদর্শন উচিত হবে না। জেলা প্রশাসনের বরাবরে বিষয়টি অভিযোগ আকারে ইতোমধ্যে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, আশা করি এর একটি আইনসম্মত ও যৌক্তিক সুরাহা করা সম্ভব হবে।