গত বৃহস্পতিবার (৯ জুন ২০২২ খ্রি.) একটি দৈনিকের সংবাদশিরোনাম ছিল, ‘সুনামগঞ্জ আদালতের রায়ে ৪৫ দম্পতির মুখে হাসি।’ এর নিচে ছোট হরফে লেখা হয়েছে, ‘যৌতুক নির্যাতনসহ পারিবারিক ঝামেলা নিয়ে স্বামীদের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক মামলা করেছিলেন ৪৫ নারী। গতকাল তা আপসে নিষ্পত্তি হয়।’ সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক মো. জাকির হোসেনের উদ্যোগে অন্তত কীছু (আসলে একটি জেলাকে ক্ষেত্র বিশেষ গণ্য করে ৪৫ সংখ্যাটি একেবারে কম নয়) পরিবারের পরিসরে শিশু ও অন্যান্য পরিজনের জীবনে স্বস্তির শান্তি নেমে এসেছে, আপাতত এটা স্বীকার করতেই হয়। এইরূপ কল্যাণকর বৈচারিক কাজে তিনি ইতিপূর্বেও উদ্যোগী হয়েছেন বলে অবগত হওয়া যায়। তাঁকে ও তাঁর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ।
বর্তমান বাংলাদেশ একটি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ হলেও অদূর অতীতে এই দেশ একটি গরিব দেশ ছিল। জানা কথা, যে-কোনও গরিব দেশে সাধারণ মানুষের জীবনে আর্থনীতিক অনটন লেগেই থাকে। এই অনটন থেকে সংসারে এবং দাম্পত্য জীবনে অনিবার্য অশান্তি বিরাজ করে। বলা হয়ে থাকে, ‘ক্ষুদে ও মাঝারি জোতে কৃষক নারীদের বন্ধন পাকা হয়। এতে তারা ব্যক্তিগত জোতের মধ্যে নিবিড়ভাবে বাঁধা পড়ে, দৃষ্টিভঙ্গি সংকীর্ণ হয়ে যায়, পরিণত হয় স্বামীর দাসীতে, যারা তাকে পিটিয়ে মেরে পর্যন্ত ফেলে।’ আমাদের দেশে ক্ষুদ্র জমিজোতের সঙ্গে জোতা নারীর সংখ্যার চেয়ে বলতে গেলে ভূমিহীন অবস্থায় বিপন্ন হয়ে পড়া পরিবারের অন্তর্ভুক্ত নারীর সংখ্যা কম নয়, বরং পরিসংখ্যান নিলে হয় তো সংখ্যাটা বেশিই হবে এবং বর্তমান মুক্তবাজার অর্থনীতির পরিসরে উন্নতির অনিবার্য পরিণতি ধনবৈষম্যের ফারাক ব্যাপকাকারে বৃদ্ধির কারণে সে সংখ্যা উত্তরোত্তর আরও বাড়ছে, তাতেও কোনও সন্দেহ নেই। এমতাবস্থায় অভাবগ্রস্ত সংসারে দাম্পত্য জীবনে নিরলস সুখ-শান্তি বিরাজ করার পরিবর্তে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও অশান্তি বিরাজ করবেই এবং নারীরা চিরন্তন পুরুষতান্ত্রিকতার শিকারে পরিণত হয়ে ‘সংসার ভাঙা’ নামক সমাজবাস্তবতাটিকে বাস্তব করে তোলবেই। প্রকৃতপ্রস্তাবে নারীর আর্থনীতিক মুক্তি না এলে স্বাভাবিকভাবেই এই ‘সংসার ভাঙন’-এর শিকারে পরিণত হবে অধিকাংশ পরিবার। নারী পুরুষ কারও মনে স্বস্তি বলে কীছু থাকবে না। অর্থাৎ দেশের আর্থব্যবস্থাটিকে এমন এক পর্যায়ে যেতে হবে, যেখানে নারীরা পুরুষের সঙ্গে সমান তালে ক্ষেতে-কারখানায় কাজে নামবে এবং সমান বেতন পাবে। অন্যথায় আদালতকে অবিরাম ভাঙা সংসার জোড়া লাগানোর কাজে কসরৎ করে যেতেই হবে, যদি না সংশ্লিষ্ট (এখানে আলোচ্য) বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নারীরা আর্থনীতিকভাবে স্বনির্ভরতা অর্জন না করেন।