1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ফ্যাক্স থেকে ম্যাসেঞ্জার

  • আপডেট সময় রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

মাহমুদুর রহমান তারেক ::
২০০৪ সাল, সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কেউ একজন সাংবাদিকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিবেন, আর আমি কাজ শিখবো এই আশায় ঘুরছি। এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে উজ্জ্বল ভাই, মহিম ভাইয়ের সঙ্গে পরিচিত হলাম। সেখানে আসা-যাওয়ায় পীর মিসবাহ ভাই (সদর আসনের এমপি), মাহবুব পীর ভাই, খলিল ভাই, শামীম ভাইসহ আরো দু’এক জনের সাথেও পরিচয় হয়। এছাড়া পৌর মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় প্রথম আলো বন্ধুসভার অফিসে তখন অনেকেই যাতায়াত করতেন। নূর হোসেন (দিলু) নামের একটা ছেলে সেখানে কাজ করতো। কাজ শেখার ইচ্ছা থেকেই আমিও তার সঙ্গে খাতির জমিয়ে তুললাম। কখন সাংবাদিকরা বাসা থেকে বের হন, কখন বাসায় যান। তাদের কাজের সময় কখন… এইসব। তখনকার তারকা সাংবাদিক উজ্জ্বল মেহেদী ভাই সম্পর্কে বেশি খোঁজ নিলাম। উজ্জ্বল ভাই সাপ্তাহিক সুনামকণ্ঠ সম্পাদক ও প্রকাশক বিজন সেন রায় (বিজন দা)-এর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। পৌর মার্কেটের অফিসে মাস দেড়েক যাওয়া-আসার পর অনেকের সঙ্গে পরিচয় হল। পরিচয় হলেও অনেকেই পাত্তা দিতে চাইতো না। সেই সময় অল্প বয়সের সাংবাদিক বলতে, আমি, মিঠু ভাই, রাসেল ভাই, আমিনুল ভাই, রফিক ভাই (বর্তমানে এএসপি) ছিলাম। আরো দু’একজন থাকলেও তাদের নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।
নূরকে প্রায় সবাই নিউজ লিখে ফ্যাক্স করার জন্য দোকানে পাঠাতেন। ফ্যাক্স কীভাবে পাঠানো হয় এ বিষয়টি জানতে তার সঙ্গে মাঝেমধ্যে আমারও যাওয়া হত। নূর পৌর মার্কেটের নিচে রব্বানীর ভাইয়ের দোকান অথবা পুরাতন বাসস্টেশনে আরেকটি দোকানে ফ্যাক্স পাঠানোর জন্য যেত। প্রতি মিনিট ফ্যাক্স ১০ টাকা। অনেক সময় দেখা যেত ফ্যাক্স না গেলেও টাকা দিতে হত। সাংবাদিকতায় তখন আমার তেমন কোন কাজ না থাকায় ফ্যাক্স পাঠানো দেখেই সাধ মিটতো।
২০০৫ সালের জানুয়ারি মাস। হঠাৎ দোয়ারাবাজারের টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ডে আগুন। ঢাকা থেকে অনেক সাংবাদিক আসলেন টেংরাটিলায়। যাদের কথা এখনো মনে আছেন তারা হলেন তুষার আব্দুল্লাহ ও মোস্তফা ফিরোজ। সঙ্গে স্থানীয় সাংবাদিকদের অনেক ব্যস্ততা। একদিন বিকেলে উজ্জ্বল ভাই বললেন, ৩টি ছবি শাহাব উদ্দিন ভাইয়ের দোকানে দিয়ে আসো। আমি শাহাব উদ্দিন ভাইয়ের দোকানে দিয়ে আসলাম। দেখলাম ছবিগুলো তিনি স্ক্যান করছেন। আর বললেন, উজ্জ্বলকে বলবে ৩শ’ টাকা হয়েছে। মনে হল পরের দিন হয়তো ছবি পত্রিকায় প্রকাশ হবে। আমি বুঝতে পারছিলাম না কীভাবে এই ছবি প্রকাশিত হল। পরে উজ্জ্বল ভাই বললেন, ই-মেইলের মাধ্যমে ছবি পাঠানো হয়েছে। ওইদিন সংবাদ পাঠানোর নতুন পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হলাম। এ বছর ঢাকা থেকে একটি পত্রিকা বের হত নাম মনে নাই। তাতে, আমি কর্তৃপক্ষকে না বলেই কয়েকদিন ফ্যাক্স পাঠালাম। পরের সংখ্যাগুলোতে দেখলাম আমার নামে নিউজ ছাপা হয়েছে। বেশ কয়েকদিন এভাবে নিউজ পাঠালাম। এর মধ্যে প্রায় দুই বছর সাপ্তাহিক সুনামকণ্ঠে কাজ করলাম। ২০০৭ সালে বৈশাখী টিভিতে আমার নিয়োগ হয়। তখন ফ্যাক্সের মাধ্যমে নিউজ আর জেলায় মন্ত্রীর অনুষ্ঠান অথবা জরুরি কোন ইভেন্ট হলে তিন বা চার জন টিভি সাংবাদিক মিলে হাসান ভাইয়ের (হাসান ভাই ক্যামেরা ভাড়া দিতেন) সাথে কনট্রাক্ট করা হত। প্রতি ক্যাসেট আবার ১শ’ ৫০ টাকা করে কিনতে হত। ক্যাসেট কুরিয়ারে পাঠাতে হত। একদিন পর তা প্রচার হত। তবে মাঝে মধ্যে বিমানযোগেও পাঠানো হত ক্যাসেট। পরে অফিসের রানার বিমানবন্দন থেকে ক্যাসেট নিয়ে যেত। আরেকটা বিষয়, পকেটে তেমন টাকা না থাকায় আমার একটা বাইসাইকেলই ভরসা ছিল চলাচলে।
পরবর্তীতে আসলো ই-মেইলে নিউজ পাঠানোর যুগ। টেলিভিশনের সঙ্গে পত্রিকা ও অনলাইনেও কাজ করতাম। তবে মাঝে মধ্যে তখনও ফ্যাক্সে নিউজ পাঠাতাম। নিজের কম্পিউটার না থাকায় পৌর মার্কেটের প্রিয়জন কম্পিউটার থেকে নিউজ পাঠাতাম। পরে মাজহার ভাইয়ের দোকান ছিল ভরসা। ঢাকা অফিসে নিউজ পাঠাতাম ঠিকই তবে বিধান দা, মাজহার ভাইকে টাকা কম দিতাম। এক সময়ে মাজহার ভাইয়ের দোকান থেকে বিনামূল্যেই ই-মেইল করতাম। টেলিভিশনে কয়েক সেকেন্ডের ফুটেজ অনেক কষ্ট করে মেইলে যুক্ত করে পাঠাতাম। ২০১০ সালে বৈশাখী টেলিভিশনে আমার চাকরি চলে যায়। মালিকপক্ষের কাছে আমার ১৮ মাসের টাকা পাওনা ছিল। হঠাৎ তারা ঢাকা যেতে বলে। ঢাকা যাওয়ার পর নির্দেশ দেয়া হয়, পদত্যাগপত্র জমা দেন, বকেয়া টাকা দেয়া হবে। কোন উপায় না দেখে পদত্যাগপত্র দিলাম। কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে তারা ১৮ মাসের টাকা দিয়ে দিল। টাকা পেয়ে কয়েকদিন পরেই কম্পিউটার কিনে ফেলি। সাথে মডেমও। মনে মনে ভাবলাম কষ্টের দিন ঝুঝি শেষ হল। পরে দেশ টিভিতে বছর খানেক সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করি। ২০১২ সালে ইনডিপেনডেন্ট টিভিতে কাজ করার সুযোগ আসে। ঢাকার অফিস দেখেই কাজ করা লোভ লেগে যায়। ২০১৩ সালে নিয়োগ হয় আমার এই চ্যানেলে। নিয়োগ পাওয়ার পর টেলিভিশন সাংবাদিকতা সম্পর্কে ধারণা পাল্টে যায় আমার। এর আগে সম্প্রচারে আসা সময় টিভি সাধারণ মানুষকে সংবাদ চ্যানেল সম্পর্কে পরিচিত করে তোলে। শুধু ‘উভ নিউজ’ (সংক্ষিপ্ত সংবাদ) না করে অফিস থেকে বলা হল স্টোরিতে (প্যাকেজ নিউজ) জোর দেয়ার জন্য। প্রথমদিকে মাসে ৩-৪টা স্টোরি করতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। নিজের ক্যামেরা না থাকায় কষ্ট আরো বেড়ে গিয়েছিল। তখন সহকর্মীদের সহযোগিতা নিতে হয়েছে। ছয় মাসের বেতন দিয়েই আমি ক্যামেরা কিনে ফেলি। এর মাস চারেক পর ল্যাপটপ কিনলাম। টেলিভিশনের প্রযুক্তিতে তখন যোগ হয় এফটিপি, ফুটেজ পাঠানোর জন্য। এছাড়া ছোট সংবাদ ‘টিকার নিউজ’র জন্য আলাদা ফোন নাম্বার অফিস থেকে দেয়া হয়। বলা যায়, নিউজ পাঠানোর সব প্রযুক্তি আমার হাতের মুঠোয়।
২০১৫ সালে আগস্ট মাসে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর চ্যানেল যমুনা টেলিভিশনে যোগ দেই। চোখ ধাঁধানো সব প্রযুক্তি দেখে আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই। দেশে প্রথমবারের মত এই চ্যানেল মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে জেলা পর্যায় থেকে সরাসরি সম্প্রচার শুরু করে। আমার মোবাইলে অ্যাপস থাকলেও ‘কণ্ঠ ভাল নয়’ এই ভয়ে সরাসরি সম্প্রচারে দাঁড়াইনি। অবশ্য জেলা থেকে চ্যানেল টুয়েটিফোরের প্রতিনিধি মাইদুল রাসেল ও ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির জাকির হোসেন প্রতিনিয়ত মোবাইলে সরাসরি সম্প্রচারে যুক্ত হয়েছেন। স্কাইপিতে একাত্তর টিভিতে সরাসরি কথা বলেছেন শামস শামীম। এছাড়া এনটিভির দেওয়ান গিয়াস, চ্যানেল নাইনের এআর জুয়েল লাইভ দিয়েছেন। গত জুলাই মাসে ভয়ের মধ্যেই ক্যামেরার সামনে সরাসরি সম্প্রচারে দাঁড়িয়ে যাই। সম্প্রতি অফিসে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ফুটেজ, স্টিল ছবি, নিউজ পাঠানোর সুযোগ আসে। এছাড়া আগামী মাস কয়েকের মধ্যেই জেলা পর্যায়ে ল্যাপটপ থেকেই ডিএমএনজি দিয়ে সরাসরি সম্প্রচারের উদ্যোগ নিচ্ছে টেলিভিশন স্টেশনগুলো। এছাড়া জেলা টেলিভিশন সাংবাদিকরা প্রায় সবাই ভালমানের ক্যামেরা নিয়ে কাজ করছেন। ধারণা করা যায়, ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকটি জেলায় ভাল মানের চ্যানেলগুলো আঞ্চলিক অফিস স্থাপন করবে।
অন্যদিকে টেলিভিশনের সর্বশেষ সংবাদ যুক্ত করার কারণে কাগজে দৈনিকগুলো অবস্থান পরিবর্তন করেছে। প্রতিটি পত্রিকা অনলাইন ভার্সনে জোর দিয়েছে। যখনই ঘটনা তখনই নিউজ পাঠানোর জন্য প্রতিনিধিদের চাপ দিচ্ছে মিডিয়াগুলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে, পত্রিকাগুলো নিজেদের স্পন্সর পেজের মাধ্যমে নিউজগুলো শেয়ার দিচ্ছে। অনলাইন ভার্সনে প্রথমআলো, বিডিনিউজ২৪ডটকম ভিডিও কনটেন্ট যোগ করেছে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়েও তৈরি হয়েছে অনেকগুলো অনলাইন পত্রিকা। বাড়ছে সংবাদকর্মীর সংখ্যা। তাছাড়া সাধারণ মানুষ অনলাইন পোর্টালের পাশাপাশি স্থানীয় পত্রিকায় নজর বেশি দিচ্ছেন। তার একটাই কারণ স্থানীয় তৃণমূলের সংবাদগুলো এই পত্রিকাগুলোতে উঠে আসছে। পাঠক ঘুম থেকে উঠেই হাতে পাচ্ছেন এসব পত্রিকা। গণমাধ্যমের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে এটা দ্বিধাহীনভাবেই বলা যায়।
[লেখক : প্ল্যানিং এডিটর, দৈনিক সুনামকণ্ঠ]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com