২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের চানপট্টি গ্রামের যুবলীগ নেতা লিটন মুন্সির মেয়ে নুসরাত জাহান মিথিলা বলেছেন, এবার ১ সেপ্টেম্বর তাঁর বয়স ১৬ বছর হবে, কিন্তু এতো বছর পার হয়ে গেলেও সেদিনের হামলাকারী ও হামলায় জড়িতদের বিচারের রায় এখনও কার্যকর হয়নি।
এই সংবাদটি করা হয়েছে গত ২১ আগস্ট ২০২০ বৃহস্পতিবারে। শিরোনাম করা হয়েছে, ‘২১ আগস্ট বাবাকে হারিয়েছি, তখন কীছই বুঝিনি।’ তবে মিথিলা এখন কী বুঝেছেন তার একটি ক্ষুদ্র ও সাদামাটা বিবরণ মেলে সংবাদটি থেকে। তিনি চান পিতৃহত্যার বিচারের রায় যথাশীঘ্র কার্যকর হোক এবং অন্যদেরও, যাঁরা সেদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শেখ হাসিনার জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় হতাহত হয়েছিলেন। কিশোরী মিথিলার এই হৃদবোধটুকুর সঙ্গে আর কীছু বোধবুদ্ধির সংবাদ আছে সংবাদটিতে। বলা হয়েছে, এই হামলায় মাদারীপুরের চারজন নিহত হয়েছিলেন এবং আহত হয়েছিলেন আরও তিনজন। ভেতরের সংবাদ হলো, হতাহতদের পরিবারগুলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথাসাধ্য সহায়তা দিয়েছেন, কাউকে কাউকে এককালীন ১০ লক্ষ টাকা এবং কারও কারও জন্যে মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করেছেন, এমনকি কাউকে বাসা পর্যন্ত দিয়েছেন। তারপরও এমন কেউ কেউ আছেন যাঁরা ভালো নেই। আহতরা পঙ্গুত্বের দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে দিনাতিপাত করছেন, কেউ কেউ টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারছেন না, অথচ তাঁদের ব্যয়বহুল উন্নত চিকিৎসার দরকার।
বিচার বিলম্বিত হতেই পারে। তার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। কিন্তু জনবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় আসার দশক পেরিয়ে যাওয়ার পরও ২১ গ্রেনেড হামলায় আহত ও নিহতদের পরিবারগুলো ভালো নেই মর্মে সংবাদ গণমাধ্যমান্তরে, বলতে গেলে প্রায় অভিযোগ আকারে, প্রকাশিত হবে, এই বাস্তবতা কোনওভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বিদগ্ধমহলের অভিমত এই যে, এইসব আহত-নিহতের পরিবার ও আহত ব্যক্তিগণ জাতীয় স্বার্থে কিংবা দেশপ্রেমের মহৎ আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বার্থত্যাগ করেছেন। সঙ্গত কারণেই জাতির কাছে তাঁদের প্রাপ্য হয়েছে। কেবল ২১ গ্রেনেড হামলায় নয়, জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ঘটনা-অন্দোলনের জেরে সমগ্র দেশে বিপর্যয়গ্রস্ত এইরূপ পরিবার বা ব্যক্তির সংখ্যা একবারে নগণ্য নয়, তা বলাই বাহুল্য। এই স্পর্শকাতর বিষয়ে সকল প্রতিবন্ধকতা ও জটিলতা কাটিয়ে উঠাও চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের সেনাপতি রাজনীতিক দলের সরকারের উচিত তাঁদের দেখভাল করা ও কীছুটা হলেও জীবননির্বাহে স্বাচ্ছদ্য আনার ব্যবস্থা করা, অর্থাৎ এককথায় একাত্তরের যুদ্ধ থেকে ২১ গ্রেনেড হামলার হতাহতদের জীবননির্বাহের জটিলতাগুলোর নিরসন করা।