সংসদ নির্বাচনের পর দেশে উপজেলা নির্বাচনের তোড়জোর শুরু হয়েছে। গণমাধ্যমে ইতোমধ্যেই আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে উপজীব্য করে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচনী জল্পনা-কল্পনা-প্রচারণার তোড়জোরটা সবিশেষ জোরালোভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রার্থিতাপ্রত্যাশী একজন সম্পর্কে পত্রিকায় লেখা হয়েছে, ‘ইতোমধ্যে তিনি নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগও বৃদ্ধি করেছেন এই তরুণ নেতা। তার পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারণা শুরু করেছেন নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।’ গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের যে-প্রতিবেদনে উপজেলা নির্বাচন সংক্রান্ত এবংবিধ বিবরণ পরিবেশিত হয়েছে সে-প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘চেয়ারম্যান পদে লড়তে চান অর্ধ ডজন যুবলীগ নেতা’। ‘চেয়ারম্যান’ অর্থে ‘উপজেলা চেয়ারম্যান’ বুঝাতে মূল শিরোনামের নীচে একটি উপশিরোনাম করা হয়েছে, ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচন’ এবং তার নীচে বিশেষ পরিচিত চারজন রাজনীতিবিদের ছবি ছেপে দেওয়া হয়েছে। বলাই বাহুল্য, প্রতিবেদনে বিভিন্ন উপজেলার যুবলীগের পরিচিত, আলোচিত কিংবা জনপ্রিয় নেতাকর্মীদের প্রসঙ্গ প্রাধান্য পেয়েছে।
প্রতিবেদনে যে-রাজনীতিক দলের প্রতিনিধিদের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে সে-দলের প্রতিনিধিরাই কেবল আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন, এমন কোনও কথা নয়। দলমত নির্বিশেষে নির্বাচনে অংশ নেবেন, এমনটিই সাধারণের ঐকান্তিক প্রত্যাশা এবং আমাদেরও। কিন্তু অতিসাম্প্রতিক দেশের সামগ্রিক রাজনীতিক পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে পর্যবশিত হয়ে পড়েছে যে, মনে হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন দল, মত, নীতি কিংবা আদর্শের রাজনীতির কার্যকারিতা প্রকারান্তরে জাঢ্যতাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। সদ্যসম্পন্ন জাতীয় সংসদের নির্বাচনে একক রাজনীতিক দলের নিরঙ্কুশ বিজয় সে-সঙ্কটকেই সুস্পষ্টভাবে প্রত্যাসন্ন করে তোলছে, প্রবলভাবে। কোনও নির্দিষ্ট রাজনীতিক পরিস্থিতিতে এইরূপ রাজনীতিক স্থবিরতার প্রাদুর্ভাব সমাজে গণতান্ত্রিকতার অপমৃত্যুর লক্ষণকে পরিস্ফূট করে এবং তেমন রাজনীতিক প্রপঞ্চ কোনও সমাজে আবির্ভূত হলে সেটা সমাজের জন্য ভালো কীছু বহন করে নিয়ে আসে না, বলেই মনে হয়।
সে যা-ই হোক, আমরা আপাত মুখ চিনে মুগের ডাল পরিবেশনের নীতি পরিহার করে বলতে চাই, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে সামাজিক গণতান্ত্রিকতার সুবাতাস বইবে এবং সুচারুরূপে নির্বাচনটি সম্পন্ন হবে এবং একক রাজনীতিক প্রধান্য থেকে উদগত বাস্তবতার কুঠার সামগ্রিক গণতান্ত্রিকতাকে খর্ব করবে না। কথায় বলে : শেষ ভালো যার, সব ভালো তার।