জামালগঞ্জ প্রতিনিধি ::
জামালগঞ্জের সদ্যবিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ রানার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পাঁচ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান। শুক্রবার সকালে জামালগঞ্জ উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এসোসিয়েশনের জামালগঞ্জ সভাপতি ও ফেনারবাঁক ইউপি চেয়ারম্যান কাজল চন্দ্র তালুকদার। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, সম্প্রতি মার্ক মিডিয়া নামে একটি ফেসবুক পেইজ থেকে একটি অডিও বার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে মোবাইলে অপর প্রান্তের ব্যক্তির সাথে ইউএনও মাসুদ রানাকে বলতে শুনা যায়, আমি নাকি সিলেট চা বাগানে চাকরি করি, এবং আমি নাকি আমার ইউনিয়নে নির্মিত শেখ হাসিনা পল্লীর জন্য ভূমিহীনদের সনদ প্রদান করিনি। এছাড়াও নিয়মিত অফিস করিনা। অথচ তিনি নিজেই গত এপ্রিলের ২ তারিখ জেলা প্রশাসক বরাবর শেখ হাসিনা পল্লী সংক্রান্ত বিষয়ে আমি নিয়মিত অফিস করি ও যাচাই-বাছাই করে শেখ হাসিনা পল্লীর জন্য ভূমিহীনদের সনদ দিয়েছি বলে একটি প্রত্যয়ন প্রদান করেছেন। একজন ইউএনও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে আসীন হয়ে একেক সময় একেক কথা বলে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানো চরম অন্যায় ও অপরাধ। এই ধরনের বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
সাচনা বাজার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মাসুক মিয়া তার বক্তব্যে বলেন, আমার উপর অর্পিত সরকারের দেয়া দায়িত্ব শতভাগ পালন করার চেষ্টা করি। আমার ইউনিয়নে সরকারিভাবে একটি গুচ্ছগ্রাম অনুমোদন হয়েছে। যার বরাদ্দ ১৬০ টন চাল। আমি এই প্রকল্পের মাটি ফেলার নব্বই শতাংশ কাজ শেষ করে ফেলেছি। অথচ একটি টাকাও উত্তোলন করিনি। কিন্তু তিনি আমার বিরুদ্ধে ৮০ লাখ টাকার একটি অভিযোগ দিয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। বরং তিনি এই কাজ তার ভগ্নিপতি দিয়ে করাতে চেয়েছিল, আমি দেইনি বলেই তিনি আমার বিরুদ্ধে এই ধরনের মিথ্যা কথা তুলেছে। এতে আমার সম্মানহানি হয়েছে। আমি এটার তীব্র নিন্দা ও বিচার চাই।
ভিমখালি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান তালুকদার তার বক্তব্যে বলেন, ইউএনও মাসুদ রানা আমাদের বিরুদ্ধে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা স¤পূর্ণ মিথ্যা। তিনি জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ রাস্তার সংস্কারকাজ আমাদের ছয় ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ থেকে টাকা নিয়ে সাবেক প্রকৌশলী আঃ মালেককে নিয়ে প্রকল্প তৈরি করে তৃতীয় পক্ষ দিয়ে নি¤œমানের কাজ করেছেন এবং অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুব্রত সামন্ত সরকার বলেন, সম্প্রতি জামালগঞ্জ উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে যে অডিও বার্তাটি প্রকাশ হয়েছে, তাতে সদ্য বিদায়ী ইউএনও মাসুদ রানা কর্তৃক যে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেছেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এছাড়াও বেহেলী বাজারের উত্তর পাড়ে নির্মিত নতুন বাজারটির ব্যাপারে তিনি যা বলেছেন তা স¤পূর্ণ মিথ্যা। আমি শুধু প্রকৃত ব্যবসায়ীদেরকে বাজার ভিট বন্দোবস্ত দিতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে।
জামালগঞ্জ উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান মো. হানিফ মিয়া বলেন, আমার ইউনিয়নের কামিনীপুর গ্রামে একটি গুচ্ছগ্রাম অনুমোদন হয়েছে এবং সেখানে ১০৫ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেখানে মাটি ফেলতে হবে ৫ লাখ স্কয়ার ফুট। তিনি নিজে এই প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেছেন। আমি নব্বই হাজার ফুট মাটি ফেলার পর তিনি আমাকে বললেন তার ভগ্নিপতিকে প্রতি ফুটে ২ টাকা করে কমিশন দিতে হবে। আমি দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি কাজ বন্ধ করে রাখেন।
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম জিলানী আফিন্দী রাজু বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, একজন ইউএনও উপজেলার সকল জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে এভাবে কথা বলতে পারেন না। যা সম্পূর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।