‘রাতের আঁধারে লুট হচ্ছে সুরমার বালু : ঝুঁকিতে আব্দুজ জহুর সেতু’ এটি একটি সংবাদশিরোনাম। কোনও এক বিদগ্ধজনের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, ‘না, কীছুতেই নেওয়া যায় না। মেনে নেওয়া যায় না। কী করে এমন হয়? প্রশাসন কী করে? বুঝি না ছাই।’ তারপর অবসাদে নিমজ্জন। এই বিদগ্ধজনের আর কীছুই করার নেই। তাঁর উত্তরসূরিকে আর কীছু বলার নেই। অথচ তিনি সবকীছু বুঝেন এবং জানেন। তিনি তাঁর উত্তরসূরিকে কীছুতেই লুটেরা মহাজনদের পেছনে প্রতিবাদে উসকে দেবেন না। তিনি নির্বিবাদে পরপারে যেতে পারলেই আপাতত বাঁচেন এবং তাঁর সন্ততিরা নির্বিবাদে বেঁচে থাকুক, অনাহারে অর্ধাহারে হলেও। কিন্তু অপরদিকে লুটেরা পুঁজির মালিকের অবাধে অনেক কীছুই করার আছে, মুনাফা শিকারের উৎসবে মেতে দানবিক আনন্দ পেতে তার বাঁধা কোথায়? কেউ কোথাও নেই। চতুর্দিকে নির্বিবাদ, দশদিকে কী চমৎকার নির্বিঘœতা। প্রতিবাদের প্রত্যয় পুঁজির প্রভুত্বের পদতলে মাথা নত করে বসে আছে বাদরের মতো, মস্তিষ্কে কলা খাচ্ছে মনের মুরাদে।
বিদগ্ধজন জানেন, কিন্তু আর কেউ কি জানেন না? কর্তৃপক্ষের কাছে কি ‘রাতের আঁধারে লুট হচ্ছে সুরমার বালু’-র সংবাদ জানা নেই? বিদগ্ধজন যেমন জানেন, তেমনি জানেন আমজনতা। কিন্তু তাঁরা এ সবে কীচ্ছু বলেন না এবং করেনও না। বলে-করে ঝামেলায় জড়াতে চান না, কেবল নির্বিবাদী জীবন চাই, সে-জীবনে আব্দুজ জহুর সেতু না থাকলেও হবে। আব্দুজ জহুর সেতু থাকলেই কী, আর না থাকলেই কি, সমান কথা। এমতাবস্থায় আব্দুজ জহুর সেতু যদি লোপাট হয়ে যায় যাক। সরকার কা মাল দরিয়া মে ঢাল। প্রয়োজনে আবার একটা হবে।
আমরাও কীছু বলতে চাই না। প্রশাসন যদি ‘রাতের আঁধারে লুট হচ্ছে সুরমার বালু’-র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেতুর ধ্বংসের ঝুঁকিকে আবিষ্কার করতে না পারে, তৎপ্রেক্ষিতে তার ইতিকর্তব্য কী স্থির করতে না পারে, তো কার কী করার থাকতে পারে? কার ঘাড়ে দু’টি মাথা আছে যে, একটিকে দেশসেবায় উৎসর্গ করবে? আমরা কেবল বলতে পারি, ‘আব্দুজ জহুর সেতু ঝুঁকিতে, করণীয় কী?’