স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ জেলার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল আয়োজিত ‘গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের উদ্যোগে ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত কর্মশালা প্রধান অতিথি হিসাবে উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম।
১ম অধিবেশনে ‘সাংবাদিকতার নীতিমালা এবং প্রেস কাউন্সিল প্রণীত আচরণবিধি’র উপর বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার। ২য় অধিবেশনে ‘প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট ১৯৭৪ এর আলোকে সাংবাদিকবৃন্দের করণীয়’ আলোকপাত করেন প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম।
কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা তথ্য অফিসার মোহাম্মদ আব্দুছ সাত্তার।
কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন দৈনিক সুনামগঞ্জের ডাক স¤পাদক ও প্রকাশক অধ্যক্ষ শেরগুল আহমদ, সুনামগঞ্জের খবরের স¤পাদক ও প্রকাশক পংকজ দে, সাংবাদিক আল হেলাল, অ্যাড. খলিল রহমান, শামস শামীম, কুলেন্দু শেখর দাস, মাহবুবুর রহমান পীর, হিমাদ্রী শেখর ভদ্র, সেলিম আহমদ, দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী, শহীদ নুর আহমদ, আব্দুস শহীদ প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম বলেন, হলুদ সাংবাদিকতা হলো সত্য-মিথ্যা সংমিশ্রণে সংবাদ প্রকাশ করা। সত্যকে সত্য না বলা, মিথ্যাকে মিথ্যা না বলা। অনলাইন সাংবাদিকতা হলুদ সাংবাদিকতা সৃষ্টির একটি মাধ্যম।
তিনি বলেন, কতিপয় নামধারী সাংবাদিকেরা মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করে উপার্জন করেন। ঈদের সময় অফিসে অফিসে গিয়ে বলেন, ঈদ এসেছে। তখন অফিস থেকে কিছু ঈদ বোনাস পান। কিছু সাংবাদিক নিজের ওজন বাড়াতে এবং ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলে একাধিক সাংবাদিক সংগঠন গঠন করে সভাপতি অথবা সাধারণ স¤পাদক পদ লাভ করেন। এসব কোন্দল বা বিভাজন নিরসন করতে হবে।
প্রধান অতিথি বলেন, সাংবাদিকতা হলো একটি চাকুরির মতো। তিনি শুধু সাংবাদিকতা পেশা নিয়ে কাজ করতে হবে। অন্যান্য পেশায় যুক্ত থাকলে সঠিক সাংবাদিকতা করা যায় না। সঠিক দায়িত্ব পালনও করা যায় না।
তিনি বলেন, ৫ বছরের আগের সাংবাদিকদের ছাড়া এখন থেকে সাংবাদিকতায় গ্র্যাজুয়েশন লাগবে। সাংবাদিকতা করতে যা যা দরকার তা আগে থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধে সকলকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার বলেন, অনেকে মনে করেন সাংবাদিকতার আইডি কার্ড গলায় বা কোমরে ঝুলিয়ে দিলেই সাংবাদিক। কার্ড ঝুলিয়ে সাংবাদিকতা আসল সাংবাদিকতা নয়। আইডি কার্ড হলেই সাংবাদিকতার পর্ব শেষ নয়। সাংবাদিকতার নীতিমালা অনুযায়ী যথাযথভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করার পর হবেন একজন সাংবাদিক।
তিনি বলেন, সাংবাদিকতার নামে চাঁদাবাজি করা, হলুদ সাংবাদিকতা করা, হলুদ সাংবাদিকতা করায় প্রকৃত সাংবাদিকতাকে কলংকিত করা। যারা সাংবাদিকতার নামে চাঁদাবাজি করে, হলুদ সাংবাদিকতা করে, তারা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এসব সাংবাদিকদের ছাড় দেয়া হবে না। তাদেরকে আইনের হাতে তোলে দেন।
তিনি বলেন, গ্রাম-গঞ্জে টিভি সাংবাদিকতার নামে হাতুড়ে সাংবাদিকতা করছেন। তারা হাতুড়ে সাংবাদিক নামে পরিচিত। এই হাতুড়ে সাংবাদিকের সংখ্যা এখন বেড়ে গেছে। কেউ আবার রঙ রস করে সংঘাতিক বলে আখ্যা দেন। এটা হচ্ছে কলংকিত নামধারী সাংবাদিকদের কারণে।
তিনি আরও বলেন, একজন সাংবাদিক সমাজের দর্পণ। আলো ছড়ায়। কিন্তু প্রদীপের নিচের মতো নিজের নিচে অন্ধকার থাকে। এটা কেউ আলোকিত করতে পারে না।
কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করেন অতিথিবৃন্দ।