:: সুখেন্দু সেন ::
ভোট যার যার, মতামত তার তার, পছন্দ অপছন্দ নিজ নিজ ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এই সুনামগঞ্জ পৌরশহর সবার। এ সাধারণ কথাগুলো অর্থবহ হয় যখন নির্বাচিত মেয়র হয়ে উঠেন সকলের। নবনির্বাচিত মেয়র নাদের বখতকে অভিনন্দন।
আমাদের প্রিয় এ জন্মশহরটি দেশের অন্যান্য জেলা শহর হতে নিশ্চিতভাবেই ব্যতিক্রম। ছায়ায় মায়ায়, ভালোবাসায়, নিবিড় সামাজিকতায়, সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতির অনন্য ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার ধারণ করে আছে কবি আর কবিতার, সুর আর সংগীতের, বৃষ্টি আর জ্যোৎস্নার, পলি কাদা আর জলডাঙ্গার এ জনপদ।
সুরমার তীর ছুঁয়ে, হাওরের ঢেউ মেখে, দূর পাহাড়ের মুগ্ধমোহে ছোট একটি ভিলেজ টাউন হতে আধুনিক নগরীতে পরিণত হতে যাওয়া মায়াময় স্মৃতিময় শহরটি প্রকৃতি থেকেই আহরণ করেছে মনমানবিকতার এমন ¯পর্শ, ব্যতিক্রমী জীবনছন্দ।
শান্তিময় এ জীবনধারা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে পৌরপিতাদের অবদানও কম নয়। দূর অতীতের সেই মিউনিসিপালটি, টাউন কমিটির যুগ থেকে পৌরপিতার সম্মানিত পদটি অলংকৃত করে গেছেন অনেক কৃতীপুরুষ, স্মরণীয় বরণীয়, জ্ঞানীগুণী জন। নিকট অতীতে দু’জন পৌরপিতা দেওয়ান মমিনুল মউজদীন এবং আইয়ূব বখত জগলুল কেবল পৌরবাসীর নয়, জেলাবাসীর হৃদয়াবেগে স্থায়ী আসন অধিকার করে রেখেছেন আপন আপন বৈশিষ্ট্যগুণে। একজন জল-জ্যোৎস্নার কাব্যময় আধুনিক শহরের রূপকল্প এঁকেছিলেন কবি মনের মাধুরী মিশায়ে। আরেকজন নীরব সারথী হয়ে নান্দনিকতার স্বপ্ন বাস্তবে রূপায়নে ব্রতী হয়েছিলেন একান্ত নিষ্ঠায়। সর্বোপরি দু’জনই আপন আপন গণ্ডি অতিক্রম করে হয়ে উঠেছিলেন সকলের আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক। দুর্ভাগ্য দু’জনকেই হারাতে হয়েছে অকালে। পৌরবাসীকে সইতে হয়েছে স্বজন হারানোর বেদনা। সে ক্ষত রয়েই গেছে।
শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১) শপথ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র অভিষিক্ত হয়েছেন। নতুন মেয়রের কাছে প্রত্যাশা পূর্বসুরীদের পথ অনুসরণ করে তিনি তাঁর তারুণ্যের শক্তি ও মেধায়, আধুনিক চিন্তা, মননশীলতায় সাফল্যের সাক্ষর রাখতে প্রয়াসী হবেন। মেয়র নির্বাচিত হওয়া শেষ কথা নয়, সুযোগ নিজেকে প্রমাণের। আর শপথবাক্য পাঠ, সেতো মেয়র পদে অভিষিক্তির আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। যথার্থ শপথ হবে মানুষের ভালোবাসার নামে, মানুষের আস্থার নামে। সেই অন্তরপাঠে শুধু একজন মেয়র হয়ে উঠাই বড় কথা নয়, আস্থায় ভালোবাসায় – ‘আমাদের নাদের’ হয়ে উঠার।