1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৩:১১ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

রাগীব আলীর যত কীর্তি!

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৬

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
সিলেটের তারাপুর চা বাগানের কয়েক হাজার কোটি টাকার দেবোত্তর স¤পত্তি আত্মসাৎ মামলায় বৃহ¯পতিবার গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দি আছেন কথিত দানবীর শিল্পপতি রাগীব আলী। দুর্নীতি, জালিয়াতি, প্রতারণাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জানা যায়, আশির দশকে তারাপুর চা বাগান দিয়ে জালিয়াতি শুরু করে স¤পদের পাহাড় গড়ে তোলেন রাগীব আলী।
সিলেটের বিশ্বনাথের কামালবাজারের তালেবপুর গ্রামের বাসিন্দা রাগীব আলী। ভূমি মন্ত্রণালয়ের চিঠি (স্মারক) জালিয়াতি, আর চা বাগানের কয়েক হাজার কোটি টাকার দেবোত্তর স¤পত্তি আত্মসাৎ মামলায় রাগীব আলী, তার ছেলে আব্দুল হাই ও তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মৌলভীবাজারের বাসিন্দা দেওয়ান মোস্তাক মজিদ এখন কারাবন্দি। তাদের গ্রেফতারের খবরে এলাকাবাসীর মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি এসেছে।
অভিযোগ রয়েছে, কারণে-অকারণে রাগীব আলী তার গ্রামের বাসিন্দাদের জীবন বিষিয়ে তুলেছিলেন। যে গ্রামে রাগীব আলীর জন্ম তার নাম তালেবপুর। তিনি চেয়েছিলেন নিজের নামে (রাগীব নগর) গ্রামের নামকরণ করতে। এজন্য তিনি আইনি লড়াইও করেছেন। গত বছরের আগস্টে সিলেট সহকারী জজ আদালতের রায়ে এই নাম পরিবর্তনকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। তবে পরবর্তীতে জজ আদালত রাগীব নগরের পক্ষে রায় দেন। বর্তমানে এই মামলাটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার মাসুদ পারভেজ জানান, অন্যান্য আসামিদের মতো রাগীব আলীও কারাগারের একটি ওয়ার্ডে রয়েছেন। তাকে কারাগারে কোনও ডিভিশন দেওয়া হয়নি।
এলাকাবাসী জানান, রাগীব আলীর বিভিন্ন ধরনের জালিয়াতি আর দেবোত্তর স¤পত্তি আত্মসাতের বিষয়ে কেউ কথা বললে মামলা দিয়ে হয়রানিও করা হতো। এমনকি তার সা¤্রাজ্য দেখাশুনা করার জন্য ছিল নিজস্ব নিজস্ব লোক। ভূমি মন্ত্রণালয়ের চিঠি (স্মারক) জালিয়াতি ও দেবোত্তর স¤পত্তি আত্মসাতের ঘটনায় মামলা হওয়ার পর বেরিয়ে আসে রাগীব আলী, তার ছেলে, মেয়ে ও জামাতা’র নানা অনিয়মের বিষয়। সেজন্য আইনের মুখোমুখি হতে হয় পুরো পরিবারকে। উচ্চ আদালতেও প্রমাণ হয় রাগীব আলীর জালিয়াতি আর প্রতারণার বিষয়টি। নির্দেশনা দেওয়া হয় সিলেটের তারাপুর চা বাগানের ৭১৫টি স্থাপনা বাগানের সেবায়েতের কাছে হস্তান্তরসহ ১৭টি নির্দেশনা বাস্তবায়নের।
জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে তারাপুর চা বাগানের দেবোত্তর স¤পত্তি দখল ও আত্মসাতের অভিযোগে দায়েরকৃত দুটি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় চলতি বছরের ১০ জুলাই। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান অভিযোগপত্র দুটি আদালতে দাখিল করলে ১০ আগস্ট শুনানি শেষে আদালত রাগীব আলী, তার একমাত্র ছেলে আবদুল হাইসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
পরোয়ানাভুক্ত আসামিরা হলেন- তারাপুর চা বাগানের সেবায়েত পংকজ কুমার গুপ্ত, রাগীব আলীর আত্মীয় মৌলভীবাজারের রাজনগরের বাসিন্দা দেওয়ান মোস্তাক মজিদ, রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাই, মেয়ে রুজিনা কাদির ও জামাতা আবদুল কাদির। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ওইদিন বিকালে জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান রাগীব আলী ও তার ছেলে-মেয়ে। এরপর আদালত বাগানের সেবায়েত পংকজ গুপ্তকে জালিয়াতি মামলা থেকে চলতি বছরের ১৭ আগস্ট জামিন দেন। এছাড়াও তারাপুর চা বাগানের প্রতারণা মামলায় প্রায় আড়াই মাস পর আদালতে গত ১০ অক্টোবর আত্মসমর্পণ করেন রাগীব আলীর ঘনিষ্ঠ সহচর মৌলভীবাজারের রাজনগরের বাসিন্দা দেওয়ান মোস্তাক মজিদ। পরে তাকে আদালতের বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে, ভারত থেকে দেশে ফেরার পথে গত ১২ নভেম্বর সিলেটের জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন রাগীব আলীর পুত্র আব্দুল হাই। তিনিও এখন কারাগারে রয়েছেন। এখনও পলাতক রয়েছেন রাগীব আলীর মেয়ে রুজিনা কাদির ও জামাতা আবদুল কাদির।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেটে রাগীব আলী আলোচনায় আসেন ১৯৮২-৮৩ সালের দিকে। সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মুসলিম ছাত্রাবাস অবৈধভাবে কিনে তোপের মুখে পড়েন রাগীব আলী। সিলেট নগরীর প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র বন্দরবাজারে এক হিন্দু জমিদারের দান করা জমিতে এই ছাত্রাবাস নির্মাণ করেছিল সরকারি পাইলট স্কুল। পরবর্তীতে রাগীব আলী ‘জালিয়াতির মাধ্যমে’ এই ছাত্রাবাস কিনে নিয়েছেন, এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আন্দোলন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ১৯৮৬ সালের দিকে রাগীব আলী এই ছাত্রাবাসের ভূমিতে গড়ে তোলেন ‘মধুবন’ নামে তার নিজস্ব মালিকানার বিপণী বিতান। এই মার্কেটটি এখনও রয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালের ২৫ আগস্ট ভূমি মন্ত্রণালয়-স¤পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তদন্তে তারাপুর চা-বাগানের জায়গায় বিধি বহির্ভূতভাবে স্থাপনা নির্মাণের সত্যতা পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে সংসদীয় উপকমিটি চা-বাগানে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। উপকমিটির সুপারিশের পর ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সিলেট সদর ভূমি কমিশনার এস এম আবদুল কাদের বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা করেন। এ মামলা উচ্চ আদালত থেকে স্থগিত করা হয়। পরে পুলিশ তদন্ত করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।
গত ১৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ দেবোত্তর স¤পত্তি তারাপুর চা-বাগান পুনরুদ্ধারের রায় দেন। এতে ওই দুটি মামলা সক্রিয় করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। উচ্চ আদালতের এ নির্দেশনার বিষয়ে সরকারি কৌঁসলি একটি আবেদনের মাধ্যমে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতকে জানান ১৬ মার্চ। আদালত আবেদন গ্রহণ করে ২২ মার্চ এক আদেশে সিলেট কোতোয়ালি থানার পুলিশকে তদন্ত করে ৭ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ওই দিন আদালত এক আদেশে মামলা দুটির তদন্তভার পিবিআইকে দিয়ে ২৫ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
পিবিআই ২৫ এপ্রিল তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে সময় প্রার্থনা করে। আদালত এক মাস সময় বাড়িয়ে ২৫ মে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। ওই দিন পিবিআই আবারও সময় প্রার্থনা করলে ১৬ জুন সময় দেন। ওই দিনও সময় প্রার্থনা করলে আদালত ২৫ জুন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। সেদিনও পিবিআই সিলেটের পক্ষ থেকে চতুর্থ দফা সময় বাড়ানোর আবেদন করলে আদালত ব্যাখ্যাসহ ১০ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। আদালতের এ নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় এক মাস আগেই ১০ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com