1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০৫ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

চলছে আমার এক্কাদোক্কা

  • আপডেট সময় রবিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৭

শামস শামীম ::
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর। রাতে ফোন দিলেন জিয়াউল হক ভাইÑআমাদের সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি। অফিসে দেখা করতে বললেন। বললাম আজ পারবনা ভাই, আমি বাইরে। তিনি জরুরি ভিত্তিতে পরদিন দেখা করতে বললেন। আমি ভুলে গিয়েছিলাম। পরদিন বিকেলে আবার তার ফোন পেয়ে বাজারের অফিসে সন্ধ্যার পর দেখা করি। কয়েকজন লোক তখন অফিসে বসা। সবাইকে বের করে দিলেন একান্তে আমার সঙ্গে কিছু কথা বলতে।
আমি কিছুটা ইতস্তত। কিছুক্ষণ পরেই তিনি কোন ভূমিকা না করে দৈনিক সুনামকণ্ঠে কাজ করার অফার দিলেন। আমিও ভূমিকা না করে সরাসরি তাকে না করে দিলাম। মৌলিক লেখালেখির কথা বলে স্থানীয় পত্রিকায় কাজ করার কোন ইচ্ছে নেই একথা বিনয়ের সঙ্গেই জানালাম। কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা। আমার হাতটি ধরে বললেন, ভাই তোমাকে যেমন করেই হোক আমার পত্রিকায় সময় দিতে হবে। শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে যাই। তিনি সম্মানির বিষয়টি তোললেন। আমি বিষয়টি এড়িয়ে গেলাম। পদের বিষয়টি তোললেন, সেটিও এড়িয়ে গিয়ে কর্মী হিসেবে কাজ করার কথা বললাম। এভাবেই দ্বিতীয় দফা দৈনিক সুনামকণ্ঠে আমার প্রফেশনাল যাত্রা শুরু হয়। যদিও ২০০১ সালে প্রথম সংখ্যা থেকে টানা এক বছর আমি এই পত্রিকার সৌখিন সাংবাদিক ছিলাম। তখন পত্রিকাটি সাপ্তাহিক ছিল এবং নিয়মিত বের হতো।
দুই.
অফিসে আসি প্রায় প্রতিদিনই। টাইমটেবিল নাই। ছুটিছাটা নাই। অফিসে যতক্ষণ থাকি ততক্ষণ অফিস তথা পত্রিকাকেই সময় দেওয়ার চেষ্টা করি। প্রতিদিনই কোন না কোন সংবাদ লেখার চেষ্টা করি। বিশেষ প্রতিনিধি বা স্টাফ রিপোর্টার নামেই আমার করা সংবাদ পত্রিকায় ছাপা হয়। পত্রিকায় যেসব লিড রিপোর্ট যায় বেশিরভাগই আমার করা। তবে শুরু থেকেই বাইন্যামে রিপোর্ট করা থেকে বিরত থাকি। মাঝে-মধ্যে এক দু’টো রিপোর্ট বাইন্যামে যায়। এখনো এই ধারাবাহিকতা বজায় আছে। এই পত্রিকার আলোচিত যতগুলো রিপোর্ট ছাপা হয়েছে অন্য সহকর্মীর মতো এতে আমারও যতকিঞ্চিৎ অবদান আছে। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, তথ্য মন্ত্রণালয়ের জনৈক উপসচিবসহ বিশিষ্টজনরা বিভিন্ন সময়ে আমাদের অফিস পরিদর্শন করতে এসে অনেক রিপোর্টের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন। আগামীতে এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন আমাদের।
সততা, নিষ্ঠা, দায়িত্বশীলতা, দেশ ও মানবসমাজের কল্যাণের কথা বিবেচনা করেই সংবাদ তৈরির চেষ্টা করি। নেগেটিভ সমাজের বদলে পজেটিভ সমাজের ছবি খুঁজি। খুঁজে ফিরি পরিবর্তনের মানুষদের। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষিসহ উন্নয়নমূলক সংবাদের পিছনে ছুটে চলার চেষ্টা করি।
সংবাদ, বিজ্ঞাপন, বিপণনে আমরা এখনো পুরোদস্তুর পেশাদার হতে পারিনি। সেই পেশাদারি লোকেরও অভাববোধ করছি প্রতিদিন কাজ করতে গিয়ে। একদিন এই জেলা শহরে দৈনিক পত্রিকা ছিল না, এখন একাধিক দৈনিক বের হয়। প্রত্যাশা করি একদিন স্থানীয় পত্রিকা হাউজগুলোতেও পেশাদার লোকদের পদচারণায় ভরে ওঠবে।
তিন.
আমাদের সমাজ এখনো অগ্রসরমানতাকে মেনে নিতে পারেনি। এই অগ্রযাত্রা রূখে দিতে অন্যান্য মানুষ যতটানা চেষ্টা করে তার চেয়ে বেশি চেষ্টা করে সমগোত্রীয় লোকজন। তাই বিভিন্ন সময়েই আমাদের করা আলোচিত রিপোর্টের সূত্র ধরে সংক্ষুব্ধ লোকজনকে উস্কে দিয়েছে আমাদেরই কিছু হীনমন্য বান্ধব। মামলা-মোকদ্দমা করতে প্ররোচিত করেছে। বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে চলছে। কখনো কখনো আমাদের সম্পাদকমন্ডলীর কানেও আকথা-কুকথা বলছে। ঠিক এর বিপরীতে আরেকটি গোষ্ঠী আমাদের সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতির সঙ্গে ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্টতার বিষয়ের জের ধরে তার উপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে আমাদের মানে আমাদের অনেক রিপোর্টারের ব্যক্তিগত ক্ষতিও করেছে। এই চক্র এখনো সক্রিয়। ওই গোষ্ঠীরই কেউ কেউ সুনামকণ্ঠ যাতে কখনো ডিএফপি’র তালিকাভুক্ত না হয় সে চেষ্টাও করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্রুততম সময়ে মাত্র দশ মাসের মাথায় সুনামকণ্ঠ সরকারি বিজ্ঞাপনপ্রাপ্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে সকল নিন্দুকের মুখে কালি মাখিয়ে দিয়েছে। সুনামকণ্ঠে এখন সবধরনের সরকারি বিজ্ঞাপন ছাপা হচ্ছে।
দেশ ও সাধারণ মানুষের পক্ষেই থাকার অঙ্গীকার করেছিলাম আমরা। আমাদের পত্রিকার মাধ্যমে নাগরিকের মতপ্রকাশের অধিকারকে গুরুত্ব দিয়েছি। সংবাদপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বশীলতাকেও ভুলে যাইনি আমরা। পত্রিকাটিকে গণতান্ত্রিক চর্চার বাহনরূপে প্রতিষ্ঠা করতে এখনো আমরা সচেষ্ট। তবে এসব করতে গিয়ে বিভিন্ন সংক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর সংঘাত ও দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
চার.
শুধু রিপোর্ট প্রকাশ নয় নানা কারণে সংবাদপত্র এখন কমিউনিটির মুখপত্রে পরিণত হয়েছে। সামাজিক, মানবিক অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। এই দিক দিয়ে আমরা স্থানীয় অনেকের চেয়ে এগিয়ে আছি। হতদরিদ্রদের শিক্ষায় সহায়তা, রাজনৈতিক সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তাসহ নানাভাবে গত দুই বছর ধরে সুনামকণ্ঠ কাজ করে যাচ্ছে। জামায়াত-বিএনপির নাশকতায় ২০১৫ সনে ঢাকার গাজীপুরে নিহত সুনামগঞ্জের নারায়ণতলা এলাকার কিশোর তোফাজ্জল হোসেনকে সুনামকণ্ঠের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষার্থীকে নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এখনো এই ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। এই ক্ষেত্রে আমাদের সম্পাদকমন্ডলির সভাপতির হাত সদা প্রসারিত।
শুধু সামাজিক কাজই নয় খেলাধুলার ক্ষেত্রেও সবার চেয়ে এগিয়ে ছিল সুনামকণ্ঠ। প্রথমবারের মতো বৃহত্তর সিলেটে মেগা কুইজের আয়োজন করেছিল। বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে টানা একমাস চলছিল এই জমজমাট আয়োজন। বিশাল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা বিজয়ীদের প্রত্যেককে মোবাইল ফোন পুরস্কার দিয়েছি।
পাঁচ.
আমাদের সকল অহঙ্কার আর অর্জনের নাম মুক্তিযুদ্ধ। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জনকে অম্লান করে রাখতে এবং এর ইতিহাসকে ধরে রাখতে নানাভাবে কাজ করেছি। জাতির জন্মযুদ্ধের বিজয়ী নায়কদের বরাবরই আমরা সম্মান করে চলেছি। আমাদের সম্পাদকীয় নীতিমালায় অকপটে আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলে চলছি। প্রথমবারের মতো আমরা সুনামগঞ্জের বালাট সাব সেক্টরের প্রথম ব্যাচের অগ্রপথিক যোদ্ধাদের খুঁজে বের করে তাদের সম্মাননা জানিয়ে নিজেরা গর্বিত হয়েছি। যেসব মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাননি তাদের তোলে ধরে রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে জাতির বিস্মৃতপ্রায় যোদ্ধাদের স্বীকৃতি দানে আহ্বান জানিয়েছি। বিজয়ের মাসজুড়ে যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর সরেজমিন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ঘুরে তুলে এনেছেন একাত্তরের কথা। এই লেখায় একাত্তরের অশ্রুত, বিস্মৃত, অনালোকিত, অনালোচিত ইতিহাস উঠে আসার পাশাপাশি বিকৃত ইতিহাসের জবাব দেওয়া হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া যোদ্ধার খবর দিয়েছি আমরা। খুঁজে বের করেছি গণহত্যাস্থল ও বীরাঙ্গনাদের। পরবর্তীতে আমাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বের হয়েছে সুনামগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সবচেয়ে সমৃদ্ধ গ্রন্থটি। এভাবে প্রকাশ্যেই আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করে চলেছি।
ছয়.
১০ ফুট বাই ১০ ফুটের দুটি রুম। হাতে-স্কেলে মাপা সহজ। কিন্তু এই ছোট্ট দুটি রুমে হৃদয়ের উচ্চতা মাপার কোন সুযোগ নেই কারো। হাসি-আনন্দে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আনন্দ আবেগে মেতে থাকি, মুড়ি মুরকি, ডিম পরোটায় মেতে থাকি।
আমাদের অফিসের এক তৃতীয়াংশ কাজ একাই করে বিশ্বজিৎ পাপন, আমাদের সম্পাদকের ছেলে। তাকে গত এক দশক ধরে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছে মিল্লাত আহমেদ। তাছাড়া আমি ও মাহমুদুর রহমান তারেক মাঝে-মধ্যে পাপনকে গুরুত্বপূর্ণ নিউজ সম্পাদনায় যতকিঞ্চিত সহযোগিতা করে থাকি।
নানা কারণে প্রায়ই আমাদের অফিসের স্টাফদের মধ্যে রাগ-অনুরাগ দেখা দেয়। এর কারণ হিসেবে আমার মনে হয়েছে এখনো স্থানীয় সংবাদপত্রে পূর্ণ পেশাদারিত্বের অভাব। পেশাদারিত্ব মনোভাব এখনো আমাদের মধ্যে গড়ে ওঠেনি। তাই দায়িত্বশীলতার কথা প্রায়ই ভুলে যাই। রাগ-অনুরাগের বিষয়টি আমরা ভিতরে লালন করলেও সাধারণত কাজে প্রভাব পড়তে দেইনা, অন্তত আমার বেলায় এমনটিই মনে করি আমি। এক পরিবার হিসেবেই প্রতিদিন আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি।
নিমগ্ন ঋষির মতো আমাদের সম্পাদক ও প্রকাশ বিজন সেন রায় সবার আগে অফিসে আসেন। কাজ শেষ করে সবার শেষে বাসায় ফিরে তার ছেলে পাপন। তাকে সঙ্গ দেন আমাদের গ্রাফিক্স ইনচার্জ নূর ভাই। মিল্লাতও তাদের নিশিরাতের সঙ্গী। সিনিয়র রেজাউল ভাই বিজ্ঞাপন নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও তিনি এখনো বিজ্ঞাপন কালেকশনের ডিজিটাল কৌশল রপ্ত করতে পারেননি, বরং এনজিওর ছোটখাটো অনুষ্ঠান নিয়েই ব্যস্ত থাকেন তিনি। এ নিয়ে আমরা টিকাটিপ্পনি কাটি। মাহমুদুর রহমান তারেক রাজনীতির গন্ধ শুকে শুকে রিপোর্ট করে চমকে দেয়। অপরাধ বিষয়ক সংবাদের খুঁজে ছুটে চলা আমিনুল রাত-বিরাত মানে না। তবে রিপোর্টের চেয়ে ভালো একটি ছবির জন্য জান কোরবান করতে রাজি! শিক্ষানবিশ রিপোর্টার মোসাইদ রাহাত অনুগত বালকের মতো সম্পাদকের এসাইনমেন্ট কাভার করতে ব্যস্ত। এদিক-ওদিক করতে গিয়ে বেচারা প্রায়ই কাহিল। ইদানিং সেও ভালো ভালো রিপোর্ট করছে। বিপণনের অলি প্রতিদিনই আমাদের মুগ্ধ করছে। অল্প বয়সে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছে প্রতিদিন। অফিস সহকারি হাম্মাদ মিয়া প্রায়ই ভুলে যায় তার দায়িত্বের কথা। অগোছানো অফিস গোছাতে সে ভুলে যায়। বরং এন্ড্রয়েড ফোনে সে গান-সিনেমা দেখতেই আগ্রহী।
শুরুতে কিছুদিনের জন্য আমাদের সঙ্গী হয়েছিলেন সাংবাদিক শাহজাহান চৌধুরী ও বিপণনের মো. ফরিদ মিয়া। পরে যোগ দিয়ে চলেও গেছেন সাংবাদিক শামসুল কাদির মিছবাহ। আমরা সকল বন্ধুদেরই অবদান ও শ্রমকে স্বীকার করি।
এভাবেই রাগে, অনুরাগে, প্রেমে, দ্রোহে, দায়িত্বে-অবহেলায় চলছে আমার এক্কাদোক্কা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com