সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা সুনামগঞ্জে না হয়ে হচ্ছে গাজীপুরে। এই নিয়ে জেলার সর্বত্র তোলপাড় চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে লেখালেখি হয়েছে এবং হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে যে, সুনামগঞ্জের বাইরে গাজীপুরে নিয়োগ পরীক্ষার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে। একটি পত্রিকার সম্পাদকীয়র শিরোনাম করা হয়েছে, “সুবিপ্রবি’র নিয়োগ পরীক্ষা ॥ গাজিপুরে এতো উৎসাহ কেন?” এবং মন্তব্য কারা হয়েছে, সুনামগঞ্জের সচেতন মহল বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যাদি নিয়ে সমালোচনামুখর হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিভিন্ন পদে কর্মচারি নিয়োগের জন্য সুনামগঞ্জের পরিবর্তে গাজিপুরে লিখিত পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে প্রতিবাদমুখর হয়েছিলেন সুনামগঞ্জবাসী। প্রতিবাদের মুখে কর্তৃপক্ষ নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা সুনামগঞ্জে গ্রহণ করেছিলেন। এবার একই নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা সেই গাজিপুরেই গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় আবারও প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেন সুনামগঞ্জবাসী। প্রতিবাদকারীরা গাজিপুরে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার পিছনে দুরভিসন্ধি থাকার সন্দেহ পোষণ করছেন। আমরা সঙ্গত কারণেই পত্রিকাটির মন্তব্যকে একবারে অযৌক্তিক কীছু বলে ধরে নিতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গাজীপুর প্রীতির পেছনে যেমন কোনও একটা কারণ থাকতেই পারে, তেমনি ঘরের কাজ বাইরে সারার পেছনের কারণ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জাগতেই পারে। এই প্রশ্নের নিরসন বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কীভাবে করবেন? এর পেছনে যদি কোনও প্রাতিস্বিক স্বার্থসংক্রান্ত উদ্দেশ্য লগ্ন থেকে শিক্ষাক্ষেত্রের পবিত্রতাকে কলঙ্কিত করে, তা হলে সে-কলঙ্কের তিলক পরেই বিশ^বিদ্যালয়টি অশুভ এক পরিণতির পথে এগিয়ে যাবে। কারও কীছু করার নেই? একজনের অদম্য স্বৈরাচারী প্রভুত্বের পদতলে বাস করবে দেশের মানুষ ও রাষ্ট্রমালিক জনগণ? লক্ষ মানুষের আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া অপকর্মের হোতা কী করে আইনের আওতার বাইরে থেকে সমাজের ঊর্ধ্বে উঠে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়ে একটি বিশ^বিদ্যালয়কে প্রাতিস্বিক স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে?
এবংবিধ প্রশ্ন উঠছে বিদগ্ধমহলের মনে এবং ক্রমে বুঝা যাচ্ছে যে, একটি বিশ^বিদ্যালয়ের কাজ শুরু করার শুরুতেই কর্মপদ্ধতিতে স্বৈরাচারী ও নিয়মবহির্ভূত আচরণের আধিপত্য বিস্তৃত হয়ে আবহাওয়া বিষিয়ে তোলার উপক্রম করছে। একদিন সে-বিষাক্ত আবহাওয়ায় আমাদের সন্ততিরা বিদ্যার্জনের বাসনায় উপনীত হবে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কেবল বলতে চাই, শুরুতেই শুরু হওয়া অপকর্ম প্রতিহত করুন এবং বিশ^বিদ্যালয়ের ভবিষ্যতকে অশুভের করাল থাবা থেকে রক্ষার্থে সচেষ্ট হোন। বিশ্ববিদ্যালয়কে বাণিজ্যবন্দরে পর্যবসিত করবেন না। সর্বাবস্থায় একটি স্বচ্ছ ও মানসম্মত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগপ্রাপ্তিই সকলের কাম্য। বিশ^বিদ্যালয়ের মতো একটি মর্যাদাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের কোনও কাজে অহেতুক সন্দেহ তৈরির অবকাশকে উৎসাহিত করা কোনওভাবেই সঙ্গত নয়।