সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
ক্ষমতাসীন দলের আলোচিত সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে দুর্নীতির দায়ে তিন বছরের কারাদন্ড এবং দশ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। স¤পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুই বছর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলায় বুধবার এই রায় এল।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাংসদ বদির উপস্থিতিতেই ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার এই রায় দেন।
মামলার অভিযোগপত্রে আসামি বদির বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৯ লাখ ৫৩ হাজার ২৭ টাকার স¤পদের তথ্য গোপনের পাশাপাশি ঘোষিত আয়ের বাইরে অতিরিক্ত স¤পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জানান, অতিরিক্ত স¤পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ থেকে আদালত সাংসদ বদিকে খালাস দিয়েছে। সাজার রায় এসেছে স¤পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায়।
জরিমানার টাকা দিতে ব্যর্থ হলে বদিকে আরও তিন মাস জেল খাটতে হবে বলে জানানো হয় রায়ে।
অন্যদিকে বদি বরাবরই দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। তার আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকা লিনা রায়ের পর বলেছেন, এই রায়ে ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি’। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন তারা।
ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য বদি রায়ের জন্য সকাল ১০টার পর আদালতে আসেন। রায়ের পর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারে।
দুদক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, “দুর্নীতিবাজ যতই প্রভাবশালী হোক, তাকে আইনের আওতায় আসতে হবে।”
এর আগে ক্ষমতাসীন দলের কোনো এমপির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় দুর্নীতির দায়ে দন্ডিত হওয়ার নজির নেই বলে ঢাকা বারের একাধিক আইনজীবী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক মো. আব্দুস সোবহান ২০১৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার রমনা থানায় সাংসদ বদীর বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়, এমপি বদি আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন স¤পদ অর্জনের পাশাপাশি অবৈধভাবে অর্জিত স¤পদের বৈধতা দেখাতে কম মূল্যে স¤পদ কিনে বেশি মূল্যে বিক্রির মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। দুদকের উপ-পরিচালক মঞ্জিল মোর্শেদ ২০১৫ সালের ৭ মে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে বদির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগপত্রে বদির ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৯৪২ টাকার অবৈধ স¤পদের তথ্য তুলে ধরা হয়। বলা হয়, তিনি দুদকের কাছে ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৫৩ হাজার ২৭ টাকার স¤পদের তথ্য গোপন করেছেন। দুদকের এ মামলায় ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর গ্রেপ্তার হয়ে তিন সপ্তাহ কারাগারে ছিলেন আব্দুর রহমান বদি। পরে তিনি হাই কোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে মুক্তি পান। ২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে দুর্নীতির এই মামলায় বদির বিচার শুরু করেন আদালত। এ মামলায় দুদকের পক্ষে মোট ১৩ জনের সাক্ষ্য শোনেন আদালত। চলতি বছর ১৯ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে বিচারক রায় ঘোষণার জন্য ২ নভেম্বর তারিখ ঠিক করে দেন।
এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আত্মপক্ষ সমর্থনে বদি দাবি করেন, তিনি ‘খেলাপি’ নন, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত কোনো স¤পদও তিনি অর্জন করেননি।
২০১৪ সালে তিন সপ্তাহ জেলে থেকে জামিনে মুক্তির পর নিজের এলাকায় ফিরে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাংবাদিকদের ‘ধন্যবাদ’ জানিয়েছিলেন আব্দুর রহমান বদি। সেসময় তিনি বলেছিলেন, মামলা করে কারাগারে পাঠানোয় এলাকায় তার ‘জনপ্রিয়তা যাচাই’ হয়েছে এবং উখিয়া-টেকনাফের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ভেদাভেদ ভুলে ‘ঐক্যবদ্ধ’ হতে পেরেছে।
“আমাকে সারাদেশে ব্যাপকভাবে পরিচয় করে দিয়েছে সাংবাদিকরা। তাই সাংবাদিকদের প্রতি স্যালুট,” বলেছিলেন বদি।