1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১২ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

বাঁধ নিয়ে শঙ্কা

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৯ মার্চ, ২০২১

মোসাইদ রাহাত ::
হাওর জেলা সুনামগঞ্জ। এখানকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ ও মৎস্য আহরণ করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিবছর হাওরের বোরো ফসলরক্ষায় সরকার বাঁধের কাজে কোটি কোটি টাকা খরচ করে। কিন্তু সেই বাঁধের কাজ যথাযথভাবে হয় না। এ বছর এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। নানা অনিয়ম আর ধীরগতির কাজ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষক।
এদিকে, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি হাওরে বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে ৮২ শতাংশ। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। এক্ষেত্রে হাওর আন্দোলনের নেতারা বলছেন কাজ হয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে হাওরের ফসলরক্ষায় জেলায় ৬১৯ কিলোমিটার বাঁধের কাজ হচ্ছে। যার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ৮১১ টি পিআইসি গঠন করে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩৩টি, বিশ^ম্ভরপুর উপজেলায় ৪১টি, ধর্মপাশা উপজেলায় ১৭০টি, তাহিরপুর উপজেলায় ৮৩টি, জামালগঞ্জ উপজেলায় ৪৪টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ৬৩টি, দিরাই উপজেলায় ১২০টি, শাল্লা উপজেলায় ১৫৬টি, জগন্নাথপুর উপজেলায় ৩৬টি, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ৪৭টি ও ছাতক উপজেলায় ১৮টি পিআইসি গঠন করা হয়। এ অর্থবছরে সংশোধিত কাবিটা নীতিমালা-২০১৭ অনুযায়ী সুনামগঞ্জে ডুবন্ত বাঁধের ভাঙন বন্ধকরণ ও মেরামতের জন্য প্রাক্কলিত ব্যায় ধরা হয় ১৩৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে এখন পর্যন্ত সরকার ৬৬ কোটি দিয়েছে।
অন্যদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ নির্মাণের কার্যক্রমে যে দাবিগুলো জানিয়েছে প্রত্যাখ্যান করেছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড মনগড়া বাঁধের কাজের অগ্রগতির যে তথ্য দিচ্ছে তা আমরা হাওর বাঁচাও আন্দোলন প্রত্যাখ্যান করছি। বাস্তবে বাঁধে গিয়ে দেখলেই বুঝা যায় বাঁধের কাজ কেমন। দুইদফা সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ হয়নি এখনো অধিকাংশ বাঁধে মাটির কাজই শেষ হয়নি। এ বছর বন্যায় ফসলহানি হলে এর দায়ভার পানি উন্নয়ন বোর্ডকেই নিতে হবে। আমাদের পর্যবেক্ষণে বাঁধের কাজ মাত্র ৪৫ শতাংশ শেষ হয়েছে।
এদিকে সরেজমিনে, সুনামগঞ্জের হাওরগুলোর মধ্যে বোরো ফসলের বিশাল আবাদস্থল তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওর ও মাটিয়ান হাওরের বেশ কয়েকটি হাওর ঘুরে দেখাযায় অধিকাংশ বাঁধে শেষ হয়নি মাটি ফেলার কাজ। যার মধ্যে অন্যতম এ উপজেলার মাটিয়ান হাওরের দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের পিআইসি নং ৭৩। ০.৩৫৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ লক্ষ ২৭ হাজার ১১৩ টাকা। এ বাঁধ সংস্কার ও মেরামতের কাজে গঠিত পিআইসি সভাপতি মো. আনিছুর রহমান। বাঁধ নির্মাণের কাজ গেল বছরের ১৫ ডিসেম্বর শুরু করার কথা থাকলেও তিনি এখনো মাটি ভরাট করার কাজে ব্যস্ত। এদিকে প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তার বাঁধের কাজের অগ্রগতি ২০ শতাংশ। এ ব্যাপারে ৭৩ নং পিআইসির সভাপতি আনিছুর রহমানকে ফোন করলে তিনি কোন সাংবাদিককে তথ্য দিতে চান না বলে জানান।
পরবর্তীতে একই পিআইসি সদস্য মো. আব্দুছ ছালামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমাদের কাজ শুরু করার কার্যাদেশ ১৫ জানুয়ারি কাগজে লেখিয়া দিলেও আমরা হাতো কাগজ পাই ২৮ জানুয়ারি। এর লাগি কাজ করতে দেরি হইছে।
অন্যদিকে তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরে ৪, ৫, ৭, ৮, ৯ ও ২০নং পিআইসি ও মাটিয়ান হাওরের ৭২, ৭৪, ৭৫ নং পিআইসির কাজ পরিদর্শন করলে দেখাযায় মাটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকলেও শেষ হয়নি দুর্মুজ, ঘাস লাগানো ও বাঁশের আঁড় দেওয়ার কাজ। স্থানীয় কৃষকরা জানান, এমন দুর্বল ও ধীর গতিতে বাঁধ তৈরি করলে আগাম বন্যায় এসকল বাঁধ টিকবে না।
তাহিরপুর উপজেলার সাবনগর এলাকার বাসিন্দা কৃষক ফজর আলী বলেন, যেভাবে বাঁধের কাজ ওইরো মাটি শক্ত না। মাটি ঝুরি ঝুরি করি সব পড়ি যাইরো। ইলান ওইলে আমরার ধান পানিতে যাইবো।
এদিকে কাজে ধীরগতি ও প্রকল্পের সাইনবোর্ড না লাগানোর ব্যাপারে তাহিরপুরের শনির হাওরের ৫নং পিআইসি সভাপতি বোরহান উদ্দিন বলেন, মাটি ভরাট ও দুর্মুজের কাজ শেষ করেছি। এখন স্লোপের কাজ চলতেছে। তবে আমি চাচ্ছিলাম একটা বৃষ্টি দিলে ঘাস আর কলমী কাজটি করার। এখন করলে এগুলো শুকিয়ে যাবে। এছাড়া সাইনবোর্ড আমি লাগিয়েছি পশ্চিম দিকে একটা।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ বলেন, তাহিরপুরে কয়েকটা বাঁধের কাজ ধীরগতিতে হচ্ছে। আমরা তাদের সতর্ক করে দিয়েছি। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছি। এছাড়া বাঁধের অনিয়ম ঠেকাতে আমাদের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, আমাদের এখন পর্যন্ত বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে ৮২ শতাংশ। হাওরাঞ্চলে ঝুঁকিপূর্ণ যে বাঁধগুলো যেটাকে আমরা ক্লোজার বলি সেগুলোর কাজ যতটুকু উচ্চতায় তৈরি করা প্রয়োজন সেগুলোর কাজ শেষ হয়েছে। এ বছর হাওরে পানি দেরীতে নেমেছে সেজন্য কিছুটা কাজ বিলম্বে শুরু হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ৬১০টি বাঁধের মাটি ফেলার কাজ শেষ হয়েছে। কয়েকটি জায়গায় অনিয়ম হয়েছে। আমরা সেগুলোতে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি আরও জানান, এবছর যে পয়েন্টগুলোতে সুনামগঞ্জে হাওরে পানি ঢুকে এরকম ২২৫টি পয়েন্ট রয়েছে। সেই পয়েন্টগুলো আমরা ইতিমধ্যে বিপদমুক্ত করে ফেলেছি। সুতরাং বন্যা এখনো চলে আসলে হাওরের এমন কোন দুর্ঘটনা ঘটবে না বা ফসলহানি ঘটার আশঙ্কা নেই।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com