গতকালের (২৪ নভেম্বর ২০২০) একটি দৈনিকের (কালের কণ্ঠ) একটি সংবাদশিরোনাম ছিল, “কালের কণ্ঠ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ইউএসএইডের গোলটেবিল ॥ যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিক বিপদ ঘটাতে পারে ॥ ওষুধের মানের ব্যাপারে আপস নেই : স্বাস্থ্যমন্ত্রী”। এই সংবাদটি একদিকে উদ্বিগ্নতার উদ্রেক করে এবং অন্যদিকে আশ্বস্ততার আলো ছড়ায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, “অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার মানুষকে বিপদগ্রস্ত করছে; কিন্তু মানুষ এ ব্যাপারে সচেতন নয়। অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজের ইচ্ছেমতো ওষুধ কিনে খাচ্ছে, যাতে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সবাইকে আরো সতর্ক হতে হবে। এখন অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে, কারণ আমাদের প্রধানমন্ত্রী এসংক্রান্ত বৈশ্বিক সংস্থার কো-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন, যা দেশের জন্য বড় গর্বের ব্যাপার।”
এদিকে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা সেবা থেকে মুখ ফিরিয়ে এতোটাই বাণিজ্যমুখী হয়ে উঠেছে যে, বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি অবাধে চলছে স্বাস্থ্যব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। দুই বাণিজ্যনাম (ট্রেডনেইস) নিয়ে একই ওষুধ একটি পাঁচ টাকায় ও অন্যটি দশ টাকায় দেদার বিক্রি হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, রোগ নিরাময়ে কার্যকারিতার তারতম্য থাকলে নিম্নমানের ওষুধটি কেন বিক্রির অনুমোদন পাবে বোধগম্য নয়। এইরূপ অনেক অভিযোগের ফিরিস্তি এখানে দেওয়ার অবকাশ নেই। সকলেই জানেন যে, সাধারণ মানুষ খুব বেশি একটা স্বাস্থ্য সচেতন নয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থার নড়বড়ে অবস্থা তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। করোনাসংক্রমণ প্রতিরোধে প্রশাসন নির্দেশিত কোনও নিয়মবিধি মানুষ এখনও পর্যন্ত প্রতিপালন করছেন না। তদুপরি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ জানেন না যে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজের ইচ্ছেমতো অ্যান্টিবায়োটিক যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে পরে অন্য কোনও রোগে আক্রান্ত হলে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক রোগীর শরীরে আর কাজ করে না এবং স্বাভাবিক কারণেই চিকিৎসার দ্বারা রোগটিকে আর সামাল দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না বলে কেবল কষ্টকর রোগভোগে মৃত্যুর জন্যে অপেক্ষা করা ছাড়া রোগীর জন্যে অন্য কোনও দ্বিতীয় পথ খোলা থাকে না।
রোগটি যদি সংক্রামক হয় তবে সেটা ক্রমাগত বিস্তার লাভ করে ব্যাপকসংখ্যক মানুষের মৃত্যুকে অপ্রতিরোধ্য করে তোলতে পারে এবং সেটা হয়ে উঠতে পারে সামাল দিতে না পারা একটি মহামারি।
বিদগ্ধমহলের ধারণা, এ ব্যাপারে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। ‘চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা যাবে না’র নীতিটিকে আরও সুসংহত হতে হবে, যাতে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও অবস্থাতেই অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রয় করা কারও পক্ষে সম্ভব না হয়। এ জন্যে বিক্রেতারা অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির হিসাবফিরিস্তি সরকারের তদারকি কর্তৃপক্ষের কাছে দিতে বাধ্য থাকেন, এই নিয়ম করতে হবে এবং নিয়মিত তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে।