মো. আমিনুল ইসলাম ::
শহরের ব্যস্ততম এলাকাগুলোর অন্যতম হোসেন বখ্ত চত্বর। শহরের অধিকাংশ বিদ্যালয় ও কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা যাতায়াতের ক্ষেত্রে এই এলাকার সড়ক ব্যবহার করেন। আর এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে হোসেন বখ্ত চত্বর ও সড়কের অন্যান্য পয়েন্টগুলোতে চলছে বখাটেদের আড্ডাবাজি। বিগত দিনগুলোতে হোসেন বখ্ত চত্বরে ইভটিজিংয়ের মাত্রা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে গৃহীত সিদ্ধান্তে পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশের অবস্থান থাকায় হোসেন বখত চত্বর নিরাপদ হয়ে ওঠে। কমে যায় বেপরোয়া ইভটিজিং। পুলিশের ভূমিকা সুধীজনের প্রশংসা অর্জন করে। তবে বর্তমানে ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন না থাকায় বখাটেরা ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হোসেন বখত চত্বর এলাকায় নজর ছিল এ প্রতিবেদকের। ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানান, বখাটেরা রোজ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে পয়েন্টে অবস্থান নেয়। তারা স্কুলে যাতায়াতকারী ছাত্রীদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে। এ সময় নানা অঙ্গভঙ্গি, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে বখাটেরা।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে হোসেন বখত চত্বরে পৌঁছে সুনামকণ্ঠ টিম। এ সময় চত্বরের পাশের রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন ফুটপাতে উঠতি বখাটেদের একটি দলের দেখা মেলে। তারা আড্ডাবাজিতে মত্ত। সাথে সাথে চলে ইভটিজিং। তাদের বয়স ১৬ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। চুলে নানা ডিজাইনের কাট। কানে দুল। হাতে স্টিকার আর ভিন্ন ভিন্ন ব্রেসলেট। তাদের অনেকেই ধূমপান করছিল।
স্কুল ড্রেস আর ব্যাগ কাঁধে ঝোলানো দেখা গেল ২-৩ জনকে। এলাকার দোকানিরা জানান, বখাটেরা কৌশলী হয়ে উঠছে। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে তারা ছাত্র বেশে ইভটিজিং করে। ১৮ থেকে ২০ জনের একটি গ্রুপও তৈরি হয়েছে। তারা প্রতিদিন হোসেন বখত চত্বরে জড়ো হয়ে ইভটিজিং শুরু করে।
বৃহস্পতিবার ঘড়িতে সময় দুপুর ১২টা ৪৩ মিনিট। এবার ৬জন বখাটেকে হোসেন বখ্ত চত্বরের পশ্চিম পাশের রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলো। তারা রিকশায় করে যাতায়াতকারী স্কুলছাত্রীদের উদ্দেশ করে কটূক্তি করছিলো। দুপুর ১টা ৫ মিনিট। আরো ৫জন বখাটের অবস্থান শহরবালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে। এসময় সুনামগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে ছাত্রীরা বাসায় ফিরছে। বখাটেরা তাদের কয়েকজনকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করে। এসময় একজন স্কুলছাত্রীকে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করতেও দেখা যায়। পরবর্তীতে বখাটেরা এ স্থানটি ত্যাগ করে উকিলপাড়ার দিকে চলে যায়।
দুপুর ১টা ১১ মিনিট। তিনজন বখাটেকে দেখা গেল যারা মোটরসাইকেল নিয়ে কমরেড বরুণ রায় সড়ক হয়ে হোসেন বখত চত্বরে পৌঁছে। তারা পৌর মার্কেটের সামনে এসে অবস্থান নেয়। কিছু সময় পর সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর রিকশার অনুসরণ করে বিহারী পয়েন্টের দিকে চলে যায় তারা।
দুপুর ১টা ২৫ মিনিট। বখাটেদের একটা গ্রুপের অবস্থান হোসেন বখত চত্বরের পশ্চিম পাশের ফুটপাত ঘেঁষে। এ গ্রুপে সদস্য সংখ্যা ১৬-১৭জন। তারা কেউ একজনকে মারধরের প্ল্যান করছিল। এ গ্রুপের অবস্থানের ছবি ধরা পড়ে এ প্রতিবেদকের ক্যামেরায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বখাটেদের এ গ্রুপের সদস্যরা প্রায়ই বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রদেরকে হোসেন বখত চত্বরে আটকে মারধর করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোসেন বখত চত্বর এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, এই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন না থাকায় বখাটেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এখানে পুলিশ মোতায়েন করা খুবই প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান বলেন, ‘আমি সামাজিক সমস্যাগুলো সমাধানের ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব দিয়েই কাজ করছি। বর্তমানে হাওরের দুখি মানুষদের ওএমএস-এর চালের ডিলারকেন্দ্রে পুলিশ সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা হোসেন বখত চত্বরে বখাটেদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। যাতে করে কোন স্কুল ছাত্রী ইভটিজিংয়ের শিকার না হয়। বখাটেদের ব্যাপারে সার্বিক তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান।