স্টাফ রিপোর্টার ::
গত ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদর উপজেলার কাঠইর ও মোহনপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান করছেন পরাজিত প্রার্থীর সমর্থক ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাঁরা জানিয়েছেন কাঠইর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির কারণ হলো বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট বুরহান উদ্দিন দলীয় তিন বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে পরাজিত হয়েছেন বলে কর্মীরা মন্তব্য করেছেন।
এদিকে পার্শ্ববর্তী মোহনপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মঈনউল হক ‘জাল ভোটের’ কারণে পরাজিত হয়েছেন বলে তাঁরা মনে করেন। তাছাড়া বিজয়ের ব্যাপারে প্রবল আত্মবিশ্বাসও তাঁর পরাজয়ের কারণ বলে কর্মীরা মনে করছেন।
মোহনপুরে আ.লীগ চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মঈনউল হকের কর্মীরা জানিয়েছেন ইউনিয়নের দুটি সেন্টারে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে অবাধে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে। দুপুর দেড়টার মধ্যেই দুই সেন্টারে প্রায় তিন শতাধিক জাল ভোট পড়ে বলে তাদের অভিযোগ।
পরাজিত দুই প্রার্থীর সমর্থকরা জানান, কাঠইর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট বুরহান উদ্দিনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন তিনজন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি লুৎফুর রহমান, সহ-সভাপতি আব্দুল মতিন এবং আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মতিন মাস্টার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। এই তিনজন মিলে ২ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়েছেন। তারা নিজ নিজ এলাকার আওয়ামী লীগের ভোট, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের রিজার্ভ ভোট নিজেদের পক্ষে টেনে নিয়েছেন। আ.লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. বুরহান উদ্দিন পেয়েছেন এগারোশ’র উপরে ভোট। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী তিনজন মিলে ভোট পেয়েছেন তিন হাজারের অধিক। অন্যদিকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী ১৮০০ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনী বিশ্লেষকরা বলছেন কাঠইর ইউনিয়নে বিদ্রোহী না থাকলে বিপুল ভোটে আ.লীগ প্রার্থীর বিজয়ের সম্ভাবনা ছিল। গলার কাঁটা বিদ্রোহীদের দমন করতে না পারায় দলীয় প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন বলে তারা জানান।
কাঠইর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ পরাজিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. বুরহান উদ্দিন বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণেই নৌকা পরাজিত হয়েছে। বিদ্রোহীদের দমন করা গেলে এই ইউনিয়নে নিশ্চিত বিজয় আমাদের ছিল। এ কারণে এখনো তৃণমূল নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ।
অন্যদিকে মোহনপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মঈনউল হক জাল ভোটে হেরেছেন বলে কর্মী ও সাধারণ ভোটাররা মনে করেন। জানা গেছে, পৈন্দা সেন্টারে জাল ভোটে সহায়তা করায় জাতীয় পার্টির এজেন্ট ফারুক আহমেদের মোবাইল ফোন জব্দ করে তাকে তিরষ্কার করেন কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেট। বাণীপুর সেন্টারে জাতীয় পার্টির পক্ষে জাল ভোট দেওয়ায় সহায়তা করায় জাতীয় পার্টির প্রার্থীর ভাতিজা বদরুজ্জামানকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় পুলিশ। ওই সেন্টারে দুপুরে এলাকার আশিকনূর নামক জনৈক ব্যক্তির ছেলে সাহেলকে জাল ভোট দেওয়ার সময় নৌকার এজেন্ট চিহ্নিত করলে পুলিশ তাকে আটক করে একটি কক্ষে আটক রাখলেও কর্তব্যরত প্রিসাইডিং অফিসার তাকে ছেড়ে দেন। এই ইউনিয়নে সামান্য ভোটে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. মঈনউল হক। দুটি সেন্টারে জাল ভোটের কারণে তিনি হেরেছেন বলে আলোচনা চলছে। ওই ইউনিয়নের বাণীপুর ভোটকেন্দ্রে ইউনিয়নের অন্য ভোটকেন্দ্রের চেয়ে তুলনামূলক বেশি ভোট পড়েছে।
আ.লীগ প্রার্থী মো. মঈনউল হক বলেন, পৈন্দা এবং বাণীপুর সেন্টারে অবাধে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে জাল ভোট পড়েছে। নির্বাচনের দিন বিকেলে এই খবর পাওয়ার পর আমি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, আওয়ামী লীগের জেলা সেক্রেটারি নির্বাচন অফিসারসহ অনেকের কাছে ফোনে অভিযোগ করেছি। জাল ভোটের বিষয়ে আমি এখন নির্বাচন কমিশনে অভিযোগের উদ্যোগ নিচ্ছি। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখাকে দুর্বলতা মনে করে জাতীয় পার্টির প্রার্থী তার কেন্দ্রে অবাধে জাল ভোট দিয়েছেন। জাল ভোটে তিনি বিজয়ী হয়েছেন এটা ইউনিয়নের সবাই আলোচনা করছে।
জাতীয় পার্টির বিজয়ী প্রার্থী মো. নূরুল হকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।