ফারসি ‘চান্দাহ্’ শব্দ থেকে বাংলা ‘চাঁদা’ শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে। কিন্তু শব্দটির অর্থ চন্দ্র ও চাঁদ বা চান্দা নামের মৎস্য বিশেষ নয়। ফারসি থেকে উদ্ভূত এই ‘চাঁদা’-র মানে : (১) কোন বিশেষ কর্ম সম্পাদনের জন্য বিভিন্নজনের নিকট থেকে সংগৃহীত অর্থমূল্য ও (২) নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে দেয় অর্থ। ‘চাঁদা’ শব্দের সঙ্গে ‘দক্ষ বা অভ্যস্ত’ অর্থবাচক ফারসি প্রত্যয় ‘বাজ’ যুক্ত করে তৈরি হয় ‘চাঁদাবাজ’ ও এই ‘চাঁদাবাজ’-এর সঙ্গে বাংলা ‘ই’ প্রত্যয় যুক্ত করে তৈরি হয় ‘চাঁদাবাজি’। তখন ভাববিনিময়ের জগতে এই শব্দ দু’টি যে অর্থদ্যোতনা প্রকটিত করে সেটা সকল প্রকার ন্যায্যতাকে পদদলিত করে অবৈধভাবে অর্থাৎ বেআইনি পন্থায় অপরের অর্থ আত্মসাতের সমার্থক হয়ে ওঠে।
অতিসম্প্রতি নয়, বলতে গেলে, সেই সুপ্রাচীনকাল থেকেই এবংবিধ চাঁদাবাজির ঘটনা সমাজ-পরিসরে কমবেশি সংঘটিত হয়ে আসছে বিভিন্ন রূপে ও আকারে-প্রকারে। বর্তমান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার অবকাঠামোর ভেতরেÑ এই শব্দ দু’টি যে অর্থদ্যোতকতার ধারক ও বাহক, সে অর্থের অনুরূপÑ বাস্তব কর্মকান্ড ঘটে চলেছে সর্বত্র, প্রতিনিয়ত, নির্বিঘেœ। সরকার, প্রশাসন কিংবা রাজনীতির নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে এই ‘চাঁদাবাজি’-কে প্রতিরোধ কিংবা নির্মূলে কার্যকর কর্মপ্রয়াস পরিলক্ষিত হয় না তেমনভাবে, যা হয়, প্রত্যাশা পূরণের পক্ষে তা যথেষ্ট নয়। কিন্তু প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ঝরাতে কার্পণ্য করেন না কখনোই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষীয় প্রতিনিধিরা।
সম্প্রতি সুনামগঞ্জে চাঁদাবাজদের তৎপরতা হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেয়েছে ও চাঁদাবাজি নির্বিঘেœ চলছে। গতকাল দৈনিক সুনামকণ্ঠের দু’টি সংবাদ শিরোনাম ছিল এরকম : (১) “নদীতে চাঁদা না দেওয়ায় গুলি ছোঁড়ার অভিযোগ” ও (২) “চাঁদা না দিলে প্রাণনাশের হুমকি”। এমন সংবাদ পাঠ করার পর যে কারও মন থেকে স্বস্তি বিদায় নিতে বাধ্য। শহরবাসীর সঙ্গে এই অস্বস্তির ভাগিদার হয়ে বলি, এই ‘চাঁদাবাজি’ বন্ধের ব্যবস্থা করুন অচিরেই। জেলা প্রশাসন, নাগরিক সমাজ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিÑ এই দুর্বৃত্তায়নতা আরও বিস্তৃত হওয়ার আগেই একে নির্মূল করার যথাযথ ব্যবস্থা নিন।