জেলার বিভিন্ন স্থানে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এনজিও প্রতিনিধিরা ক্ষুদ্র ঋণ আদায় অব্যাহত রেখেছেন। তারা নানা কৌশল প্রয়োগ করে এবং মোটা অংকের ঋণ প্রদানের আশ্বাস দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে ঋণের কিস্তি আদায় করে চলেছেন। এনজিওরা সুদ ও আসল ঋণ আদায় করে চলেছেন তারা। গ্রাহকরাও মোটা অংকের ঋণ প্রাপ্তির আশায় অন্যের কাছ থেকে কিস্তি আদায় করে চলেছেন। এহেন অবস্থায় এনজিওদের দেয়া বড় অংকের ঋণের ফাঁদে পড়ছেন কৃষকসহ সাধারণ মানুষ।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন’ (পিকেএসএফ)’ সম্প্রতি হাওরের দুর্যোগে সকল এনজিও সংস্থার ক্ষুদ্রঋণ ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে সুদমুক্ত নতুন ঋণ প্রদানের নির্দেশনা দেয়। কিন্তু সেটা মানছেনা হাওরে ঋণ প্রদানকারী এনজিওগুলো। বরং হাওরের দুর্গত কৃষককে আরো ঋণের ফাঁদে ফেলতে নতুন করে ঋণের জালে বন্দি করছে। কিস্তি আদায় করতে নিয়েছে নানা কৌশল। সহায়তা দেওয়া হবে, ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে এই কৌশল নিয়ে কিস্তি আদায় করতে বাধ্য করছে গ্রাহকদের।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর অধীনে প্রায় ৩০টির মতো সংগঠন রয়েছে যারা ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনা করে। এছাড়া বৃহত্তম সংগঠন ‘ব্র্যাক, আশা, গ্রামীণ ব্যাংক’সহ আরো কিছু সংস্থাও ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে থাকে। সুনামগঞ্জে ব্র্যাক, আশা ও গ্রামীণ ব্যাংকেরই প্রায় ২ লাখ ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহিতা আছে। অন্যান্য সংস্থার রয়েছে আরো প্রায় লক্ষাধিক সদস্য। প্রায় তিন লাখ সদস্য ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণ করে এই দুঃসময়ে আরো বিপাকে পড়েছেন। যেখানে তাদের ঘরে ভাত নেই, সেখানে এখন কিস্তি পরিশোধের জন্য তারা উদ্বিগ্ন। মৃত্যু সামনে রেখেও কিস্তি আদায় করতে বাধ্য করছে ঋণ গ্রহীতাদের। নতুন করে নানা প্রলোভন ও সহায়তার নামে উচ্চ সুদে ঋণ বিতরণ করছে তারা। পিকেএসএফ’র অধীনস্থ এনজিও সংস্থা পদক্ষেপ, শক্তিসহ অন্যান্য সংগঠনও কিস্তি আদায়ে বাধ্য করছে।
জানা গেছে, দুর্গত হাওরের অবস্থা মিডিয়ায় গুরুত্বভাবে প্রকাশ পাওয়ায় সরকারের টনক নড়ে। রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রীরা ছুটে আসেন এখানে। মানুষের এই দুঃসহ অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। নানা মহল থেকে সরকারি-বেসরকারি ঋণ মওকুফের আহ্বান জানানো হলে সরকারি ব্যাংক কৃষিঋণ আদায় স্থগিত করে সুদও অর্ধেক মওকুফ করেছে। বেসরকারি সংগঠনগুলো কেন্দ্র থেকে নামমাত্র কিস্তি আদায় স্থগিত রাখার নির্দেশনা দিলেও মাঠপর্যায়ে মৌখিকভাবে কলে-কৌশলে কিস্তি আদায় করার নির্দেশনা দেওয়া আছে। যার ফলে লোন অফিসাররা বাধ্য হয়ে নানা কৌশল অবলম্বন করে দুর্গত কৃষকদের কাছ থেকে কিস্তি আদায় করছে। কিস্তি আদায় করতে গিয়ে তারা অমানবিক ঘটনারও জন্ম দিচ্ছে। কেউ কিস্তি আদায়ে অপরাগতা প্রকাশ করলে কেন্দ্র সভাপতি দিয়ে তাদের হুমকি-ধামকি দিয়ে কিস্তি আদায় করতে বাধ্য করছে। সুনামগঞ্জের প্রতিটি এলাকায়ই এই অমানবিক ঘটনা ঘটছে।
সুনামগঞ্জ জেলায় মহাজনী ঋণের পাশাপাশি এনজিও ঋণ মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। জেলার প্রায় প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জের মানুষ কোনো না কোনো এনজিওর ঋণের সুতোয় বন্দি। এনজিওদের ঋণের বেড়াজাল থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মুক্ত রাখতে হবে। কৌশলী ঋণ আদায় বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে প্রশাসনকে।