শহীদনূর আহমেদ ::
নাব্যতা ফিরিয়ে আনাসহ হাওর অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সরকার সুনামগঞ্জের বিভিন্ন নদ-নদী খননে কাজ করছে। নদী খননের শুরু থেকে খনন কাজে নির্দিষ্ট গ্রাউন্ডচার্ট না মানাসহ অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছিলেন স্থানীয়রাসহ হাওর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন। জেলার দিরাই ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত পিয়াইন নদীতে চলমান নদী খননের কাজ নিয়ে অসন্তুষ প্রকাশ করেছেন এলাকার সচেতন মহল। অভিযোগ উঠেছে নামমাত্র কাজ করে বরাদ্দ আত্মসাতের। নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করার কথা থাকলেও বিষয়টি তোয়াক্কা করছেন না খনন কাজ বাস্তবায়নে থাকা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। খননের গভীরতা, প্রস্থ মানা হচ্ছে না, নদীগর্ভেই খননকৃত মাটি ফেলা হচ্ছে। তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করে বরাদ্দের টাকা হজমের পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাযায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে জাইকার অর্থায়নে দিরাই ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার মধ্যবর্তী পিয়াইন নদী খননের কাজ চলমান রয়েছে। ৩৬.৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী খনন কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৯৩ লক্ষ ২১০ টাকা। নদীর গভীরতা বা সাইট স্লোভ ১ অনুপাত দেড় মিটার এবং কোথাও কোথাও ৩ মিটার ধরা হয়েছে। মাটি খনন করে এই মাটি কমপক্ষে ১৫ মিটার ফেলার কথা। কাজটি বাস্তবায়ন করছে আতাউর রহমান খান লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে পিয়াইন নদী খনন কাজ পরিদর্শন করে দেখা যায়, এস্কেভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছে মাটি। খননকৃত মাটি নির্দিষ্ট দূরত্বে ফেলার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। কোথাও কোথাও মাটি পাড়ে রাখা হলেও বেশিরভাগ স্থানেই তলদেশেই ফেলে রাখা হয়েছে কাদা ও নরম মাটি। বৃষ্টিপাত কিংবা স্রোতে এই মাটি পুনরায় নদীতে পড়ে ভরাট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। গভীরতা ১/২ ফুট, কোথাও ৩ ফুট করার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তার চেয়ে কম খনন করা হয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, মানসম্মত কাজ না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তড়িঘড়ি কাজ শেষ করছেন। আশানুরূপ খনন কাজ না করায় কাজের কাজ হবে না বলে জানান তারা।
ভাটিপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সৈয়দুর রহমান তালুকদার বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের একটি দাবি ছিল পিয়াইন নদী খননের। নদী ভরাট হওয়ার কারণে কৃষিকাজে সেচ কাজ ব্যাহত ও দেশী মাছ উৎপাদন হচ্ছে না। খনন কাজ শুরু হওয়ায় জনমনে স্বস্তি দেখা গেলেও কাজের মান নিয়ে অসন্তুষ বিরাজ করছে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে খনন কাজ করায় এর সুফল বেশি দিন ভোগ করবে না এলাকাবাসী। খনন কাজে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি করার অভিযোগও করেন তিনি।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতা একে কুদরত পাশা বলেন, জেলার বিভিন্ন নদীতে খনন কাজের শুরু দিক থেকেই দৃশ্যমান অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে। দিরাই উপজেলার পিয়াইন নদীতে খনন কাজ মানসম্মতভাবে হয়নি। বরাদ্দ অনুপাতে কাজ সন্তোষজনক নয়।
এদিকে নদী খনন কাজ প্রাক্কলন অনুযায়ী হচ্ছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামারুজ্জামান। তবে নদীর মাটি নির্দিষ্ট দূরত্ব না ফেণার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। মাটি নির্দিষ্ট দূরত্বে সরিয়ে নিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই প্রকৌশলী।
আতাউর রহমান খান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা তারা মিয়া বলেন, শীঘ্রই মাটি সরাইয়া দেওয়া হবে।