1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৬:৪৩ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ব্যক্তিগত লোভের আগুনে পুড়েছে বেইলি রোড : পলাশ আহসান

  • আপডেট সময় সোমবার, ৪ মার্চ, ২০২৪

গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো হাহাকার। বেইলি রোডের আগুনে পুড়ে ৪৬ জনের মৃত্যুতে প্রায় সবাই শোকে মুহ্যমান, প্রতিবাদে উত্তাল। কিন্তু কেন এই অনিয়ম? কেন বিস্ফোরণ? কেন কর্তৃপক্ষ সিঁড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার রাখলো? কেন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে হোটেল বানানো হলো? এরকম হাজারো প্রশ্ন আজ মানুষের সামনে। সবাই খুব অবাক হওয়ার প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। যেন এরকম ঘটনা জীবনে প্রথম দেখলেন। আমার মনে হচ্ছে, সবাই অবাক হয়ে দায়িত্ব পালন শেষ করছেন।
অবশ্য অবাক আমিও। তবে কারণ ভিন্ন। যদি সব কিছু মিলিয়ে বলি, তাহলে বলতে হবে মানুষের এত অবাক হওয়া দেখেই আমি অবাক। এখন অবাক বন্ধুরা যদি বলেন, আমার অবাক হওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। আমি খুব যে প্রতিবাদ করবো তা নয়। কারণ কোন অনিয়ম আজকাল আর আমাকে অবাক করতে পারে না। কেউ একজন খুব হন্তদন্ত হয়ে এসে বললেন, আগুনে পুড়ে… জন মারা গেগছেন। অথবা সড়ক দুর্ঘটনায়… জন নিহত। আমার প্রতিক্রিয়া হয় “ও আচ্ছা” বড় জোর খোঁজ নেই নিহতের তালিকায় পরিচিত কেউ আছে কী না। থাকলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি, এই তো..
“মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই” এই বিষয়টাতো অনেক আগেই নিশ্চিত হয়েছে। কেন নেই এনিয়ে হাজারটা বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু নেই যে এনিয়ে কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়। দিন দিন অনিশ্চিত হচ্ছে জীবন। রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরছেন, আপনার মাথায় ইট পড়তে পারে। রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে বসে চা পান করছেন, আপনার ওপর একটি চলন্ত ট্রাক এসে আছড়ে পড়তে পারে। আপনি রিকশার করে বাসায় ফিরছেন, মুহূর্তে রাশি রাশি আগুন আপনাকে গ্রাস করতে পারে। কত কী যে হতে পারে সে তালিকা অনেক দীর্ঘ।
আজকাল প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর কারণ বিশ্লেষণ করলেও দেখা যায় এর বেশিরভাগই এখন আর শুধু প্রাকৃতিক নেই। প্রায় প্রত্যেকটা দুর্যোগের পেছনে মনুষ্য প্রভাবকের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বেইলি রোডের সাম্প্রতিক আগুনসহ আমার দেখা অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই, আমাদের দৈনন্দিন যত দুর্ঘটনা এর বেশিরভাগের পেছনে মানুষের হাত রয়েছে। মানুষের জীবনের ঝুঁকি মানুষই ডেকে আনছে। ডেকে আনছে না বলে বলা ভাল মানুষই মানুষ মারছে। আবার যদি বিপরীত দিক থেকে সত্যের কাছে আসি, তাহলে বলতে হবে মানুষ নিজেই নিজের প্রাণ রক্ষা করছে না। শুধু প্রাণই বা বলি কেন? মানুষই ধ্বংস করছে, নিজের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতির পুরোটাই।
পাঠক আমার কথায় আরেক দফা অবাক হলেন? আচ্ছা হোন আপাতত। বিস্তারিত ব্যাখ্যায় একটু পরে আসছি। তার আগে ভাবুনতো এই বেইলি রোডের ভবনে কেন সরু সিঁড়ি? কেন সিঁড়িজুড়ে সিলিন্ডার? বারবার নোটিশ দেয়ার পরেও কেন ভবন নিরাপদ হলো না? তারা যে কথা শুনলো না, সেটা কেউ কেন দেখলো না? কেন ভবনে আগুন লাগলে বের হওয়ার জরুরি পথ নেই?
প্রতিটি প্রশ্নের ভিন্ন ভিন্ন উত্তর আছে। আমি কিন্তু সবগুলো বিশৃঙ্খলার একটি কারণ খুঁজে পাই। যে কারণটি না ঘটলে পুরো দুর্ঘটনাটিই হতো না। সেটি হচ্ছে মানুষের লোভ। অর্থাৎ স্বাভাবিক যে পাওনা তার চেয়ে জোর করে বেশি আদায়ের ইচ্ছা।
আমার কথা মিলিয়ে নিন। ভবন মালিক ছোট জায়গায় বেশি প্রতিষ্ঠান বানিয়ে ভাড়া আদায়ের লোভ করেছে। ছোট ঘরে বেশি মানুষ ডেকে লাভ করার লোভ করেছে রেস্টুরেন্ট মালিক। তাকে দেয়া নোটিশ অবহেলা করার শাস্তি না দিয়ে ব্যবসায়ী এবং ভবন মালিকের কাছ থেকে সুবিধা নেয়ার লোভ করেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মোটামুটি পুরো দুঘর্টনাটাই একটা লোভ বাস্তবায়নের সমন্বয়। বেইলি রোডের ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। মানুষের লোভ চর্চার যে গতি, আমারতো মনে হয় সেই তুলনায় দুর্ঘটনা অনেক কম। মানুষই বিপজ্জনক করে রেখেছে তার চারপাশ। প্রতিদিন এরকম দু-একটি দুর্ঘটনা হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
বেইলি রোডের ঘটনাটা আসলে দীর্ঘদিনের অনিয়ম প্রবণ বাংলাদেশ একটি খ- চিত্র মাত্র। এই দায় সরকার চাপানো সহজ হয়তো। সেই সহজ কাজটি আমরা করছিও ইনিয়ে বিনিয়ে। কিন্তু ভাবুনতো চাইলে কী দ্রুত একটি জনগোষ্ঠীর চিন্তার ত্রুটি সারাতে পারবে কেউ? কীভাবে মানুষ সভ্য চিন্তা করতে পারবে সেটা নিয় আলোচনা হতে পারে। কিন্তু এত মরদেহ সামনে নিয়ে সেই গুরুগম্ভীর আলোচনায় যাওয়াটা কতটুকু সমীচিন সেটাও ভাববার বিষয়। বিপদ আরও আছে, ধরুণ আপনি মাথা ঠা-া করে ভাবতে চান “কেন বেইলি রোডের আগুন?” দেখবেন মাথাঠা-ার আগেই কাছাকাছি আরেকটি একই রকম ঘটনা এসে হাজির।
অনেকের মনে হতে পারে আমি বুঝি ধান ভানতে শিবের গীত ধরেছি। বিষয়টি মোটেও তা নয়। চিন্তা করে দেখুনতো আমারা কী লোভের চর্চা করতে গিয়ে আমাদের মানবিক বোধ হারিয়ে ফেলছি না? কারণ আমাদের তো লক্ষ্য যে কোন দামে পকেটে প্রচুর টাকা আসতে হবে। তাই কেউ ব্যবসা করে আবার কেউ চাকরির ছল করে অন্যের অর্থ ছিনিয়ে নিচ্ছি। আমরা যারা ছিনতাই করছি কিংবা ছিনতাই হচ্ছি প্রত্যেকেই বিষয়গুলো জানি। তার চেয়ে বড় কথা আমরা প্রায় সবাই কোন না ভাবে লোভীর তালিকায় ঢুকে পড়ছি। এটা ব্যক্তির মনস্তত্ত্ব। এখানে মানুষ নিজেই নিজেকে না আটকালে কোন আইন বা কর্তৃপক্ষ দিয়ে তার চিন্তা বদলে দেয়া প্রায় অসম্ভব।
এই লোভই যত অশান্তির গোড়া। আগুন ছাড়া আর যত দুর্ঘটনা আছে, এর কোনটিই আগুনের অশান্তির চেয়ে কম নয়। কিন্তু আমরা ক্রমাগত বিচার বিবেচনা না করে শুধু নিজের চাহিদা বাড়াচ্ছি। বিষয়টা অনেকটা এরকম যে, সব আমাকে পেতে হবে। আমি যোগ্য কী যোগ্য না সেটা ভাবার সময় নেই। সামনে শুধু দৌড়। সব কিছুতেই অশ্লীল অসম প্রতিযোগিতা। তা সে রাস্তায় পরিবহন চালানো হোক, কিংবা বইমেলায় বই প্রকাশ করা হোক। সবকিছু আমার হতে হবে। তা সে তদবির করে হোক, সোস্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়ে হোক, কিম্বা গ্রেনেড ফাটিয়ে হোক। মানুষ বা প্রকৃতি বাঁচবে না মরবে, কী হবে ভবিষ্যতে তা ভাবার সময় নেই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং নিয়মিত গণমাধ্যমে সবখানেই বেইলি রোডের আগুন এখনও সরব। নানা তথ্য আসছে। যে কোন দুর্ঘটনার পর এমনই আসে। এরপর তদন্ত কমিটি হয়। তারপর আবার কাছাকাছি রকম আরেকটি ঘটনা চলে আসে। আমরা সবাই সেটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। বেইলি রোডের ক্ষেত্রেও তাই হবে। দুর্ঘটনায় পড়া ভবনের মালিক পরে আরও ভবন বানাবেন, রেস্টুরেন্ট বানাবেন। অতঃপর আবারও একটি আগুন লাগবে। এভাবেই চলতে থাকবে। আমরাও অপেক্ষা করবো আরেক বেইলি রোড অথবা চুড়িহাট্টার। কিন্তু লোভ কমাবো না কিম্বা লোভীদের থেকে সতর্ক হবো না।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com