1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ইতিহাসের এক ‘রাখাল রাজা’র প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি : মো. আখলাকুর রহমান

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৬

হাজার বছরের প্রান্তসীমায় এসে এক মাইল ফলক ছুঁয়েছে—উনিশ’শ একাত্তর! একাত্তর সালের বাংলাদেশ! আর দেশ-কালের পটভূমিতে সে সময়ের মানুষেরা। সারা দেশজুড়ে যখন শত-সহ¯্র-লক্ষ কণ্ঠে মাতৃভূমির ‘জয়’ ঘোষণা! চারদিকে কেবলই গগণবিদারী শ্লোগান, ধ্বনি-প্রতিধ্বনি “জয় বাংলা”!
আমরা মাতৃভূমি বাংলার জয় ঘোষণা করি। যখন ডাক আসে মুক্তির, স্বাধীনতার আর সংগ্রামের! ভেসে আসে বজ্রকণ্ঠের সেই কালজয়ী উচ্চারণÑ “এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।”
যেনো যাদুর ছোঁয়ায় শত তেজোদ্দীপ্ত হয়ে প্রবল এক সমুদ্রোচ্ছ্বাস তুল্য প্লাবনের আবেগে সৃষ্টি হলো- আমাদের এক নুতন ইতিহাস।
একাত্তর সালের বাংলাদেশ! যখন সমস্ত জনতার হৃদয়ের গভীর থেকে প্রত্যয়জাত মাতৃভূমির স্বাধীনতা! স্বদেশের সীমানা থেকে শত্রুদের বিতাড়ন। আর কেবলই আত্মপরিচয়ের উৎসের সন্ধান।
বাংলাদেশ, বাঙালি- কোটি কোটি বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ! কার সাধ্য রুখে জনতার অভিযাত্রা? জিন্দাবাদ থেকে কেনো বাংলায় ‘জয়ধ্বনি’, পাকিস্তান থেকে কেনো বাংলাদেশ? ’৪৭ পরবর্তী ২৪ বছরের ঘটনাক্রমই এরার জবাব দেবে। সাম্প্রদায়িকতার বিষবা®প আার গণতন্ত্রহীন নৈরাজ্যে যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছিলো আমাদের। অন্যায় অবিচারের লাগামহীন ব্যপ্তি, গোষ্ঠীস্বার্থের সীমাহীন উৎপাত। শোষণ আর নিপীড়নের যাঁতাকলে নি®েপষিত সাধারণ জনতা। কিন্তু বাঙালির রক্তে যে প্রতিরোধের সংস্কৃতি? তাই বিদ্রোহে পথ বেয়ে বেয়েইতো এই চূড়ান্ত প্রতিরোধ!
হাজার বছরের ইতিহাসে এই প্রথম একই অঙ্গীকার, শঙ্কাহীন লক্ষ কোটি প্রাণের বজ্র শপথ আর আত্মোৎসর্গে আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জনের ইতিহাস! কিন্তু এত সবের পরেও পাপমোচন হলো না। খুব দ্রুতই চলে এলো পঁচাত্তর। আবারো উল্টো পথযাত্রা। ভারি দুঃসময়ের ভেতর দিয়ে আবারো শুরু দিনাতিপাত। অসুরের কালো থাবায় ফের ক্ষত বিক্ষত মাতৃভূমির ললাট। মুক্তিযুদ্ধের সকল পবিত্র প্রাপ্তি আর সব মহৎ অর্জনগুলোকে পদদলিত করে আবারো উৎসের বিপরীতে যাত্রার সূচনা ঘটালো সে এক কালো রাতের কথিত ‘সূর্য সন্তানেরা’! আবারো জিন্দাবাদ, আবারো পুরানো কায়দায় ধর্মীয় ঢালের ব্যবহার। ফেলে আসা শোভানিজমের ধারায় ফের গণবিরোধী অপশাসন। হিংসা-বিদ্বেষ-সাম্প্রদায়িকতাকে পুঁজি করে স্বাধীনতার বৈরীশক্তি জঙ্গি-মৌল-সন্ত্রাসবাদকে উস্কে দিয়ে সিভিল সোসাইটির উপর ক্রমাগত প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তার, আভ্যন্তরীণ লুটের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ এবং রাজনীতিকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করে এর দুর্বৃত্তায়নের কাজটা চলতে লাগলো যেনতেন ভাবে।
মাত্র চার বছরের মাথায় একাত্তর হয়ে গেলো মৃত অতীত। চারদিকে কেবল বিভ্রান্তি ছড়ানোর ব্যাপক তোড়জোড়। যেখানেই প্রসঙ্গ মুক্তিযুদ্ধ বা একাত্তর – সেখানে কেবলই পাশ কাটিয়ে যাওয়া, না হয় বিকৃতি – সেন্সরশিপের খড়গ, ইচ্ছেমাফিক কাট-ছাঁট, পরিবর্তন-পরিবর্ধন। আপন বীরত্ব গাঁথা আর নজিরবিহীন আত্মদানের ঘটনাবলিকে ম্লান করে দেখা, ক্ষীণ করে দেয়া কিংবা মুছে দেয়ার যে কি বিরামহীন প্রয়াস!
কি কপটতা, কি চাতুর্য্য! একাত্তরের ৭ মার্চ তেমন কিছুই শুনেনি, তেমন বুঝতেও পারেনি- ছিলো যেনো একেবারেই নাবালক। তবে ২৬ কি ২৭ মার্চ শুনলো মাত্রাতিরিক্ত – তখন আবার পুরোপুরিই সাবালক। প্রতিরোধ দেখেনি- কেবল পালিয়ে যেতে দেখেছে। দেখেছে ২৫ মার্চের আত্মসমর্পণও ! রণক্ষেত্রে কেবল ‘বাংলা’ বলেছে – ‘জয় বাংলা’ বলেনি। বৈদ্যনাথ তলার ঘটনাবলি তো হিসেবেই নেই। স্বাধীনতা ঘোষণার ‘ড্রাম’ তত্ত্ব আর ত্রিশের শূন্য ছেঁটে তিন লাখ বধের হিসাব দাঁড় করিয়ে বৈরীশক্তির পক্ষে কি দারুণ ওকালতি? জাত গেলো, ধর্ম গেলো, দেশ গেলো—কেবল গেলো গেলো বলে কি চিৎকার? লক্ষ্যটা তো কেবল ক্ষমতা! তাই পুরোনো গুরু কুলের দেখানো পথে চলতে থাকলো জনমনে ভয়ভীতি আর ত্রাসের সঞ্চারণ! এ জন্যেই তো পঁচাত্তর। একাত্তরের সকল অর্জনকে পায়ে দলে দলে কেবলই পেছনে ফেরা?
কোন ইতিহাসই হঠাৎ করে কিংবা একদিনেই গড়ে উঠে না। বলা যেতে পারে, কেবল সূচনা পর্বেই ইতিহাসের সবগুলো উপাদান অর্জিত হয় না। একটা গতিশীল ধারা প্রবাহের ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলে ইতিহাসের ধারা প্রবাহ। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অব্যাহত থাকে ইতিহাসের অগ্রযাত্রা। ক্রমেই তা শক্তি সঞ্চয় করে এক সময়ে পূর্ণতা লাভে সক্ষম হয়। এরপরই তৈরি হয় কোন এক ক্রান্তিকাল। বাঙালি জাতি-রাষ্ট্র সৃষ্টির পর্বটা তেমনি এক তাৎপর্যপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা।
একাত্তরের ২৬ কি ২৭ মার্চ। কেউ কোন এক রাতে গর্জন করে বললো, বাঙালিরা জেগে উঠো, যুদ্ধ করো- ছিনিয়ে আনো স্বাধীনতা। আর অমনি সবাই হুড়মুড়িয়ে উঠে লেগে গেলো যুদ্ধে? আর এসে গেলো স্বাধীনতা? বাঙালিরা তো এমন কোন নির্বোধ বা অপদার্থ কিছু নয়- এমন একটা কথা তাদের জানাতে সময় লেগেছে বহুদিন!
বাঙালিরা জানে যদি না একাত্তরের ৭ মার্চ, তবে কি করে মুক্তিযুদ্ধ? যদি না মুক্তিযুদ্ধ, তবে কি আমাদের এ বর্তমান স্বাধীন স্বত্তা আর অবস্থান? আর যদি না ’৪৮ সালে মায়ের মুখের ভাষা কেড়ে নেয়ার আস্ফালন, তবে কেনো ৫২-এর ভাষা আন্দোলন? যদি না ভাষা আন্দোলন, তবে কেনো যুক্তফ্রন্ট? সুশাসন আর গণতন্ত্রের পক্ষে প্রথম সেই ভূমিধ্বস বিজয়! এরপরেই তো শুরু নানা ছল- চাতুরি, নানা কসরত আর কূটকৌশলে গণতন্ত্রকে স্থায়ী নির্বাসনে পাঠানোর তাবৎ আয়োজন! আর এ রোড ম্যাপ ধরেই তো ’৫৮ সালের সামরিক শাসন! রাজনীতিকদের গলাচেপে আর সিভিল বুরোক্র্যাটদের পর্দার আড়ালে পাঠিয়ে মিলিটারি বুরোক্র্যাসির স্বর্ণ যুগের সূচনা!
তবে দেখা গেলো সবাই সব মেনে নিলে ও বাঙালিরা প্রশ্ন তুলে, আপত্তি করে। ’৬২ সালে বাঙালি ছাত্র-জনতাই প্রথম প্রতিবাদী হয়ে রাস্তায় নামলো শিক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে।
বাঙালিরা তাই ভালো করেই জানে যদি না সামরিক শাসন, তবে কেনো নিজেদের আত্মনিয়ন্ত্রাধিকারের প্রশ্ন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শপথ, আর ৬ দফা ম্যাগনাকার্টা! ৬ দফা না হলে কেনো আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা? আর এ মামলা না হলে কি করে ’৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান? কি ভাবে সিংহের মতো গর্জে উঠে শান্ত-প্রাণ বাঙালি? কি করে তারা ফাঁসির রজ্জু থেকে ছিনিয়ে আনে তাদের আরাধ্য পুরুষ Ñ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তানকে? কেনো বরমাল্য গলে পরিয়ে তাঁকে বানায় বঙ্গবন্ধু?
বঙ্গবন্ধু না হলে কি করে ’৭০-এর নির্বাচন? স্বাধিকার অর্জনের পথে জাতির নিশ্চিদ্র ঐক্যÑ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী জনতার চূড়ান্ত রায়!
এরপরেই তো একাত্তর। যেখানে বাঁধা সেখানেই আঘাত – সশস্ত্র প্রতিরোধ! মহৎ সব অর্জনের লক্ষ্যে কি অভূতপূর্ব অভিযাত্রা! এর বাইরে কি ইতিহাস আছে আমাদের?
ইতিহাস কালজয়ী। কালের সংকীর্ণতা পেরিয়ে কালান্তরে এর সদর্প পদচারণা। লুটেরা সংস্কৃতির দুর্ভেদী রাহুগ্রাস এক সময়ে বিপর্যস্ত করেছে প্রিয়জনদের থেকে বিচ্ছিন্ন প্রায় যে মানুষটিকে! আর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে দূরে কোথায় ও পুঁতে রেখে যারা খুঁজে পেয়েছে ক্ষণিকের আত্মতৃপ্তি!
তারাই ভুল করেছে। টঙ্গিপাড়ার কবর থেকে খুব সহজেই তিনি উঠে এসেছেন বাঙালির হৃদয়ে! বরং তারাই হয়েছে নিগৃহীত। অপমানের মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেই একে একে তাদের বিদায় নিতে হয়েছে। যে ক’জন বেঁচে আছে, তাদের বরণ করতে হয়েছে শেকড় বিচ্ছিন্ন পলাতকা জীবন। আর বাকি আত্মঘাতি স্ববিরোধীরা আজ প্রায় সকলেই বিচারের কাঠগড়ায়।
[লেখক : অধ্যক্ষ, জনতা মহাবিদ্যালয়, ছাতক, সুনামগঞ্জ।]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com