বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জাহানপুরে কথিত ‘চোরাই বস্তি’র বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সমবায় অধিদপ্তরের অধীনে ‘সেবা সহজিকরণ ও উদ্ভাবন’ প্রকল্পে এই অবহেলিত গোষ্ঠীকে কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজে লাগাতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে ১ বছর মেয়াদী পাইলট প্রকল্পে কাজ চলছে বলে জেলা সমবায় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশনের আওতায় সমবায় অধিদপ্তর গ্রামবাসীকে বৃত্তিমূলক কাজে আগ্রহী করে তাদের প্রশিক্ষণে উদ্বুদ্ধ করছে।
জানা গেছে, কয়েক বছর আগে জাহানপুর কৃষি সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে একটি সমবায় সমিতি গঠিত হয়েছে। এই কমিটিতে সম্প্রতি সক্রিয় করে নানা প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। সম্প্রতি সমবায় অধিদপ্তর সিলেটের যুগ্ম নিবন্ধক খুরশেদ আলম ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। অবহেলিত গ্রামবাসীকে সহায়তা করতে তিনি ব্যক্তিগত ও সিলেট বিভাগের সমবায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতনের টাকা থেকে নগদ সহায়তা করেছেন।
এছাড়াও সুনামগঞ্জ জেলা সমবায় অফিস এক বছর মেয়াদী প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গ্রামের লোকদের উদ্বুব্ধ করা হচ্ছে। তারা যাতে কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে ঘৃণা ও অবহেলার জীবন ছেড়ে সমাজের মূল¯্রােতে চলে আসে সে লক্ষ্যে তাদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, সমবায় অফিস ওই সমিতিকে সক্রিয় করার পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সেবাপ্রদানকারী সংস্থাকেও ওই গ্রামের মানুষের উন্নয়নে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। তারা যাতে গ্রামবাসীর কারিগরি ও বৃত্তিমূলক সহায়তায় এগিয়ে আসে তার লক্ষ্যে সমবায় অফিস প্রচারণা চালাচ্ছে। সমবায়ের দাবির প্রেক্ষিতে দিরাই উপজেলার এডিবি’র বরাদ্দ থেকে ওই গ্রামের লোকদের জীবনমান উন্নয়নে এক ভাগ বরাদ্দ মঞ্জুর করা হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। এডিবি’র ওই টাকা দিয়ে চোরাই বস্তির লোকদের সহায়তামূলক ও সেবামূলক কাজ পরিচালনা করা হবে।
জানা গেছে, গ্রামবাসীকে শৃঙ্খলার ভিতর নিয়ে আসতে দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করছে সরকার। জাহানপুর গ্রামে বর্তমানে অর্ধ শতাধিক পরিবারে প্রায় ৪শ মানুষ বসবাস করে। তবে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের গ্রামের উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। গ্রামের লোকদের আচরণগত পরিবর্তনের জন্য ২০০২ সালে গ্রামে একটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। রাতে পুলিশ গ্রামবাসীকে পাহারা দিয়ে চুরি ঠেকাতো। ২০০৫ সালে পুলিশ ক্যাম্প গুটিয়ে নেওয়া হয়। পরে ওই ক্যাম্পে মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষার কার্যক্রম চালু করা হয়। ওই সময় টিনের বেষ্টনী দিয়ে একটি ছোট মসজিদও স্থাপন করে দেওয়া হয়। বর্তমানে আনন্দ স্কুল আছে। কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। ফলে পড়ালেখায় পিছিয়ে আছে গ্রামবাসী। তাছাড়া গ্রামবাসীকে আশপাশের গ্রামবাসী ঘৃণার চোখে দেখার কারণেও তাদেরকে সমাজের মূল¯্রােতে নিয়ে আসা যাচ্ছেনা।
গ্রামের দিনমজুর আবু শামা (৫১) বলেন, আমাদের কেউ আর এখন খারাপ কাজের সঙ্গে নেই। সবাই এই ঘৃৃণা ও যন্ত্রণার জীবন ছেড়ে দিয়ে অনেক কষ্টে দিনমজুরি করে দিনাতিপাত করছে। তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের সবাই দিনমজুর। কারও এক টুকরো জমিও নেই। অনেকেই খাসজমিতে থাকে। তাই আমাদের উন্নয়নের জন্য সরকারের কাছে সহযোগিতা চাই।
গ্রামের যুবক হাবিব মিয়া বলেন, গ্রামের পুরুষ-বেটিন (নারী) মিলে সবাই মাটি কাম, পাথর কাম, মাছ ধরে কর্ম করে খায়। ইতা করে এখন পেট চলেনা, আমরা সরকারের কাছে কাম চাই।
সুনামগঞ্জ জেলা সমবায় অফিসের পরিদর্শক হিরন্ময় রায় বলেন, পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশনের আওতায় আমরা গ্রামবাসীকে কারিগরি শিক্ষার উদ্যোগ নিয়েছি। তাদেরকে যাতে সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করা হয় তার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে দিরাই উপজেলা পরিষদ তাদের এডিবি’র বরাদ্দ থেকে গ্রামের উন্নয়নে এক ভাগ বরাদ্দ মঞ্জুর করেছে।