1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৪:১২ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের চিনেনা এলাকার কৃষক : ঘরে বসে তৈরি হয় মাঠের প্রতিবেদন

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০১৭

শামস শামীম ::
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনস্থ মাঠ পর্যায়ে কৃষিকাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা (ব্লক সুপার ভাইজার)-দের সঙ্গে কৃষকের কোন সম্পর্ক নেই। কে কোন এলাকার দায়িত্বে আছেন, তার নির্ধারিত কাজ কি তা জানেননা সংশ্লিষ্ট এলাকার অধিকাংশ কৃষক। পাহাড়ি ঢল, শিলা বৃষ্টি, অতিবর্ষণে ফসল ডুবলে তার প্রকৃত ক্ষয়-ক্ষতি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা প্রশাসন ও কৃষকের সঙ্গে কানামাছি খেলা খেলে! অভিযোগ রয়েছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের এই কর্মীরা মাঠে না গিয়ে ঘরে বসেই কৃষির মনগড়া প্রতিবেদন তৈরি করে। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন লোকবলের অভাব ও রুটিন কাজের বাইরে প্রশাসনিক নানা কাজ করানোয় অনেক সময় দায়িত্ব পালন করতে তাদের সমস্যা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের ২৬৩টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে কর্মরত আছে ১০৮ জন। উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তারা সপ্তাহে ৫দিন মাঠে গিয়ে সরেজমিন কৃষির অবস্থা পর্যবেক্ষণ, কৃষকের সমস্যায় করণীয় বিষয়ক পরামর্শ, কৃষি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ প্রদানসহ কৃষির সমস্যা ও সম্ভাবনার চিত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করার কথা। এছাড়াও ফসলি মৌসুমে কি কি চাষ হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে কি পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হয়, কৃষকের কি ধরনের কৃষি সহায়তা প্রয়োজন তা নিয়েও কাজ করার কথা তাদের। এর পাশাপাশি সপ্তাহে একদিন অফিস করার নির্দেশনা রয়েছে তাদের। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে মাঠে না গিয়ে মাঝে-মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বসে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সঙ্গে কথা বলে মনগড়া মাঠের তথ্য নিয়ে আসেন তারা। যার ফলে কৃষির মাঠ পর্যায়ের বাস্তব অবস্থা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কৃষকরা। এবারও ফসলহারা কৃষক এই কারণে ক্ষতিপূরণ না পেয়ে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের পছন্দের লোকজন সহায়তা পেয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতির প্রকৃত চিত্র তুলে না আনায় সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক। ২০১৪ সালে কৃষকদের যে তালিকা করা হয়েছে সেটিও ‘মনগড়া’ বলে কৃষকদের অভিযোগ। মাঠে না গিয়ে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কথায় কার্ড প্রদান করায় প্রকৃত কৃষকরা তখন তালিকা থেকে বাদ পড়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে। তাছাড়া সরকার প্রকৃত কৃষকদের ভর্তুকি দিয়ে যে ট্রাক্টর বিতরণ করছে তাও প্রকৃত কৃষকের বদলে মধ্যস্বত্বভোগীদের মধ্যে উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে বিতরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
কৃষকরা জানান, পরিবর্তিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিনিয়ত হাওর-ভাটির কৃষকরা নানা সমস্যায় হাবু-ডুবু খাচ্ছে। কৃষি-প্রযুক্তিতে উন্নত সুবিধা আসলেও মাঠের কৃষকরা তা থেকে বঞ্চিত। তারা সনাতন পদ্ধতিতেই চাষবাস করে। সরকারের মাঠ পর্যায়ের কৃষির উন্নতির জন্য নিয়োগকৃত উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এরা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করলে এই অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হতো বলে জানান সুধীজন।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শাহপুর গ্রামের কৃষক তারা মিয়ার কাছে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইতা কিতা, ইতারেতো দেখছিনা কোনদিন’। তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের কোন লোকের পরামর্শ পাননা তারা। সনাতনী জ্ঞানেই যুগযুগ ধরে চাষাবাদ করে চলেছেন।
জামালগঞ্জ উপজেলার লম্বাবাক গ্রামের কৃষক সবুর আলী ওরফে আব্দুশ শহিদ বলেন, ‘আমরার আউর গেল কৃষি অফিসার কোন খবরও লয় নাই। কোনদিন আমরা তারে দেখছিনা। তারে কেউই চিনেওনা’। তিনি জানান, কোন কৃষক কৃষি বিভাগের লোকদের কোন পরামর্শ পায় না। এবার হাওরের যে ক্ষয়-ক্ষতি হলো তার প্রকৃত চিত্রও সরকারকে জানানো হয়নি। ঘরে বসেই মনগড়া রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তাহিরপুর উপজেলার নোয়াবন গ্রামের কৃষক নেতা রুহুল আমিন বলেন, আমাদের এলাকায় উপসহকারি কর্মকর্তা হিসেবে কে কাজ করেন আমরা জানিনা। আমাদের পুরো উপজেলার অবস্থাও একই। কোন কৃষক কৃষি অফিসারকে চিনেনা। তাদের কি কাজ সেটাও তারা জানেনা। তিনি বলেন, এই মাঠ কর্মকর্তাদের ইউনিয়ন অফিসে পদায়ন করা হলে কৃষকরা উপকৃত হতো। কৃষি নিয়ে কাজ করা এই বিভাগের লোকজন কৃষকদের সেবা না দিয়ে যুগ যুগ ধরে ঠকাচ্ছে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার আস্তমা গ্রামের কৃষক নেতা এনামুল হক বলেন, আমার এলাকার উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তার দায়িত্বে কে আছেন আমি জানিনা। তাকে কখনো মাঠে দেখেছি বলে আমার মনে পড়েনা। তিনি বলেন, এই বিভাগের কোন লোক মাঠে কাজ করেনা। ঘরে বসে মনগড়া রিপোর্ট বানায় তারা। এতে আমাদের কৃষকের ক্ষতি হয়।
তাহিরপুরের বালিজুড়ি ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা এটিএম শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি পুরো সপ্তাহই অফিসে যাই। সাধারণ মানুষ আমাকে না চিনলেও যারা কৃষক তারা ঠিকই আমাকে চিনে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা আবু তাহের বলেন, সবাই আমাকে চিনতে হবে কেন? আমি তো কোন ফেমাস মানুষ নই। যারা কৃষক তারা ঠিকই আমাকে চিনে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন টিপু বলেন, উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের সপ্তাহে ৫দিন মাঠ পর্যায়ের কৃষির অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। তাছাড়া তারা সপ্তাহে একদিন অফিসে কাজ করেন। লোকবল কম থাকার কারণে সবগ্রামে কৃষকরা সেবা পাননা। যার ফলে তারা উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের চিনেন না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাহেদুল হক বলেন, আমার অর্ধেকেরও বেশি লোকের পদ শূন্য রয়েছে। এ কারণে সব জায়গায় কাক্সিক্ষত সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া মাঠে কৃষি নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি তাদেরকে নিয়মিত সরকারের বিভিন্ন দফতরের পরীক্ষা, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, নির্বাচনসহ নানা ধরনের কাজে যুক্ত করা হয়। যার ফলে মাঠে তাদের কম দেখা যায়। তবে কারো বিরুদ্ধে মাঠে না যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com