পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে, ভুয়া নাগরিক সনদ তৈরি হচ্ছে এবং এই ভুয়া নাগরিক সনদ দিয়ে চাকরি নিচ্ছে জেলার বাইরের লোকেরা, অর্ধাৎ এই অর্থে বহিরাগতরা। পত্রিকায় লিখা হয়েছে যে, প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলায় বিগত বছর দশাধিক কাল থেকে ভুয়া নাগরিক সনদ তৈরি করে সে সনদের জোরে চাকুরি নিচ্ছে বহিরাগতরা। এই কারণে স্থানীয় লোকজন চাকুরি বঞ্চনার দুর্গতি ভোগ করছেন। সম্প্রতি নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ভুয়া সনদধারী ১০ জনের যোগদান স্থগিত করা হয়েছ এবং গত সোমবার থেকে ১০ বছর আগে চাকুরি পেয়েছেন এমন অস্থানীয় আরও ২৮ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছ।
সুনামগঞ্জ জেলায় বেকারত্বের তীব্রতা থাকার পরও স্থানীয়রা চাকরি না পেয়ে বহিরাগতরা এখানে চাকরি পাচ্ছেন, হয় মেধার জোরে কিংবা টাকার জোরে, তা যেভাবেই হোক। সুনামগঞ্জ জেলায় সুনামগঞ্জের নাগরিকত্বের জোরে বহিরাগতরা চাকরি পাচ্ছেন এটা যেমন বাস্তবে সত্যি, তেমনি এটাও বাস্তবে সত্যি যে সুনমগঞ্জের লোকেরা বাইরের জেলার নাগরিকত্ব সনদ বাগিয়ে নিয়ে বাইরের জেলায় চাকুরি পাওয়ার সুযোগ নিতে পারছেন না। বহিরাগতরা সুনামগঞ্জের প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অসচেতনতার সুযোগ নিচ্ছেন, এমন অনুমান করাও বোধ করি বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। প্রকৃতপ্রস্তাবে নাগরিকত্ব সনদ এখানে বিক্রির একটি ব্যবসা শুরু হয়েছে। টাকার বিনিময়ে জনপ্রতিনিধিরা নাগরিকত্বের সনদ বাইরের জেলার লোকদেরকে দিয়ে দিচ্ছেন। ভুয়া সনদের জোরে বহিরাগতরা চাকরি বাগিয়ে নিচ্ছেন। বাইরের জেলার নাগরিকত্ব নিয়ে চাকরি নেওয়া একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হতেই পারে, কিন্তু বোধ করি সে-অপরাধের চেয়েও গুরুতর অপরাধ হলো বহিরাগতদের হাতে টাকার বিনিময়ে নাগরিতকত্বের সনদ তোলে দিয়ে প্রকারান্তরে নিজের জেলার লোকদের চাকরি পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার অপরাধ।
বহিরাগতরা নাগরিকত্বের সনদ পাওয়ার রাস্তা যতো দিন খোলা থকেবে ততো দিন এইসব চাকরি নেওয়ার মতো দুষ্কর্ম চলতেই থাকবে, বন্ধ হবে না। কিন্তু জেলাবাসী চান, বহিরাগতদেরকে নাগরিকত্বের সনদ প্রদান ও চাকরি ক্ষেত্রে তাদের নিয়োগপ্রাপ্তির মতো দুর্নীতি বন্ধ হোক। সে-ক্ষেত্রে একটি বিষয় মানতেই হবে যে, এই দুর্নীতি বন্ধকরণে যে-ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হোক না কেন, যারা বহিরাগতদেরকে নাগরিকত্বের সনদ প্রদান করেন তাঁদেরকে নিরস্ত না করে বহিরাগতের চাকরি প্রাপ্তি বন্ধ করা যাবে না। মোট কথা সুনামগঞ্জকে প্রথমেই ঘরশত্রু বিভীষণর কর্তৃক বহিরাগতদেরকে নাগরিকত্বের সনদ প্রদানের অপকর্মটি সর্বাগ্রে বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় যেমন চলছে তেমন চলতেই থাকবে।