২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে শিশু যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। যক্ষ্মা শনাক্তকরণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে এই সংখ্যা সঠিকভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। ২০১৫ সালে শিশু যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ছিল ৭৯৮৪ জন, ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২৯১ জনে। শতকরা হিসেবে ২০১৬ সালে শিশু যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের হার বেড়েছে ৪.৩ শতাংশ। ২০১৫ সালে এই হার ছিল ৪ শতাংশ।
শিশুদের যক্ষ্মা হওয়ার কারণসমূহ চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ চিহ্নিত করেছেন, শিশুদের যক্ষ্মা এটি একটি জীবাণুবাহিত (ইনফেকশাস) রোগ। এর জীবাণু যখন শিশুর শরীরে প্রবেশ করে তখন এই রোগ হয়। এই জীবাণুটি সাধারণত একটি বায়ুবাহিত। যার যক্ষ্মা আছে তার হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এই জীবাণু ছড়ায় এবং সেটি শিশুর শরীরেও প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ তৈরি করে।
শিশুরা সাধারণত আক্রান্ত হয় পরিবার কিংবা প্রতিবেশী বড়দের কেউ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হলে। তার সঙ্গে যে শিশুর মেলামেশা হয়, সে শিশুর যক্ষ্মা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস নামক যক্ষ্মার জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। শিশু তার সং¯পর্শে এলে তার ফুসফুসের অভ্যন্তরে চলে যেতে পারে। একইভাবে যক্ষ্মায় আক্রান্ত লোকের প্র¯্রাব কিংবা গ্ল্যান্ডের পুঁজ যক্ষ্মার জীবাণুতে ভর্তি থাকে বলে অন্যরা সংক্রমিত হতে পারে। যক্ষ্মায় ভুগছে এমন কোনো প্রাণীর দুধ, যেমন গরুর দুধ যদি পাস্তুরাইজ না করিয়ে পান করা হয়, তাহলে যক্ষ্মার জীবাণু দেহে প্রবেশ করে যক্ষ্মা হতে পারে। গর্ভাবস্থায় মা যক্ষ্মা রোগে ভুগলে নবজাত শিশুও এ রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশে যক্ষ্মায় আক্রান্ত শিশুর শতকরা প্রায় ৮০ ভাগই ফুসফুসের যক্ষ্মা হিসেবে দেখা যায়। দ্বিতীয়ত, সর্বোচ্চ হচ্ছে শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি বা গ্ল্যান্ডের যক্ষ্মা (টিউবারকুলোসিস লিমপেডেনোপ্যাথি)। তৃতীয়ত, শরীরের বিভিন্ন হাড় যক্ষ্মার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যাকে বলা হয় স্কেলিটাল টিউবারকুলোসিস। এর মধ্যে সমধিক হচ্ছে মেরুদ-ের যক্ষ্মা বা কেরিস স্পাইন, হিপ ও হাঁটুর যক্ষ্মা। শিশুর ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের যক্ষ্মা হওয়া মারাত্মক ব্যাপার। সাধারণত যক্ষ্মার জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার ছয় মাসের মধ্যে মস্তিষ্কের যক্ষ্মা দেখা যায়। এ ছাড়া যক্ষ্মার জীবাণু কিডনি, ক্ষুদ্রান্ত, ত্বক, লিভার ইত্যাদি অংশে আক্রমণ করতে পারে। কিডনিতে যক্ষ্মার জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার পর প্রায় চার থেকে পাঁচ বছর পর আক্রান্ত হয়ে থাকে। অন্যদিকে হাড়ের যক্ষ্মা হতে তা সময় নেয় তিন বছরের মতো।
‘যক্ষ্মা হলে রক্ষা নেই’ এ রকম ধারণা একসময় প্রচলিত ছিল। যার কারণে ‘রাজরোগ’ নামেও অভিহিত হতো টিবি। আগেকার দিনে যক্ষ্মা রোগের নির্দিষ্ট ওষুধ প্রয়োগ করতে হতো ১৮ মাস থেকে দুই বছরের মতো। বর্তমানে অনেক ওষুধ আবিষ্কারের ফলে বেশির ভাগ যক্ষ্মা ছয় মাস নিয়মিত চিকিৎসায় স¤পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। এমনকি চিকিৎসা শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যে রোগীর রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা কমে যায় ও সমাজের জন্য নিরাপদ হয়ে ওঠে।
গর্ভাবস্থায় মায়ের যক্ষ্মা রোগ থাকলে নবজাতকের যক্ষ্মা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দেখতে হবে, তখন মায়ের যক্ষ্মা চিকিৎসা করার পাশাপাশি নবজাত শিশুকেও চিকিৎসা দিতে হতে পারে। তবে তখনো শিশু মায়ের বুকের দুধ খেতে পারবে। কিন্তু দ্রুত শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। শিশুর জন্মের এক বৎসরের মধ্যে ২৮ দিন বা একমাস পর পর তিন ডোজ ডিপিটি টিকা দিলে তা শিশুকে ডিপথেরিয়া থেকে রক্ষা করে। প্রথম ডোজ ডিপিটি টিকা দেয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হলো শিশুর ছয় সপ্তাহ বয়সে। এসব শিশুদের যক্ষ্মা থেকে রক্ষা করতে জনগণের মধ্যে সচেতনতার বিকল্প নেই।