ধর্মপাশা প্রতিনিধি ::
ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চন্দ্র সোনার থাল হাওরের আওতাধীন শয়তানখালি ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে সীমাহীন গাফিলতির কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শয়তানখালি হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে। এতে ওই হাওরের ১২৫ একর বোরো ফসলি জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট কাজের প্রকল্প চেয়ারম্যান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে ফসল ডুবির ঘটনা ঘটে। এতে এলাকার কৃষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার শয়তানখালি হাওরে ৫০০ একর বোরো জমি রয়েছে। এর মধ্যে ১২৫ একর জমির ধান গাছ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এই বাঁধের নামমাত্র কাজ করায় বৃহস্পতিবার সকালে শয়তানখালি বাঁধের পুঁতে রাখা বাঁশের খুঁটি ও ফাঁকে ফাঁকে থাকা বাঁশের চাটাইয়ের ভেতর দিয়ে পানি ঢুকে শয়তানখালি হাওরে পানি প্রবেশ শুরু করে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল হাওরের আওতাধীন শয়তালখালি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের মেরামত কাজের জন্য ১৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত বছরের ডিসেম্বর মাঝামাঝি সময় থেকে ওই বাঁধের কাজ শুরু করার কথা থাকলেও জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করা হয়। নির্ধারিত সময়ে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু না করায় বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ওই হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে।
মান্দারবাড়ি গ্রামের কৃষক মো. আজহারুল (২৫) বলেন, ‘এই হাওরে আমার ৩০ কিয়ার জমির মাঝে ১৭ কিয়ার জমি ধান গাছ পানিতে তলিয়ে গেছে।’
একই গ্রামের কৃষক জালাল মিয়া (৭০) বলেন, ‘প্রকল্প চেয়ারম্যান ও পাউবোর কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে আমাদের হাওরে ফসল ডুবির ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্টদের শাস্তিসহ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’
সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও প্রকল্প চেয়ারম্যান আমানুর রাজা চৌধুরী বলেন, ‘ওই বাঁধের অর্থ বরাদ্দ দেরিতে দেওয়ায় কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। এতে আমার নয় পাউবো’র কর্তৃপক্ষেরই গাফিলতি রয়েছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শোয়েব আহমদ বলেন, ‘সারা উপজেলার বাঁধের অগ্রগতি নিয়ে আমি গত ১৪ ফেব্রুয়ারি উপজেলা মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় পাউবো ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের ধীরগতির বিষয়টি উত্থাপন করেছিলাম। কিন্তু এতে তেমন কোনো সাড়া পাইনি।’
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালিব খান ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.ইয়াছিন কবীর বলেন, ‘আমরা সরেজমিনে গিয়ে ওই বাঁধে কোনো শ্রমিক পাইনি। তবে নতুন করে আর যাতে হাওরের বোরো জমির কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী ও প্রকল্প চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে।’
সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন, ‘সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও এই বাঁধের প্রকল্প চেয়ারম্যানের গাফিলতির কারণেই এমনটি ঘটেছে।’