1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১২:১৬ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় : পাঠাগারের মূল্যবান বই বেহাত, বুক রেজিস্টার গায়েব

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৬ মে, ২০১৭

শামস শামীম ::
দায়িত্বশীলদের উদাসীনতায় সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় ঐতিহ্যবাহী পাঠাগারের প্রায় ৮ শতাধিক মূল্যবান বইয়ের হদিস নেই। গত ১৮ এপ্রিল পাঠাগারের অব্যবস্থাপনা অনুসন্ধানে গঠিত নিরীক্ষা কমিটি অনুসন্ধান করে এই তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানায়, পাঠাগারের বুক রেজিস্টারও (নিবন্ধন বই) গায়েব করা হয়েছে। ফলে ২০০৯ সালের পর প্রতি বছর ক্রয়কৃত বইয়ের হদিসও মিলছেনা। ব্যবস্থাপনার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আলাদা সম্মানী নেওয়া হলেও দায়িত্বশীল ব্যক্তি দায়িত্ব পালনে উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন বলে নিরীক্ষা কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন। আগামীকাল শনিবার দায়িত্বশীলকে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবসহ প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিবে কমিটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমৃদ্ধ লাইব্রেরির মধ্যে জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় পাঠাগারটি দেশসেরা অন্যতম সমৃদ্ধ পাঠাগার। এ পাঠাগারে সাহিত্য, বিজ্ঞান, অনুবাদ, ইতিহাস, ভ্রমণসহ নানা ধরনের মূল্যবান, পুরনো ও বিরল বই রয়েছে। ১৯৩৭ সন থেকে প্রকাশিত স্কুল ম্যাগাজিনের সকল কপি ছিল সেখানে। ইতিহাসের বিরল ও বিশেষ করে স্থানীয় ইতিহাসের মূল্যবান ‘আকর’ হিসেবে বিবেচিত হতো এই প্রকাশনাগুলো। তাছাড়া কলোনি আমলের মূল্যবান ও বাজার থেকে প্রিন্ট আউট হওয়া গুরুত্বপূর্ণ অনেক বইও ছিল। সম্প্রতি এই মূল্যবান পাঠাগারটির গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো সংরক্ষণে সহায়তা করতে সিলেট ঐতিহ্যবাহী মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী সাবেক ছাত্র ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ এবং বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র-শিক্ষক অ্যাডভোকেট কল্লোল তালুকদারকে সঙ্গে নিয়ে পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনে গিয়ে লাইব্রেরি বেহাল দেখে হতাশ হন তারা। পরে তিনি বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের লাইব্রেরিটি রক্ষার ব্যক্তিগত আবেদন জানান। তারা লাইব্রেরিতে গিয়ে সিগারেটের বাক্স, ছাই, খাবারের প্যাকেট, ছড়ানো ছিটানো বই, পারিবারিক নানা অনুষ্ঠানের উপকরণ দেখতে পান। এ বিষয়টি নিয়ে তখন তাৎক্ষণিক ফেসবুকে স্টেটাস দেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক অ্যাডভোকেট কল্লোল তালুকদার চপল। স্টেটাসে জুবিলীর প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও সাহিত্যানুরাগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্টেটাসে পাঠাগারের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক হাসান মামুন চৌধুরীও একাধিক কমেন্ট করেন। কমেন্টে তিনি এই অবস্থার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধান, কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষকদের গ্রুপিংকে দায়ি করেন।
এদিকে পাঠাগারের এই বেহাল অবস্থা নিয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা নানা মাধ্যমে প্রতিবাদমুখর হওয়ায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ১৮ এপ্রিল ৫ সদস্যের একটি নিরীক্ষা কমিটি গঠন করেন। কমিটি বিদ্যালয়ের এই বেহাল অবস্থার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক হাসান মামুন চৌধুরীকে। কমিটি একাধিকবার ওই শিক্ষককে বুক রেজিস্টার প্রদানের নির্দেশনা দিলেও তিনি কালক্ষেপন করেন। পরে তাদেরকে জানান বুক রেজিস্টার তাকে দেওয়া হয়নি। ওই শিক্ষকের দেড় বছরের দায়িত্বকালীন সময়ে পাঠাগারটির অব্যবস্থাপনা সীমা ছাড়িয়ে যায় বলে জানান একাধিক শিক্ষক ও ছাত্র। এ নিয়ে কয়েকজন ছাত্র প্রতিবাদও করেন। তাছাড়া লাইব্রেরিটি নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও উদাসীনতা রয়েছে বলে অনেকে স্বীকার করেন।
এদিকে গত ২৪ মে পাঠাগারের দায়িত্বশীল শিক্ষক নিরীক্ষা কমিটির কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিতে গিয়ে কৌশলের আশ্রয় নেন। এর আগে তিনি ফেসবুকে এ সংক্রান্ত কমেন্টে অন্যান্য শিক্ষক, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকদের গ্রুপিংকে দায়ি করলেও পাঠাগারের হযবরল অবস্থার জন্য কিছুদিন আগে পাঠাগার পরিদর্শনকারী কেমুসাসের সাধারণ সম্পাদকসহ পরিদর্শনকারীদের দায়ি করেন।
নিরীক্ষা কমিটি ২০০৯ সালের বুক রেজিস্টার থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানায় পাঠাগারের ওই সাল পর্যন্ত বই সংখ্যা ৮ হাজার ৩০০। তবে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কেনা বইয়ের পরিসংখ্যান নেই। ২০১৬ সালের বইয়ের পরিসংখ্যান দিতে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক জানান প্রাক্তন দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ১৩৪ টি ও বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে তিনি আরো ৭১টি বই ক্রয় করেছেন।
জুবিলীর প্রাক্তন ছাত্র, বিশিষ্ট কবি, লেখক-গবেষক ইকবাল কাগজী বলেন, নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম সমৃদ্ধ পাঠাগার এটি। স্বাধীনতার পর থেকেই প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী পাঠাগারের দায়িত্ব পাওয়ায় পাঠাগারটিকে শেষ করে দিচ্ছে। যে কারণে মূল্যবান বই গায়েবের পাশাপাশি অব্যবস্থাপনাও লক্ষণীয়। ইতিহাসের প্রয়োজনে পাঠাগারটি টিকিয়ে রাখার আহ্বান জানান তিনি।
পাঠাগারে গত দেড় বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন শিক্ষক হাসান মামুন চৌধুরী। এজন্য তিনি বেতনের পাশাপাশি দায়িত্বের জন্য আলাদা সম্মানীও নিয়েছেন। তার সময়ে চরম অব্যবস্থাপনার জন্য গঠিত হয় নিরীক্ষা কমিটি। নিরীক্ষা কমিটি যাতে কার্যক্রমে আর অগ্রসর না হয় এ জন্য তিনি নানা মহল দিয়ে চাপও দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি গত ২৪ মে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছি। জবাবে কি লিখেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন মনে নাই। তবে এর আগে ফেসবুক কমেন্টে পাঠাগারের এই ব্যবস্থাপনা নিয়ে যে কমেন্ট করেছিলেন তা স্বীকার করেন।
এদিকে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক নিরীক্ষা কমিটির এক সদস্য বলেন, পাঠাগারের দায়িত্বশীল শিক্ষক আমাদেরকে নিরীক্ষা কার্যক্রমে সহযোগিতা করেননি। তিনি বুক রেজিস্টার দেননি। এখন কারণ দর্শানোর নোটিশে অব্যবস্থাপনার জন্য প্রাক্তন এক শিক্ষার্থী ও সম্প্রতি পরিদর্শনকারী দলকে দোষারোপ করেছেন। গত দেড় বছর দায়িত্ব পালনকালে বুক রেজিস্টার পাননি এ কথা প্রতিষ্ঠানের কাউকে জানাননি। অথচ পাঠাগারের প্রধান কাজই হচ্ছে এই রেজিস্টার মেইনটেইন করা।
প্রধান শিক্ষক মফিজুল হক মোল্লা লাইব্রেরির অব্যবস্থাপনার কথা স্বীকার করে বলেন, অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ায় এই সমস্যা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের সমৃদ্ধ লাইব্রেরিটি সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনার জন্য একজন ডিপ্লোমাধারী লাইব্রেরিয়ানকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার। তাছাড়া লাইব্রেরি সংস্কারে ইতোমধ্যে কিছু কাজও চলমান আছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com