শহীদনূর আহমেদ ::
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরের কৃষক সাইদুর রহমান। চলতি বোরো মওসুমে ৭ কেয়ার জমি চাষ করে ধান কাটা নিয়ে বিপাকে ছিলেন এই চাষী। একদিকে হাওরের বৈরী আবহাওয়া অন্যদিকে শ্রমিক সংকটে ফসলের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তার শেষ ছিলনা তাঁর। কম্বাইন হার্ভেস্টার নামের ‘যাদুর মেশিন’ কৃষক সাইদুরের চিন্তার সাগরে স্বস্তি ফিরিয়ে দিয়েছে। কম্বাইন হার্ভেস্টার মেশিনে একদিনের মধ্যে ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন সাইদুর রহমান।
সাইদুরের মতো জেলার লক্ষাধিক কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে অত্যাধুনিক এই কৃষিযন্ত্রটি। এর সুফল পাচ্ছেন তারা।
হাওরে হাওরে এখন সোনালী ধানের সমারোহ। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে যেদিকে চোখ যায় শুধু পাকা ধান। মাঠে মাঠে দুলছে সোনালী ধান। পাকা ধানের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। ইতোমধ্যে জেলার প্রায় হাওরের অর্ধেকের বেশির ধান পেকে যাওয়ায় ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েন কয়েক লাখ কৃষক। হাওরের শ্রমিক সংকট, পাহাড়ি ঢল, জলাবদ্ধতা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে দ্রুত ধান ঘরে তোলার প্রয়োজনে ‘কম্বাইন হারভেস্টার’ মেশিন কৃষকদের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে। বর্তমানে জেলার ১২ উপজেলার বিভিন্ন হাওরে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে চলছে ধান কাটার কাজ। অল্প সময়ে মাঠের ধান কর্তন ও ঝাড়াই-মাড়াইসহ ফসল বিপণনের ৮০ ভাগ করছে এই কম্বাইন হার্ভেস্টার। যেখানে একজন কৃষকের জমি থেকে ধানকাটা, মাড়াইসহ অন্যান্য কাজে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয় সেখানে স্বল্প টাকায় ও শারীরিক পরিশ্রম ছাড়া দ্রুত সময়ে ধান কাটতে পেরে খুশি কৃষকরা।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা খাই হাওরের কৃষক সুহেল মিয়া বলেন, আগে ধান কাটতে অনেক কষ্ট করতে হতো। শ্রমিকের অপেক্ষায় ধান নষ্ট হয়ে যেতো। বন্যা ও শিলাবৃষ্টির ভয়তো আছেই। এখন ধানকাটার মেশিন দিয়ে দ্রুত ধান ঘরে তোলা যায়। এটি যেনো যাদুর মেশিন।
কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের এক চালক মনিরুজ্জামান মনির বলেন, আমি হার্ভেস্টার মেশিন দিয়ে দিনেরাতে ধান কাটছি। দিনেরাতে মিলে ৫০-৭০ কেয়ার জমির ধান কাটা যাচ্ছে। কৃষক হার্ভেস্টার দিয়ে ধান কাটতে পেরে খুশি। এই সুবিধা আগে ছিলনা। এই মেশিণের কারণে কৃষকের ভাগ্য ফিরেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলার ১২ উপজেলায় ৭০% ভর্তুকি মূল্যে সাড়ে ৮০০ হার্ভেস্টার মেশিন বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। কৃষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই করে এই মেশিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম।
এবার সুনামগঞ্জের ১৩৭টি হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। আবাদকৃত জমি থেকে ১৩ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।