শহীদনূর আহমেদ ::
দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের জগদল ২০ শয্যা হাসপাতাল যেন দায়িত্বশীলদের অবহেলা আর উদাসীনতার কালজয়ী সাক্ষী। উদ্বোধনের ৭ বছর পরও চিকিৎসা সেবা চালু হয়নি এটিতে। নিয়োগ করা হয়নি জনবল। রক্ষণাবেক্ষণেরও ব্যবস্থা নেই। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় হাসপাতাল প্রাঙ্গণ আগাছা ও ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে। দেখভালের কেউ না থাকায় হাসপাতাল ভবনটি মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
উদ্বোধনের এতো বছর পরও হাসপাতাল চালু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার সচেতন মহল। এলাকার স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের পাশাপাশি সরকারের একটি বড় উন্নয়ন প্রকল্টকে বাঁচিয়ে রাখতে হাসপাতালটিতে সেবা চালু করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা যায়, জগদল ইউনিয়নের বাসিন্দা তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহামানের উদ্যোগে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০০৬ সালে হাসপাতালটি নির্মাণের কাজ করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। হাসপাতালের ভিত্তি প্রস্তরের উদ্বোধন করেন তৎকালীন হুইপ অ্যাড. ফজলুল হক আছপিয়া। দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতালটি নির্মাণকাজ শেষ করা হলেও স্থানীয় রাজনীতির প্রভাব আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে থাকে হাসপাতাল চালু হওয়ার বিষয়টি। হাসপাতালে কোনো লোকবল নিয়োগ, যন্ত্রপাতি সরবরাহ কিংবা সুযোগ সুবিধা ছাড়াই ২০১৩ সালে হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি। উদ্বোধনের ৭ বছর পর একদিনের জন্যে চালু হয়নি চিকিৎসাসেবা। দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালটি পড়ে থাকলেও সেবা চালু করতে বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ফলে জগদল ইউনিয়নসহ আশেপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সামান্যতম শারীরিক সমস্যার জন্যে তাদের ছুটে যেতে হয় উপজেলা কিংবা জেলা সদরে। গুরুতর অবস্থায় পথিমধ্যে ঘটছে প্রাণহানি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুখলেছুর রহমান বলেন, সরকার অনেক টাকা ব্যয় করে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের জন্য হাসপাতাল নির্মাণ করে দিল। অথচ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবহেলায় সরকারের সম্পদটি নষ্ট হতে চলেছে। হাসপাতালটি ২০১৩ সালে নামকাওয়াস্তে উদ্বোধন হলেও কোনো সেবা চালু হয়নি। অবহেলা আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিন দিন নষ্ট হচ্ছে হাসপাতাল ভবন। এলাকাবাসীর স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে হাসপাতালটি চালুর দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিন বলেন, আমি নিয়োগের পরপরই হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছি। হাসপাতালের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। হাসপাতালটি পরিষ্কারের ব্যবস্থা করছি। সাময়িকভাবে উপজেলার থেকে ডাক্তার পাঠিয়ে সপ্তাহে দুয়েক দিন চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য চেষ্ট করা হচ্ছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা বলেন, দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থা থাকায় হাসপাতাল ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ঠিকাদার ভবনটি হস্তান্তর করেনি। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি হাসপাতালের উন্নয়ন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হাসপাতালটি বুঝে নিতে। হাসপাতালে ডাক্তার নিয়োগসহ যাবতীয় সেবা চালু করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আশা করছি শীঘ্রই জগদল ২০ শয্যা হাসপাতালটি চালু করে সাধারণ মানুষদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে পারবো।