মো. আমিনুল ইসলাম ::
বিগত বছর ও চলতি বছরের জেলার বিভিন্ন এলাকায় দায়েরকৃত মামলাসমূহের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক মামলার নিষ্পত্তি করেছে সুনামগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ব্যতিক্রমী ও কার্যকর কিছু পদক্ষেপে গত ১৬ মাস সময়ের মধ্যে ১২ হাজার ২৯১টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এটিকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। গত ১৯ নভেম্বর শনিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্সে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
এসময় জানানো হয়, ২০১৫ সালের ১ জুলাই জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে বিচারাধীন মামলা ছিল ১১হাজার ২৬টি। ওই সময় থেকে চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর সময়ের মধ্যে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে দায়ের হয় আরও ৮হাজার ৮৩টি মামলা। মোট ১৯ হাজার ১০৯টি মামলার মধ্যে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-এর গৃহীত কার্যকর কিছু পদক্ষেপের কারণে ১৬ মাসে ১২হাজার ২৯১টি মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়। বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ৬হাজার ৮১৮টি মামলা। এগুলোর মধ্যে বিচারিক আদালতে রয়েছে ৩হাজার ৭৪৪টি এবং আমল গ্রহণকারী আদালতে রয়েছে ৩হাজার ৭৪টি মামলা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে রয়েছে বিচারক সংকট। ১১ পদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ২টি পদই রয়েছে শূন্য। এ সংকটকে পাশ কাটিয়েও চলমান কর্মযজ্ঞে ১২ হাজারেরও বেশি মামলা নিস্পত্তির বিষয়টিকে বড় সাফল্য হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবারের পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেসি বৈঠকে এসব বিষয় তোলে ধরা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রহিবুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান মজুমদার, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শহীদুল আমীন, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুবায়েত ফেরদৌস ও আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সালেহ।
এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর প্রতিনিধি দীপংকর তঞ্চঙ্গা, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি ও সিনিয়র এএসপি কানন দেবনাথ, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ও সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম, সিনিয়র এএসপি (দিরাই সার্কেল) মুহাম্মদ ছুরত আলম, সিনিয়র জেল সুপার আজিজুল হক, আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল মজিদ, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেরেনূর আলী, পাবলিক প্রসিকিউটর খায়রুল কবির রুমেন, পাবলিক প্রসিকিউটর (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল) নান্টু রায়, সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবৃন্দ ও কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক।
সভায় বক্তারা পরোয়ানা জারি ও তামিল সংক্রান্ত সমস্যা সমূহ চিহ্নিতকরণ এবং দূরীকরণ, আদালতে সাক্ষীর হাজিরা নিশ্চিতকরণ, তদন্ত প্রতিবেদন দ্রুত প্রেরণ, সাক্ষীদের প্রতি প্রেরিত প্রসেসের জারি প্রতিবেদন ও মেডিক্যাল সার্টিফিকেট যথাসময়ে প্রেরণসহ আদালত প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বিষয়ে আলোচনা করেন।
এছাড়াও পূর্ববর্তী পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্সে যে সকল কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছিল তার ফলাফল ও অগ্রগতি পর্যালোচনাসহ বিভিন্ন থানা থেকে প্রেরিত সাক্ষীর সংখ্যা, পরোয়ানা তামিলের সংখ্যা, তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সংখ্যা এবং চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা নিষ্পত্তির বিবরণী উপস্থাপন করা হয়।
আলোচকবৃন্দ সার্বিক অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশসহ এই অগ্রগতি ধরে রেখে আরো অধিকতর মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলসহ যথাসময়ে সাক্ষীদের আদালতে হাজির করার জন্য পুলিশকে আরও তৎপর হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
সভাপতির বক্তব্যে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রহিবুল ইসলাম আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পুলিশকে আরও তৎপর হওয়ার নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সিভিল আপিল মামলা ৫৩/০৪ নং মামলার রায়ের আলোকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেফতার, রিমান্ড, শ্যোন অ্যারেস্ট এবং শিশু আইন বিষয়ে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা সুনামগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিকে মামলাজট মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। ভবিষ্যতে সকল বিভাগের সহযোগিতায় মামলার নিষ্পত্তির এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস’।