বাদল কৃষ্ণ দাস ::
নদীর নাম বৌলাই। পাশেই লাগোয়া এক টুকরো শনির হাওর। বৃষ্টিহীন ধান গাছ যেন খরার আশঙ্কায় ঝিম ধরে আছে। উপহাস করছে মেঘলা গুমোট আসমান। আর মাত্র মাস দেড়েক পরেই প্রকৃতি বদলে যাবে কালবৈশাখীর চিরাচরিত ক্ষুব্ধ রূপে। চৈত্রের শেষে নয়তো বৈশাখের প্রথম বেলাতেই আকাশভাঙা ঘন বরিষণ হাওর ভরিয়ে দিতে দুর্বার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠবে।
উপজেলা জামালগঞ্জের বেহেলি ইউনিয়নে, বৌলাই নদীর কিনারা ঘেঁষেই সারি বাঁধা হাওর বাঁধ। অভিনব হাওর ব্যবসার গুণধর পিআইসি ৩১ থেকে ৩৮। লজ্জায় হাওর বাঁধের মাটির নিচে মুখ ঢেকে নিয়েছে গত বছরের বেড়ে উঠা জিওল উজাউরি বন। পিআইসি তাদের মাটি চাপা দিয়েছে। হাওর বাঁধ নীতিমালার নকশা নিজের মতো করে বানিয়ে নিয়েছেন পিআইসিরা। ‘অরণ্যে রোদন করে কি লাভ…?’ – বলেছেন স্থানীয় রাধানগর গ্রামের কয়েকজন কৃষক। এই শনির হাওরেই তাদের সকল জমি। ৩৩ এবং ৩৪নং পিআইসি রীতিমত বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন হাওর বাঁধের নির্দেশিত নীতিমালাকে। ৩৩নং পিআইসি সভাপতি মো. জিয়া উদ্দিন স্বীকার করেছেন তার হাওর বাঁধের অনিয়মের কথা। তিনি অকপটে বলেছেন- যেভাবে বাঁধের কাজ করেছেন তা অফিস মেনে নেবে না। জিওল উজাউরি বনের উপরই মাটি ফেলছেন সর্বত্র। মাটির উচ্চতা, প্রশস্থতা, ঢাল নকশামাফিক হয়নি। সেই দোষ চাপিয়েছেন এস্কেভেটর চালকের উপর।
গত বছর এই হাওর বাঁধের অধিকাংশ স্থানেই জমানো মাটি বহাল রয়েছিল। কোথাও এক ফুট, কোথাও দুই ফুটের বেশি মাটি পড়েনি এই বাঁধে। দু’পাশে লক লক করে জিওল উজাউরি সাক্ষ্য দিচ্ছে বাঁধের অনেকাংশে মাটির ঘনত্ব গভীরতা দু-তিন কোদালের বেশি নয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ৩৩নং পিআইসি সভাপতি রাধনগর গ্রামের জিয়া উদ্দিন একজন ‘ভাড়াটে সভাপতি’। মূলত আড়ালে রয়েছেন পিআইসিটির মূলাধার স্থানীয় জনৈক রাজনৈতিক ব্যক্তি। তবে জিয়াউদ্দিন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় রাধানগর গ্রামের কৃষকরা বলেছেন, বাঁধে যে পরিমাণে মাটি ফেলা হয়েছে তাতে নির্ধারিত বরাদ্দের অর্ধেকও খরচ হবার কথা নয়।
পাশের ৩৪নং পিআইসি সভাপতি বাদশা মিয়াও অনুরূপভাবে জিওল উজাউরি বনের উপরই এস্কেভেটর দিয়ে মাটি ভরাট করছেন। কাবিটা-১৭ নীতিমালার কোন শর্তই পূরণ করছেন না এই পিআইসিদ্বয়। এই ৩৪নং বাঁধের কাজ এখনও স¤পন্ন হয়নি। তাছাড়া কোন বাঁধেই মোটেই দুরমুজ করা করা হয়নি। মাটি ভরাট করেই উপরিভাগে ড্রেসিং করে নেওয়া হয়েছে। যেকারণে বাঁধের ভিতর অংশের মাটি রয়ে যাচ্ছে ঢিলেঢালা। ভারী বর্ষণে এসব ঢিলেঢালা বাঁধের মাটি পাশের বৌলাই নদীতে ধ্বসের পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, সুনামগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, ৩৩নং এবং ৩৪নং পিআইসি’র বিষয়টি জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলুন।