মাহমুদুর রহমান তারেক ::
গত ১৯ জুলাই একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা সড়কের কাজ শেষ করে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে চান প্রধানমন্ত্রী। প্রয়োজনে হাওর এলাকা হওয়ায় ওই সড়কের যে অংশে সড়ক করা যাচ্ছে না, সেখানে উড়াল সেতু করা যায় কি না? সে বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি চিন্তা-ভাবনা করার কথা বলেছিলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনার পর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ‘বড় ব্যয়ের’ এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করেছে। জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা সড়কের ‘গোলকপুর-সুখাইর-জয়শ্রী’ পর্যন্ত ‘উড়াল সেতু না উঁচু সড়ক নির্মাণ’ এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন এ বিভাগের বিশেষজ্ঞরা। উড়াল সেতু হলে ৫শত কোটি টাকা থেকে ৮শত কোটি খরচ হতে পারে। আর উঁচু সড়ক হলে নির্মাণ ব্যয় অনেক কমে আসবে। এছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগও জামালগঞ্জের সাচনা থেকে ধর্মপাশা পর্যন্ত আরেকটি সড়ক নির্মাণের চিন্তা-ভাবনা করছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুনামগঞ্জ – জামালগঞ্জ – নেত্রকোনা সড়ক নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ঘোষণার পর ধারণা করা হয়েছিল এই সড়কটি নির্মাণ হলে হাওর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার চিত্র বদলে যাবে। প্রায় ৬ বছর পর প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি একনেকের এক বৈঠকে এ বিষয়টি সম্পর্কে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের জানতে চান।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়, সুনামগঞ্জ থেকে জামালগঞ্জ পর্যন্ত সড়ক ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। জামালগঞ্জের মান্নানঘাট এলাকায় গিয়ে সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। ঐ এলাকার গোলকপুর-সুখাইড়-জয়শ্রী পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার নদী ও গভীর হাওর এলাকা। সেখানে স্বাভাবিক সড়ক নির্মাণ অসম্ভব। তখন প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, সেখানে উড়াল সেতু করা যায় কিনা? তিনি বিষয়টি নিয়ে ভাবার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর এলজিইডি’র পক্ষ থেকে গোলকপুর-সুখাইড়-জয়শ্রী নদী ও গভীর হাওর এলাকায় উড়াল সেতু না উঁচু সড়ক নির্মাণ করা হবে সে বিষয়ে ‘সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের’ কাজ চলেছে। ইতিমধ্যে এলজিইডি’র জাতীয় ও স্থানীয় প্রকৌশলীরা বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন।
গবেষণায় প্রাথমিকভাবে উঠে এসেছে, উড়াল সেতু ও উঁচু সড়কের নির্মাণ ব্যয়ের বিষয়টি। উড়াল সেতু নির্মাণে ব্যয় ৫শত কোটি থেকে ৮শত কোটি টাকা হতে পারে। অথবা ব্যয় আরো বাড়তে পারে। অন্যদিকে হাওরের মধ্যে দিয়ে উঁচু সড়ক নির্মাণ করা হলে ব্যয় অনেকাংশে কমে আসবে। হাওরে উঁচু সড়ক মজবুত হবে কিনা এ বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। এছাড়া সড়কটি নির্মাণ হলে হাওরের পরিবেশ, প্রতিবেশ, নদীর গতিপথ, সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কি-না তাও ভাবনায় রাখা হচ্ছে।
এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইকবাল হোসেন বলেন, প্রধামন্ত্রীর প্রতিশ্রুত সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়ক নির্মাণ শেষ হয়ে গেছে। বাকি আছে গোলকপুর থেকে সুখাইড়-জয়শ্রী হয়ে ধর্মপাশার সংযোগ সড়কটি। ইতিমধ্যে গোলকপুর-সুখাইড়-জয়শ্রীর গভীর হাওরে উড়াল সেতু নাকি উঁচু সড়ক হবে এনিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। উড়াল সেতু তৈরিতে ব্যয় হবে অনেক বেশি, উঁচু সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে কম। প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত সড়কটি নির্মাণ হলে হাওর এলাকার সড়ক ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে। সেখানকার বসবাসরত মানুষের জীবনমান অনেক উন্নত হবে।